জয় ছাপিয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে চায় বাংলাদেশ

তিন বছর পর সিলেটে ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নয়নাভিরাম এই স্টেডিয়ামে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। লম্বা সময় পর আয়ারল্যন্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে খরা কাটাচ্ছে স্টেডিয়ামটি। শনিবার দুপুরে আইরিশদের বিপক্ষে মাঠে নামবে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর বাংলাদেশ। এই সিরিজে জয় ছাপিয়ে আক্রমণাত্মক ও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে মুখিয়ে স্বাগতিকরা। ম্যাচটি দুপুর দুইটায় শুরু হবে, সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি স্পোর্টস।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেছে আয়ারল্যান্ড। যদিও ২০০৮ সালে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ঢাকায় এসেছিল আইরিশরা। এরপর ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও ঢাকায় একটি ম্যাচ খেলেছিল। সবগুলো ম্যাচেই শেষ হাসি হেসেছিল বাংলাদেশ। এর বাইরে নিজেদের হোম গ্রাউন্ডে আয়ারল্যান্ড খেলেছে সাতটি ম্যাচ। ওই সাত ম্যাচের মধ্যে আইরিশরা দুটি ম্যাচ জিতলেও, বাংলাদেশ জিতেছে তিনটি এবং বাকি দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। 

এদিকে আয়ারল্যান্ডের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারানোর ইতিহাস আছে দলটির। ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে স্বাগতিদের হারিয়ে দিয়েছিল আইরিশরা। অ্যান্ডি বালবির্নির অসাধারণ সেঞ্চুরিতে (১০২) আগে ব্যাটিং করে ২৯০ রান করেছিল আয়ারল্যান্ড।  ব্যাটিংয়ের পর অসাধারণ বোলিং করে জয় ছিনিয়ে আনে সফরকারীরা। পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও সাফল্য পায় আইরিশরা। কিংসটাউনে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে। চলতি বছর জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করে আয়ারল্যান্ড। সবকিছু মিলিয়ে মোটামুটি ভালো অবস্থানেই আছে তারা। তার মধ্যে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে শামীম-সৌম্য-ইয়াসিরদের নিয়ে গড়া দলকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বর বালবির্নির দল। নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
 
বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার বিষয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে পারফরম্যান্স। ঘরের মাঠে আধিপত্য বিস্তার করা বাংলাদেশ ওই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে। এমন অবস্থায় নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে স্বাগতিকরা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চান্ডিকা হাথুরুসিংহের একটাই চাওয়া, ‘ছেলেদের থেকে একটাই প্রত্যাশা, পারফর্ম। আমরা যখন ভালো খেলি তখন ম্যাচ জিতি। এবার সেই কাজটাই ওদের থেকে চাইছি।’

তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে হাথুরুসিংহের চাওয়া মাঠে নিজেদের আক্রমণাত্মক, আগ্রাসী, ক্ষুধার্ত চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলা, ‘আমি ভিন্ন কিছুর জন্য তাকিয়ে থাকি। মাঠে চরিত্র ফুটিয়ে তোলা। তারা কীভাবে পরিস্থিতি সামলে নেয়। পারফরম্যান্স ওঠা-নামা করবে। কিন্তু মাঠে নিজেদের শারীরিক ভাষা, ফিল্ডিং, মনোভাব যেন প্রদর্শন করতে পারে। তাহলেই আমরা সঠিক পথে থাকবো।’

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দল চোট জর্জর অবস্থায়। অধিনায়ক তামিম ইকবাল মৌসুমে জ্বরে আক্রান্ত। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি সুস্থ বলে জানা গেছে। তাই তামিমকে অধিনায়ক হিসেব পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এর আগে জাকির হাসান ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন, তার বদলে রনি তালুকদারকে স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে। মেহেদী হাসান মিরাজ ফুটবল খেলতে গিয়ে আহত হয়েছেন। তার ডান চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে। শনিবারের ম্যাচে তার খেলার কোনও সম্ভাবনাই নেই। আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে অভিষেক হতে পারে তৌহিদ হৃদয়ের। ফিরতে পারেন ইয়াসির আলী রাবি। 

দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাম্প্রতিক সময়ে হারানো দলটি গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকেও বধ করেছিল। যদিও সেটি ছিলো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের। তবুও নিজেদে দিনে আইরিশরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ম্যাচের আগের দিন তাদের অধিনায়ক অবশ্য হুমকিই দিয়ে রাখলেন বাংলাদেশ দলকে, ‘আমাদের দিনে যে কোন দলকে হারানোর সামর্থ্য আছে। আমরা নিজেদের সেরা খেলতে মুখিয়ে আছি।’

এদিকে সিলেটের উইকেট নিয়ে আগ্রহ বেশ। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে অধিনায়ক তামিম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য পরের সিরিজ থেকেই ভালো ব্যাটিং উইকেটে খেলতে চায় দল। এবার আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগের দিন কোচ হাথুরুসিংহে বললেন, উইকেট দেখে তার দারুণ ব্যাটিং বান্ধব বলেই মনে হচ্ছে। তেমনটা হলে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা শঙ্কার থেকেই যায়। এমিনতেই ব্যাটিং বান্ধব উইকেট, তার মধ্যে শুক্রবারের আবহাওয়া পুরোটাই আইরিশ কন্ডিশন হয়ে ছিল। ম্যাচের দিনে এমন কন্ডিশন থাকলে, বিপদ বাড়বে বাংলাদেশের। ভালো ব্যাটিং উইকেটের সঙ্গে আইরিশ কন্ডিশন সোনায় সোহাগাতো আয়ারল্যান্ডেরই হওয়ার কথা। এছাড়া ওয়ানডেতে ৩৫০ স্কোর হারহামেশা দেখা গেলেও বাংলাদেশে এখনও অব্দি ওতদূর যেতে পারেনি। লাল-সবুজ জার্সিধারীদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩৩৫ রান। এখন দেখার অপেক্ষায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতির সিরিজে আইরিশদের বিপক্ষে নিজেদের ছাপিয়ে যেতে পারে কি না?