পাওয়ার প্লেতেই ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

পাওয়ার প্লেতেই দুই দলের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠলো। আগে ব্যাটিং করা ভারত ৬ ওভারে তুলেছিল বিনা উইকেটে ৫৯। অন্যদিকে বাংলাদেশ তুলেছে বিনা উইকেটে ৩০। নারী এশিয়া কাপে ১৬০ রানের কঠিন লক্ষ্যে ঠিক যেভাবে পরিকল্পনা করে ব্যাটিং করার দরকার ছিল, সেটি করতে পারেনি বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার। মোর্শেদা খাতুন ও ফারজানা হকের স্লো ব্যাটিংয়ের খেসারত দিতে হয়েছে পুরো দলকে। আজ (শনিবার) সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিগার সুলতানার ব্যাটে শেষ পর্যন্ত ১০০ রান করতে পারে বাংলাদেশ। মূলত শেফালি ভার্মার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে স্বাগতিকরা ৫৯ রানে হেরেছে ভারতের কাছে।

২০১৮ সালের নারী এশিয়া কাপে এই ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। গত চার বছরে অনেক কিছু বদলে গেলেও বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বদল হয়নি! চলতি টুর্নামেন্টেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল। বড় দল ভারতের বিপক্ষে একই পরিণতি স্বাগতিকদের। পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রথম ১০ ওভারে ভারত সংগ্রহ করে বিনা উইকেটে ৯১। সেখানে ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪৮। এখানেই মূল পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়।

দুই ওপেনার মোর্শেদা ও ফারজানা মিলে ৯.১ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করে ৪৫ রান সংগ্রহ করেন। ২৫ বলে ২১ রান করে আউট হন মোর্শেদা। এরপর অধিনায়ক নিগার সুলতানা নামার পর রানের গতি কিছুটা বাড়তে থাকে। ততক্ষণে ৪০ বলে ৩০ রান করে আউট হন ফারজানা। চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে মাঠে নেমে ৩ বলের বেশি খেলতে পারেননি রুমানা আহমেদ। রানের খাতা না খুলেই সাজঘরে ফিরেছেনে এই অলরাউন্ডার।

এরপর রান রেটের চাপে পড়ে আক্রমণ বাড়াতে গিয়ে ফিরে যান অধিনায়ক নিগারও। শেফালি ভার্মার বলে উইকেটকিপার রিচা ঘোষের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। ২৯ বলে ৫ চারে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ততক্ষণে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান করতে পারে বাংলাদেশ।

ব্যাটিংয়ে শেফালি ভর্মা ৪৪ বলে ৫৫ রানের পর বল হাতে ১০ রানে নিয়েছেন ২ উইকেটে। ম্যাচসেরা তিনিই। অন্যদিকে দিপ্তি শর্মা নেন ২ উইকেট।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভারত প্রথম পাওয়ার প্লেতেই এগিয়ে যায়। ৬ ওভারে কোনও উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলে ৫৯। ১০ ওভারে তোলে ৯১। এরপর কিছুটা চেপে ধরেন বাংলাদেশের বোলাররা। ১২তম ওভারে স্মৃতি মান্ধানাকে রান আউটের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের উৎসব। শেফালি ভার্সার কলে সাড়া দিয়ে রান নিতে ছুটছিলেন ভারতের অধিনায়ক। কিস্তু মাঝপথে বাধা পেয়ে ফিরতে গিয়ে যথাসময়ে পৌঁছাতে পারেননি পপিংক্রিজে। ফাহিমা খাতুন দারুণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্প ভেঙে দিয়ে ৪৭ রান করা স্মৃতি সাজঘরে ফেরেন। ৩৮ বলে ৬ চারে নিজের ইনিংসটি সাজান ভারতের অধিনায়ক।

স্কোরবোর্ডে আর ১৮ রান যোগ হতেই আরেক ওপেনার শেফালি রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। ৪৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় দলের সর্বোচ্চ ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।

প্রথম ওভারে শেফালিকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় ওভারেও একই ভূমিকাতে লেগ স্পিনার রুমানা আহমেদ। নিজের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে রিচা শর্মা ও কিরণ নবগিরেকে ফেরান রুমানা। তার ফ্লাইট ডেলিভারিটি লং অনে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন রিচা (৪)। প্রায় একই টাইপের বলে বোল্ড হন কিরণ (০)।

রুমানার সামনে সুযোগ ছিল হ্যাটট্রিক করার। দিপ্তি শর্মা সেই সুযোগটি দিয়েছিলেনও। কিন্তু রুমানা রিটার্ন ক্যাচটি হাতে জমাতে পারেননি। দিপ্তি ৫ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ দিকে সিলেট স্টেডিয়ামে ঝড় তোলেন জেমিমাহ রদ্রিগেস। শেষ ওভারের ৩ বল আগে সালমার বলে আউট হওয়ার আগে খেলেন ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। সব মিলিয়ে ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রুমানা আহমেদ ২৭ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া সালমা খাতুন নেন একটি উইকেট।