প্রথম টি-টোয়েন্টি

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এলো বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫, লক্ষ্য ১৩৫ (মেহেদী ১৯*, লিটন ৪২*; আফিফ ১, হৃদয় ১৯, সৌম্য ২২, শান্ত ১৯, রনি ১০)

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী। 

নিউজিল্যান্ড ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (মিলনে ১৬*, সিয়ার্স ১*; সোধি ২, সাউদি ৮, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, চ্যাপম্যান ১৯, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, অ্যালেন ১, সেইফার্ট ০)

ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয় ছিল না বাংলাদেশের। সেই খরা কেটেছে শেষ ওয়ানডেতে। সেই অনুপ্রেরণায় এবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এলো প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ও। পার্থক্য হলো এই জয়টা এসেছে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। কিউইদের ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

তাসমান পাড়ের দেশটিতে আগে যেখানে ব্যর্থতা ছিল সঙ্গী সেখানে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত করছে আধিপত্য। অথচ আগের ৯টি টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ছিল না কোনও জয়। এবার ইতিহাস পাল্টেছে। 

১৩৪ রানের লক্ষ্যে শুরুতে মনে হয়নি বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে দূরে। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে খেলতে থাকে তারা। রনি দ্রুত ফিরলেও স্কোরবোর্ড সচল রাখেন শান্ত। তার বিদায়ের পর যোগ দেন সৌম্য সরকারও। কেউ ইনিংস লম্বা করতে পারেননি যদিও। তার পর হৃদয়-লিটন জুটি এগিয়ে নিতে থাকে সফরকারীদের। দ্রুত সময়ে হৃদয়, তার পর আফিফও আউট হলে শেষ দিকে শঙ্কা জেগেছিল যদিও। কিন্তু শুরু থেকে প্রান্ত আগলে ধীরস্থিরে খেলতে থাকা লিটন শেষ দিকে ঝলসে উঠে নিশ্চিত করেছেন ঐতিহাসিক জয়। তার সঙ্গে জুটি গড়তে এই সময় অবদান ছিল শেখ মেহেদীর। চাপের মুহূর্তে দুজনে মিলে ২৫ বলে উপহার দেন অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটি।  

কিউইদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন টিম সাউদি, অ্যাডাম মিলনে, জেমস নিশাম, বেন সিয়ার্স ও মিচেল স্যান্টনার।  

হৃদয়ের পর আফিফের আউটে চাপে বাংলাদেশ

বাকিরা ফিরলেও প্রান্ত আগলে রয়েছেন ওপেনার লিটন দাস। ধীর গতিতে খেললেও হৃদয়ের সঙ্গে জুটি গড়েছিলেন তিনি। হৃদয়ের আউটে ভেঙেছে ২৯ রানের জুটি। দ্রুত সময়ে আফিফও সাউদির বলে ক্যাচ আউট হলে চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। অবশ্য একই ওভারে লিটনকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছিলেন সাউদি। আম্পায়ার আঙুল তুলেছিলেন। পরে রিভিউ নিয়ে রক্ষা পেয়েছেন তিনি।  

হৃদয়কে ফেরালেন স্যান্টনার 

সৌম্যর বিদায়ের পরও সমস্যা হচ্ছিল না বাংলাদেশের। দারুণ জুটিতে স্কোরবোর্ড সচল রাখছিলেন তাওহীদ হৃদয় ও লিটন দাস। ২৯ রানের জুটি ভেঙেছে হৃদয়ের বিদায়ে। ডাউন দ্য উইকেটে এসে সাউদিকে ক্যাচ দিয়েছেন। তাতে ১৮ বলে ১৯ রানে শেষ হয়েছে হৃদয়ের ইনিংস। তাতে ছিল ১টি ছয়ের মার।   

আগ্রাসী সৌম্যকে বিদায় দিয়েছেন সিয়ার্স 

শান্ত আউট হলে নতুন নেমেই আগ্রাসী ব্যাটিংটা ধরে রাখেন সৌম্য সরকার। তার চার-ছক্কায় দলের স্কোরও ছাড়ায় পঞ্চাশ। দারুণ ইনিংসটির অপমৃত্যু ঘটে সিয়ার্সকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হলে। তাতে ১৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রানে কাটা পড়েন তিনি। 

পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪২

দ্রুত রনিকে হারালেও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পঞ্চম ওভারে তাকে তালুবন্দি করিয়েছেন নিশাম। ১৪ বলে ১৯ রানে ফিরেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ৩৮ রানে সফরকারীরা হারায় দ্বিতীয় উইকেট। তাতে পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ৪২ রান। 

