সংক্ষিপ্ত স্কোর: নিউজিল্যান্ড ১৪.৪ ওভারে ৯৫/৫, লক্ষ্য ১১১ ( স্যান্টনার ১৮*, নিশাম ২৮*; অ্যালেন ৩৮, চ্যাপম্যান ১, ফিলিপস ১, মিচেল ১, সেইফার্ট ১)
ফল: ডিএলএসে নিউজিল্যান্ড ১৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: মিচেল স্যান্টনার, সিরিজ সেরা: শরিফুল (৬ উইকেট)।
বাংলাদেশ ১৯.২ ওভারে ১১০/১০ ( মোস্তাফিজ ৩*; রিশাদ ১০, তানভীর ৮, শরিফুল ৪, শামীম ৯, মেহেদী ৪, তাওহীদ ১৬, আফিফ ১৪, রনি ১০, শান্ত ১৭, সৌম্য ৪)
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম কোনও সিরিজ জয়ের সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তাও আবার বছরের শেষ দিনে। কিন্তু সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাজে ব্যাটিংয়ের মাশুল দিলো সফরকারীরা। স্কোরবোর্ডে পর্যাপ্ত রান না থাকায় বোলাররা ম্যাচটা শুরুতে জমিয়ে দিলেও তারা বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে হেরেছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচ জেতায় সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়। দ্বিতীয় ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল।
১১১ রানের মামুলি লক্ষ্য দিয়েও ম্যাচটা শুরুতে জমিয়ে দিয়েছিলেন শেখ মেহেদী ও শরিফুল। পাওয়ার প্লেতে তারা ৩ উইকেট তুলে নেওয়ায় কিউইরা চাপে পড়ে যায় শুরুতে। শুধু একপ্রান্ত ধরে খেলছিলেন অ্যালেন। চ্যাপম্যানের রানআউটের পর অ্যালেনের বিদায়ে ৪৯ রানে কিউইরা ৫ উইকেট হারালে ম্যাচে ভালোভাবেই ফেরে সফরকারী দল। এটা জানাই ছিল বৃষ্টি নামবে এক পর্যায়ে। তখন ডিএলএস পদ্ধতিতে স্বাগতিকরা পিছিয়ে ছিল। কিন্তু ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার পর আর কোনও চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং স্যান্টনার-নিশামের অবিচ্ছিন্ন ৪৬ রানের জুটি ম্যাচ জয়ের কাছে নিয়ে গেছে স্বাগতিকদের। ১৪.৪ ওভারে যখন বৃষ্টি নামে, তখনই তারা ১৭ রানে এগিয়ে ছিল।
১৭ রানে দুটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। ১৮ রানে দুটি নিয়েছেন শেখ মেহেদী।
১১১ রানের লক্ষ্য দিয়ে ৪৯ রানে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন শরিফুল-মেহেদীদের দারুণ বোলিংয়ে ছোট লক্ষ্যও পাহাড়সম মনে হচ্ছিল। সেখান থেকে নিউজিল্যান্ড ঘুরে দাঁড়ায় স্যান্টনার-নিশামের ব্যাটিংয়ে। ১৪.৪ ওভারে বৃষ্টি নামার আগে ৫ উইকেটে তারা করেছে ৯৫ রান। এক পর্যায়ে ডিএলএস পদ্ধতিতে পিছিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড এগিয়ে গেছে এই দুই ব্যাটারের কল্যাণে। তারা এখন ১৭ রানে এগিয়ে।
অ্যালেনকে আউট করে কিউইদের বিপদে ফেলেছেন শরিফুল
বাংলাদেশ শুরু থেকে কিউইদের একপ্রান্ত নড়বড়ে করে রাখলেও মূল লড়াইটা চালাচ্ছিলেন ওপেনার ফিন অ্যালেন। কিন্তু নবম ওভারে তাকে টিকতে দেননি শরিফুল। এই পেসারের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ফেরার আগে ৩১ বলে ৩৮ রান করেছেন অ্যালেন। তাতে ষষ্ঠবারের মতো শরিফুলের বলে আউট হয়েছেন তিনি।
রানআউটে কাটা পড়লেন চ্যাপম্যান
কিউইদের ৩ উইকেট তুলে পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। চাপে পড়ে সপ্তম ওভারে স্বাগতিকরা রানআউটে হারায় চতুর্থ উইকেটও। ফেরেন চ্যাপম্যান (১)।
ফিলিপসকে ফিরিয়ে কিউইদের চাপে ফেলেছে বাংলাদেশ
