বাংলাদেশ দল এখন ‘মজায় আছে, উপভোগ করছে’

‘এখন সবাই উপভোগ করছে। আগেও মজায় ছিল, এখনও মজায় আছে।’- আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে সংবাদ সম্মেলনে লিটন দাস এভাবেই দলের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে, বিশেষ করে ঘরের মাঠে বরাবরই অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারলেও আইরিশদের দুই ম্যাচে দেখিয়েছে বাংলাদেশ কতটা ভয়ঙ্কর দল। 

ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালের সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছু চর্চা হয়েছে। ওয়ানডে সিরিজ হারের পর সেটা আরও ডালপালা মেলে। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সুখী বাংলাদেশকে দেখা যাচ্ছে। যদিও সোমবার ম্যাচ শেষে লিটন জানিয়েছেন, সবসময়ই মজায় থাকেন, আগেও পরিস্থিতি ভিন্ন কিছু ছিল না।

প্রথম ম্যাচে ৩৩৮ রানের বড় সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। আইরিশ বোলারদের নাস্তানাবুদ করে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়েছিল তামিমের দল। ওই ম্যাচে রেকর্ড ১৮৩ রানে জয় লাভ করে। পরের ম্যাচে একই দাপট দেখিয়ে আগের রেকর্ড ভেঙে দেয় বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে মুশফিক দলকে রেকর্ড ৩৪৯ রান এনে দেন। এমন ছন্দময় পারফরম্যান্স পেছনে ড্রেসিংরুমের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। লিটনের কথাতেও সেটি স্পষ্ট। 

bd-enjoy2
 
ড্রেসিংরুমের আবহ সম্পর্কে জানতে চাইলে লিটন বলেছেন, ‘না (ভিন্ন কিছু নয়), সবাই উপভোগ করছে, সবাই মজায় আছে।' আগেও মজায় ছিলেন? প্রশ্নে হেসে লিটনের জবাব,  'হ্যাঁ আগেও মজায় ছিলাম (হাসি)।'

আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরে ভারতে হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ঠিকঠাক প্রস্তুতি করতে স্পোর্টিং উইকেটে ম্যাচগুলো খেলছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ড সিরিজেও নিজেদের ঠিকঠাক মেলে ধরেছে স্বাগতিক ব্যাটাররা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ থেকে সেই চাওয়া পুরোপুরি পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন লিটন। সিলেটে প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩৮ রান করে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে তামিমের দল। দুদিন পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ভেঙে ফেলে তা। এবার আসে ৩৪৯ রান। দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি এসেছে একটি,  ফিফটি চারটি, চল্লিশ পেরুনো ইনিংস আরও দুটি। 

দলের ব্যাটারদের সবার একসঙ্গে জ্বলে ওঠা, ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাটিং করা এইসব বিশ্বকাপে কাজে দেবে বলে মনে করেন লিটন, ‘আমরা তো চাই এটা হোক। যদি আমরা ব্যাটাররা রান করতে পারি আপনি যখন বড় বড় ইভেন্ট খেলবেন তখন কিন্তু এমনই হয় রান। সব ম্যাচে ৩০০ হয়তো হয় না, কিন্তু ২৮০ প্লাস হয়ই। চাইবো তো সবসময় ভালো উইকেট খেলি, ভালো ফল করি। কিন্তু অবশ্যই আমার মনে হয় সাহায্য করবে এই জিনিস।’

bd-enjoy3

ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ জিতলেও সব পজিশনে ব্যাটারদের পারফরম্যান্স ঠিকঠাক হচ্ছিল না। বিশেষ করে মিডল অর্ডারের সমস্যাটা বেশি ছিল। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ শেষে দেখা গেছে ভিন্ন অবস্থা। দুই ম্যাচের মিডল অর্ডার দুর্দান্ত খেলেছে। প্রথম ম্যাচে চতুর্থ উইকেটে তাওহিদ হৃদয়-সাকিব আল হাসানের ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটির পর শেষ দিকে মুশফিকুর রহিম ও হৃদয়ের ৪৯ বলে আসে ৮০ রানের জুটি। দ্বিতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় উইকেটে লিটন-শান্তর ৯৬ বলে ১০১ রানের জুটির পর পঞ্চম উইকেটে হৃদয়-মুশফিক তোলেন ৭৮ বলে ১২৮ রান। 

লিটন বলছেন ইনটেন্ট ঠিক থাকার কারণেই মিলছে সাফল্য, ‘যারাই ব্যাটিং করছে মাঝের ওভারে, সবাই অভিপ্রায় নিয়েই ব্যাট করছে। এমন না যে সবাই গিয়ে বড় বড় ছক্কা মারছে। কিন্তু যে জিনিসটা ছিল কীভাবে আমরা এক-দুই কিংবা চার মারতে পারি। আমার মনে হয় যারা ব্যাটিং করছিল, তাদের অভিপ্রায় খুবই ভালো ছিল।’

bd-enjoy4

ভারতের বিশ্বকাপে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হবে। যেখানে ৩০০-৩৫০ রান নিয়মিতই হবে মনে করা হচ্ছে। টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ৩০০ প্লাস রান করেছে। নিয়মিত এই অভ্যাস গড়তে পারলে বিশ্বকাপে কাজে দেবে আশা লিটনের, ‘অবশ্যই অনেকখানি সাহায্য করবে। আপনি বিশ্বকাপে যখন ভালো ভালো বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে খেলবেন, তখন এরকমই মুভমেন্ট করবে। এই কোয়ালিটির বোলিংই করবে। আমার মনে হয় আপনি যখন নিয়মিত ৩০০-৩৫০ রান ছুঁইছুঁই অবস্থায় থাকবেন, তার মানে আপনি ভালো ক্রিকেট খেলছেন।'

সিরিজ থেকে জেতার প্রত্যাশার থেকেও আরও কিছু ব্যাপার দেখার ছিল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দিয়ে খেলানো হয়েছে হৃদয়কে। তিনি সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন শতভাগ। মুশফিককে চার থেকে সরিয়ে নামানো হয়েছে ছয়ে। নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে  সফল বলে দাবি করলেন লিটন, ‘শেষ দুই ম্যাচ ধরে আমরা যে পরিকল্পনা করছি, সে লক্ষ্য আমাদের ব্যাটিংয়ে সম্পূর্ণ সফল বলবো। পরের ম্যাচটা ভিন্ন বল গেম হতে পারে। আমরা পরেও ব্যাট করতে পারি।’