দ্রুত ফিরলেন রনি

১৩৫ রানের লক্ষ্যে দারুণ শুরু করেছিলেন ওপেনার রনি তালুকদার। সাউদির পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। আগ্রাসী হতে গিয়ে মিলনের বলে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন ১০ রানে। তাতে ১৩ রানে পড়েছে প্রথম উইকেট।

বাংলাদেশকে ১৩৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছে নিউজিল্যান্ড

টস জিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি কিউইদের ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। শুরুতেই নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামান শেখ মেহেদী-শরিফুলরা। ২০ রানে তুলে নেয় ৪ উইকেট। ৫০ রানে তুলে নেয় পঞ্চম উইকেটও। কিন্তু মাঝের বোলিংয়ে দারুণ এই শুরুটা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। নিশাম-স্যান্টনারের ৪১ রানের জুটিতে পরে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। স্যান্টনার আউট হলেও নিশামের ব্যাটে এক পর্যায়ে দেড়শ রানও মনে হচ্ছিল সম্ভব। কিন্তু নিশামকে ৪৮ রানে মোস্তাফিজ সাজঘরে পাঠালে ১৩৪ রানে থেমেছে স্বাগতিকদের ইনিংস। অবশ্য শেষ দিকে অ্যাডাম মিলনের ক্যামিও ইনিংস স্কোরটাকে ভদ্রস্থ রূপ দিয়েছে।  

২৬ রানে  ৩ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল। ১৪ রানে দুটি নিয়েছেন শেখ মেহেদীও। ১৫ রানে দুটি নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। একটি করে নিয়েছেন অভিষিক্ত তানজিম হাসান ও রিশাদ হোসেন। 

সাকিবের বলে আউট সোধি

শেষ দিকে কিউইদের রান বাড়াতে সেভাবে সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ। বরং শেষ ওভারে নবম উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকরা। রিভিউ নিয়ে সোধিকে গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন তানজিম সাকিব। 

সাউদিকেও ফেরালেন মোস্তাফিজ

নিশামের পর সাউদিকে দ্রুত ফেরানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। শরিফুলের ১৮তম ওভারে তার ক্যাচ উঠলেও সেটি নেওয়ার জন্য কেউ ছুটে যায়নি। তার পরের বলেই ছক্কা হাঁকান মিলনে। পরের ওভারে অবশ্য মোস্তাফিজের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে ৮ রানে ফিরেছেন সাউদি। 

নিশামকে বিদায় দিয়ে স্বস্তি ফেরালেন মোস্তাফিজ

স্যান্টনারকে আউট করলেও প্রান্ত আগলে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাথা ব্যথার কারণ হয়েছিলেন নিশাম। তার ব্যাটেই স্কোর শতরান ছাড়িয়েছে। আরও বিপজ্জনক হওয়ার আগেই তাকে তালুবন্দি করিয়েছেন মোস্তাফিজুর। তার ফুলটসে আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন নিশাম। ফেরার আগে কিউই ব্যাটার ২৯ বলে ৪৮ রান করেছেন। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছয়। 

স্যান্টনারকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন শরিফুল

৫০ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর মূল জুটিটাই গড়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্যান্টনার ও নিশাম। দারুণ ব্যাটিংয়ে রান তুলছিলেন তারা। স্কোরটাকে ভদ্রস্থ করার একটা চেষ্টা ছিল তাদের ব্যাটিংয়ে। হুমকি হয়ে ওঠা ৪১ রানের এই জুটি ভেঙে স্বস্তি ফিরিয়েছেন শরিফুল। তার বল মিড উইকেটের ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন স্যান্টনার। সেটা দারুণভাবে তালুবন্দি করেন সৌম্য।শুরুতে অবশ্য ক্যাচ নিয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন তিনি। পরে থার্ড আম্পায়ারের দ্বারস্থ হলে আউট হন কিউই ব্যাটার। স্যান্টনার ২২ বলে ২৩ রানে ফিরেছেন। তার ইনিংসে ছিল ২টি চার।      

রিশাদের ঘূর্ণিতে পড়লো কিউইদের পঞ্চম উইকেট

২০ রানে চার উইকেট পতনের পর চাপে ছিল নিউজিল্যান্ড। এমন অবস্থাতে রান বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন চ্যাপম্যান ও নিশাম। এই জুটি ভেঙে কিউইদের পঞ্চম উইকেট তুলে নিয়েছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তার প্রথম ওভারে মেরে খেলতে গিয়েছিলেন চ্যাপম্যান। ফলাফল বাউন্ডারি লাইনে তানজিম সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ফেরার আগে চ্যাপম্যান ১৯ বলে ১৯ রানে ফিরেছেন। তার ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ১টি ছয়।    

পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে কিউইদের সংগ্রহ ৩৬

পঞ্চম ওভারে মিচেলের বিদায়ে ২০ রানে পড়েছে নিউজিল্যান্ডের চতুর্থ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ষষ্ঠ ওভারে চ্যাপম্যানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে স্বাগতিকরা জমা করতে পারে ৩৬ রান। 

আক্রমণাত্মক হতে চাওয়া মিচেলকে ফেরালেন মেহেদী

৩ উইকেট হারানোর পর পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে তাদের টেনে তোলার চেষ্টায় ছিলেন ড্যারিল মিচেল। আইপিএলে ১৪ কোটি রুপিতে দল পাওয়া এই ব্যাটার আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বাউন্ডারি মেরে হাত খোলার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। পঞ্চম ওভারে তাকে বিদায় দিয়েছেন শেখ মেহেদী। এই অফস্পিনারের ঘূর্ণি বলটি ব্যাটে বলে সংযোগ ঘটাতে পারেননি মিচেল। বোল্ড হয়েছেন ১৪ রানে। তার ১৫ বলের ইনিংসে ছিল দুটি চার।    

শরিফুলের জোড়া আঘাতে আরও বিপদে নিউজিল্যান্ড

ইনিংসের দ্বিতীয় বলে উইকেট হারানোর পর কিউইদের আরও বিপদের মাঝে ফেলেছেন পেসার শরিফুল। জোড়া উইকেট তুলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে নেন ফিন অ্যালেন ও গ্লেন ফিলিপসের উইকেট। শরিফুলের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ব্যাট চালাতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন অ্যালেন (১)। পরের ডেলিভারিটি ভেতরে ঢুকলে লেগ বিফোরে ফিরেছেন ফিলিপস (০)। শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি অবশ্য। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে মিলেছে সাফল্য।  

মেহেদীর প্রথম ওভারেই সাফল্য

প্রথমে কেন টস জিতে বোলিং নেওয়া সেটি শুরুতেই প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। অফস্পিনার মেহেদীর দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়েছেন ওপেনার টিম সেইফার্ট। জায়গা করে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন কিউই ওপেনার। বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন রানের খাতা না খুলে।  

টি-টোয়েন্টি সিরিজের ট্রফি হাতে দুই দলের অধিনায়ক।টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

একটা সময় বাংলাদেশের জন্য নিউজিল্যান্ড সফর ছিল বিভীষিকাময়। আস্তে আস্তে সেই কিউই কন্ডিশনেও ভালো করছে বাংলাদেশ দল। টেস্টে গত বছর নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর চলতি সিরিজে শেষ ওয়ানডেতে জয় দিয়ে এই ফরম্যাটে খরা কাটিয়েছে। এবার টি-টোয়েন্টিতে হারের বৃত্ত ভাঙার পালা। 

শেষ ওয়ানডেতে কিউইদের হারিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নেওয়া নাজমুল হাসান শান্তরা প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টসও জিতেছে। নেপিয়ারে শুরুতে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে সফরকারী দল। 

বাংলাদেশ দলে তানজিম সাকিবের অভিষেক 

বাংলাদেশ দলে আজ অভিষেক হচ্ছে পেসার তানজিম হাসান সাকিবের। খেলবেন তিন পেসার মোস্তাফিজ, তানজিম ও শরীফুল। সঙ্গে আছেন লেগ স্পিনার রিশাদ ও অফ স্পিনার শেখ মেহেদী। 

কিউই দলটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিচেল স্যান্টনার। ওয়ানডেতে বিশ্রামে ছিলেন তিনি। জায়গা হয়নি কেন উইলিয়ামসনের বদলে আসা রাচিন রবীন্দ্রর।  

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), রনি তালুকদার, তাওহীদ হৃদয়, আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমান। 

নিউজিল্যান্ড একাদশ: টিম সেইফার্ট (উইকেটরক্ষক), ফিন অ্যালেন, ড্যারিল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস, মার্ক চ্যাপম্যান, জেমস নিশাম, মিচেল স্যান্টনার (অধিনায়ক), অ্যাডাম মিলনে, টিম সাউদি, ইস সোধি, বেন সিয়ার্স।