আইপিএল ফাইনাল

পাওয়ার প্লে, টসসহ আরও যেসব বিষয় ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে

প্রথম আসরেই সবাইকে অবাক করে দিয়েছে গুজরাট টাইটান্স। অভিষেকের পর ফাইনালেও পৌঁছেছে প্রথমবার। অপর দিকে তাদের প্রতিপক্ষও এমন এক দল, যারা ২০০৮ উদ্বোধনী আসরে শিরোপা জিতে এবারই প্রথম ফাইনাল খেলতে নেমেছে।

দুই দলের মুখোমুখি ফল বিবেচনায় ধারটা বেশি টাইটান্সেরই। তারপরেও রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় জমজমাট এক ফাইনালের প্রতিশ্রুতি মিলছে। এর আগে দেখে নেওয়া যাক যেসব বিষয় ম্যাচের মূল ফ্যাক্টরে পরিণত হতে পারে-

রশিদ খানফ্যাক্টর:  রশিদ খানের ঘূর্ণি বরাবরই ভিন্ন কৌশলে যেতে বাধ্য করে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। ব্যাটিং টিম বিধ্বংসী পারফরম্যান্স উপহার দিলেও দেখা গেছে রশিদ খানকে সমীহ করতে।

গুজরাটের এই স্পিনার এখন পর্যন্ত ৫টি ফাইনাল খেলেছেন পুরো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে। সেখানে মাত্র ২ উইকেট নিলেও প্রতি ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ৫.২৭ করে।

এই মৌসুমে রাজস্থানকেও দেখা গেছে রশিদ খানকে কৌশলে সামাল দিতে। দুটি খেলায় গুজরাট তারকা উইকেটহীন ছিলেন। কিন্তু ৮ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৯ রান। বাউন্ডারি দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছিলেন কৃপণ। মাত্র একটি চার আর একটি ছয় হজম করেছেন। এমনকি রাজস্থান যার ব্যাটে ভর করে এতদূর পর্যন্ত এলো, সেই বাটলারও তার বলে বাউন্ডারি মারতে পারেনি! অর্থাৎ তার বোলিংয়ের জবাব খুঁজতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে রাজস্থান ব্যাটারদের। ফাইনালে তাই একই কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যাবে তাদের। তেমনটা হলে রাজস্থানকে তখন বাড়তি ঝুঁকি নিতে হবে হার্দিক পান্ডিয়া, যশ দয়াল ও আলজারি জোসেফকে খেলতে। তখন এই তিন বোলারের ওপরই নির্ভর করবে সবকিছু।

টস ভাগ্য: ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১৮টি টি-টোয়েন্টি হয়েছে আহমেদাবাদে। সেসবে টস জিতে মাত্র দুবার কোনও দলকে ব্যাটিং নিতে দেখা গেছে। সার্বিকভাবে রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার নজির রয়েছে ১২টি। বাকি ৬ ম্যাচে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নামা দলকে ১৭০ রান বা তার বেশি স্কোর করতে দেখা গেছে। ফলে কিছুটা বড় বাউন্ডারি ও শিশিরের প্রভাব থাকায় ব্যাটিং করা দল কমপক্ষে ১৭০ রান করতে চাইবে।

আর টসের কথা বললে রাজস্থান অধিনায়ক সানজু স্যামসনকে খুবই হতভাগা বলতে হবে। ১৬ ম্যাচে ১৩টিতেই টস হেরেছেন। কোয়ালিফায়ারে অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ টসটা জিতেছিলেন তিনি। বেঙ্গালোরকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েই পরে জিতে নেন ম্যাচ। শেষ দুই আইপিএল ফাইনালেও দেখা গেছে টস জেতা দল পরে ম্যাচ হেরেছে।

পাওয়ার প্লে: দুই দলের ইনিংসে পাওয়ার প্লে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। শুরুতে কন্ডিশন যেহেতু বোলারদেরকেই ফেভার করবে। তাই ব্যাটারদের উচিত উইকেট না হারিয়ে সেসবের সদ্ব্যবহার করা।

আর কন্ডিশনের ফায়দা তুলে নিতে দুই দলের রয়েছে অসাধারণ বোলার। বোলিং পাওয়ার প্লের কথা বিবেচনায় নিলে গুজরাট সেরা। তারপর রাজস্থানের অবস্থান। পাওয়ার প্লেতে ২৬.৬৯ গড়ে ২৬টি উইকেট নিয়েছে গুজরাট। আর রাজস্থান ২৭.৩৮ গড়ে নিয়েছে ২৪টি। তাই নতুন বলে ট্রেন্ট বোল্ট আর মোহাম্মদ সামি দুই দলের জন্যই বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন।   

হুমকি হয়ে উঠতে পারেন মিলার:

গুজরাটের বড় ভরসার নাম ডেভিড মিলার। ফাইনালে ভালো কিছু করতে কিলার মিলারকে বাক্সবন্দি করে রাখার কৌশল জানা থাকতে হবে রাজস্থানকে।

নিজের ক্যারিয়ারে সেরা আইপিএল কাটাচ্ছেন প্রোটিয়া ব্যাটার। ৬৪.১৪ গড় ও ১৪.১৯ স্ট্রাইক রেটে প্রোটিয়া ব্যাটার ৪৪৯ রান করেছেন। ঐতিহ্যগতভাবে মিলার আসলে পেস হিটার। গতিময় বলকে সহজেই বাউন্ডারি ছাড়া করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। স্পিনের বিপক্ষে সেভাবে হাত খুলতে দেখা যায় না তাকে। তারপরও ২০২০ সালের পর থেকে স্পিনে তার গড় ছিল ৫৬.৯, স্ট্রাইক রেট ১৩৬.৯। ফলে তাকে বাক্সবন্দি করে রাখতে রাজস্থানকে কৌশলী হতে হবে।

পেস বোলিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে শর্ট লেংথ বা শর্ট অব গুড লেংথে মাত্র ১২৭.৭ গড়ে স্কোর করেছেন। আউট হয়েছেন ৮ বার। ফুলার লেংথের বেলায় আগ্রাসী ছিলেন বেশি। স্কোর করেছেন ১৮৭ গড়ে। দেখা যাচ্ছে, ইয়র্কার লেংথের বেলাতেও তার ভুলের পরিমাণ কম। ফলে শর্ট অথবা শর্ট অব গুড লেংথের ডেলিভারিই তার রান আটকানোর ক্ষেত্রে কার্যকর অস্ত্র হতে পারে।

স্পিনারদের ক্ষেত্রে একই ধারা অনুসরণ করতে দেখা গেছে। ফুলার লেংথের বলে মিলার ২৮ বলে তুলেছেন ৮৯ রান। যেখানে ছিল ৬টি ছয়। আবার লেংথ একটু নামিয়ে দিলে সেখানে কমে আসে স্ট্রাইক রেটও। ৯১ বলে করতে পেরেছেন ৮৫ রান।