কিউইদের ডেরায় বাংলাদেশের ‘তিনে তিন’

একটা সময় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পরাজয়ের গল্প লিখতো বাংলাদেশ। যে ফরম্যাটেই খেলুক না কেন, দিনশেষে ফলাফল থাকতো বাংলাদেশের বিপক্ষে। খুব বেশি দিন নয়, ২০২৩ সালের আগ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে সফর মানে বাংলাদেশের জন্য ছিল বিভীষিকাময় অধ্যায়। সেই অতীত ভুলে গিয়ে এক বছরের মধ্যে কিউইদের ডেরাতে ‘তিনে তিন’ বাংলাদেশ। হয়েছে চক্র পূরণ। প্রথমে টেস্ট, তারপর চলমান সফরে ওয়ানডে জয়ের পর এবার জিতেছে টি-টোয়েন্টিতেও।

গত বছর জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে হারের বৃত্তটা ভেঙেছিল বাংলাদেশ। বাকি ছিল ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জয়। কয়েক দিন আগে শেষ ওয়ানডে জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার নিউজিল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেটে হারিয়ে আরেকটি ‘প্রথম’ জয়ও তুলে নিয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। যার বড় কৃতিত্ব নাজমুল হোসেন শান্তর। সাকিব আল হাসানের ইনজুরিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পান তিনি। নিজের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগেই পুরো দলের মধ্যে জেতার আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যার ফলাফল মিলেছে চলমান সিরিজে। নিউজিল্যান্ডে ১৮ ওয়ানডে খেলে জয়হীন বাংলাদেশ তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতেছে দাপটের সঙ্গে।

একই মাঠে ওয়ানডে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলতে নামে বাংলাদেশ। নেপিয়ার হতাশ করেনি বাংলাদেশকে। ম্যাকলিন পার্কে বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে ছন্দ হারালেও জয় তুলে নিতে সমস্যা হয়নি। কিউই কন্ডিশনে এর আগে নয়টি টি-টোয়েন্টি খেলে সবগুলোই বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে। এবার আগের হারের ইতিহাস বদলে দাপট দেখিয়েই জয় তুলে নিয়েছে সফরকারীরা। যদিও ম্যাচটা আরও ভালো ব্যবধানে জিততে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু কিছু মিস ফিল্ডিং ও বাংলাদেশের টপ অর্ডারের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে জয় পেতে কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘প্রথম’ টি-টোয়েন্টি জয়ের পর বাংলাদেশের সামনে চলতি বছর অপরাজিত থাকার হাতছানি। এখন পর্যন্ত তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে একটিতেও হারেনি বাংলাদেশ। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর, চলতি বছরের মার্চে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের জয়যাত্রা। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করেছে। কিউইদের বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচের একটি জিততে পারলেও চলতি বছর সবগুলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতার ইতিহাস গড়বে শান্তর দল।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে এত আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশকে দেখা যায়নি। সাকিব-তাসকিনরা না থাকলেও কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে বেশ ব্যালেন্স দল নিয়েই বুধবার তারা মাঠে নেমেছিল। টস জিতে কিউইদের ব্যাটিংয়ে পাঠানোর কারণ কয়েক মিনিটের মধ্যেই বুঝিয়ে দেন শান্ত। অফস্পিনার মেহেদী হাসানকে দিয়েই বোলিং শুরু করেন তিনি। আস্থার প্রতিদান দিতে দেরি করেননি এই স্পিনার। চতুর্থ বলেই ক্লিন বোল্ড করেন টিম সেফার্টকে। পরের ওভারে আক্রমণ হানেন শরিফুল ইসলামও। তিনি তুলে নেন আরকে ওপেনার ফিন অ্যালেনকে। পরের বলে তার জোড়া শিকার হন গ্লেন ফিলিপস। তারপর তো ২০ রানে টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকে নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে দলের স্কোরকে ১৩৪ রানে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার জেমস নিশাম। তার করা ২৯ বলে ৪৮ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে কিউইরা নির্ধারিত ২০ ওভারে  ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান তোলে।

অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব বাদে বাংলাদেশের বাকি বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত। সাকিব বেশ খরুচে বোলিং করেছেন। ৪ ওভারে ৩৯ রান খরচায় তার শিকার ছিল একটি উইকেট। তবে সবচেয়ে ভালো বোলিং করেছেন শরিফুল। ২৬ রান খরচায় তার শিকার তিনটি উইকেট। মেহেদী ও মোস্তাফিজ নেন দুটি করে উইকেট।

কিউইদের দেশে কিউইদের ১৩৪ রানে থামিয়ে দেওয়ার পর থেকেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। শুরুটাও করেছিল সেভাবেই। কিন্তু শুরুটা ভালো করেও একে একে রনি তালুকদার (১০), নাজমুল হোসেন শান্ত (১৯), সৌম্য সরকার (২২) ইনিংস বড় না করেই ফেরেন সাজঘরে। তার পর একপ্রান্ত আগলে ব্যাটিং করা লিটন ও তাওহীদ মিলে এগিয়ে নিতে থাকেন সফরকারীদের। দুজন মিলে ২৯ রানের জুটির পর তাওহীদ আউট হন দলীয় ৯৬ রানে। স্কোরবোর্ডে আরও একরান যোগ হতেই আফিফ (১) সাজঘরে ফিরলে মুহূর্তে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত  লিটন ও শেখ মেহেদীর দৃঢ়তায় সেটি হয়নি অবশ্য। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটিতে বাংলাদেশ ৮ বল আগেই ৫ উইকেটে ঐতিহাসিক জয়ের দেখা পেয়েছে। লিটন ৪২ রানে এবং মেহেদী ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতে দারুণ পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা হয়েছেন মেহেদী।