রুবেলের অকালে তারা হয়ে যাওয়ার এক বছর

মোশাররফ হোসেন রুবেল স্বপ্ন দেখতেন সাদা জার্সিতে লাল বলের ক্রিকেটে মাঠ মাতাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে গত বছর আজকের এই দিনটিতে মাত্র ৪০ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন।

বুধবার রুবেলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এই উপলক্ষে বাদ আসর বারিধারা মসজিদে দোয়া ও ইফতারের আয়োজন করেছে তার পরিবার।

২০১৯ সালের মার্চে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে রুবেলের। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওই বছরের ১৯ মার্চ নিউরো সার্জন এলভিন হংয়ের তত্ত্বাবধানে হয় সফল অস্ত্রোপচার। এরপর দেশে ফিরে এলেও কেমো এবং রেডিও থেরাপির জন্য নিয়মিত সিঙ্গাপুরে যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতে হয়েছে। একই বছরের ডিসেম্বরে সর্বশেষ কেমো দেওয়া হলে এক বছর ফলোআপে ছিলেন তিনি।

এসবের মাঝেই ২০২০ সালে সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু নভেম্বরে ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় সবকিছু আবারও থমকে গেছে। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয় কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছিলেন। এরপর ২০২১ সালের শেষ দিকে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে আবার ভারতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ফেরার পর থেকে ক্রমাবনতি ঘটে তার।

অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় গত বছর ১৪ মার্চ নেওয়া হয় হাসপাতালে। স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর স্থানান্তর করা হয় সাধারণ কেবিনে। এরপর অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়ায় বাসাতেও ফিরতে পেরেছিলেন। কিন্তু খুব বেশিদিন থাকতে পারেননি। আবার গুরুতর অসুস্থ হলে ১৯ এপ্রিল বিকালে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান।

২০০৮ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় এই স্পিনারের। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে খেলে ১ উইকেট পেয়েছেন। এরপর ভারতের বিদ্রোহী ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ আইসিএলে খেলতে যাওয়ায় ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছিলেন। তবে শাস্তি শিথিল হলে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে আবার ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরার অনুমতি পান তিনি। ২০১৩ সালে বিপিএলের প্রথম মৌসুমে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন। ফাইনালে ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা। গ্লাডিয়েটর্সকে চ্যাম্পিয়ন করে রুবেল ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের দলে সুযোগও পেয়েছেন। কিন্তু কোনও ম্যাচ না খেলিয়েই ফের বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া হয় তাকে।

৩ তিন বছর পর ২০১৬ সালে আফগানিস্তান সিরিজে তাকে দলে নেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ৮ বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে পান ৩ উইকেট। দলকে জেতাতে বড় ভূমিকাও রাখেন। বাংলাদেশের জার্সিতে ৫ ওয়ানডে খেলেছেন রুবেল। পেয়েছেন ৪ উইকেট, রান করেছেন ২৬।

জাতীয় দলে আর কোনও ফরম্যাটে সুযোগ না পেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে খেলা ১১২ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ৩৯২। অন্যদিকে, ২৩.৯৪ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৩০৫ রান। অথচ যে ফরম্যাটে ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপট দেখিয়ে সফলতা পেয়েছেন, সেই ফরম্যাটে জাতীয় দলের হয়ে খেলা হয়নি তার। তা নিয়ে আক্ষেপও কম ছিল না।