১১১ রানের ছোট লক্ষ্য দিয়েও বাংলাদেশ এটা বুঝিয়ে দিয়েছে ম্যাচটা তারা সহজ হতে দেবে না। পাওয়ার প্লেতেই কিউইদের ৩ উইকেট তুলে তারা লড়ােইয়ে ফিরেছে। সর্বশেষ পঞ্চম ওভারে নতুন নামা গ্লেন ফিলিপসকে বোল্ড করেছেন শরিফুল। তাতে শুরুতেই চাপে পড়ে গেছে স্বাগতিক দল। ফিলিপস আউট হয়েছেন ১ রানে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে কিউইরা তুলেছে ৩৫ রান।
মেহেদীর আঘাতে পড়লো দ্বিতীয় উইকেট
মামুলী লক্ষ্য পেলেও সেটা স্বস্তিতে তাড়া করতে পারছে না নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ ওভারে আবার মেহেদীর আঘাতে পড়েছে দ্বিতীয় উইকেট। তাতে শুরুতে স্বাগতিকদের ওপর চাপ তৈরি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। মেহেদীর বলে মেরে খেলতে গিয়ে শান্তকে ১ রানে ক্যাচ দিয়েছেন মিচেল।
সেইফার্টকে ফিরিয়ে মেহেদীর সাফল্য
১১১ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই বাংলাদেশের ওপর চড়াও হন কিউই ওপেনার ফিন অ্যালেন। তাতে প্রথম ওভারে জমা পড়ে ১২ রান। তবে অপরপ্রান্তে থাকা সেইফার্ট ছিলেন খোলসবন্দী। দ্বিতীয় ওভারে দারুণ ডেলিভারিতে তাকে স্টাম্পড করিয়েছেন শেখ মেহেদী। তাতে দ্বিতীয় ওভারে মিলেছে সাফল্য। সেইফার্ট সাজঘরে ফিরেছেন ১ রানে।
এই প্রথম নিউজিল্যান্ডে কোনও সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের। কিন্তু সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংটা হলো হতাশাজনক। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ১১০ রানেই সফরকারী দল গুটিয়ে গেছে। শুরু থেকেই বাংলাদেশ উইকেট হারাতে থাকে। সৌম্যর আউটের পর শান্তই কিছুটা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেছেন। সর্বোচ্চ ইনিংসটাও এসেছে তার কাছ থেকে। বাকিরা ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ব্যাটারদের দ্রুত আসা যাওয়ায় বরং নিজেরাই চাপে পড়েছে। সেই চাপ সামলাতে পারেনি কেউ। একটা সময় ১০০ রানের নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কা ছিল। সেটি হয়নি শেষ দিকে রিশাদ, তানভীররা কিছুক্ষণ ধরে খেলায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ১৯.২ ওভারে ১১০ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।
কিউইদের মধ্যে সফল বোলার ছিলেন বামহাতি স্পিনার ও অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। বাংলাদেশকে কাবু করতে ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাছাড়া অ্যাডাম মিলনে, টিম সাউদি ও বেন সিয়ার্স দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
শত রান ছাড়ানোর পর আউট তানভীর
৮৭ রানে অষ্টম উইকেট পতনের পর শত রানের মাঝেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। সেই জায়গায় স্কোরটা শত রান ছাড়িয়েছে তানভীর, রিশাদের ব্যাটিংয়ে। ১৮.২ ওভারে অবশ্য সাউদির বলে মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন তানভীর। ফেরার আগে ৭ বলে করেছেন ৮ রান।
শরিফুলের বিদায়ে পড়লো অষ্টম উইকেট
প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর লেজের দিকেও স্বস্তি দিতে পারেননি কেউ। সিয়ার্সের বলে মেরে খেলতে গিয়ে ৪ রানে ফিরেছেন শরিফুল। তার আউটে ৮৭ রানে অষ্টম উইকেট পড়েছে বাংলাদেশের।
স্যান্টনারের ওভারে আউট মেহেদী, শামীম
৫ উইকেট হারানোর চাপটা সামলাতে পারেননি শেখ মেহেদী, শামীম হোসেন। বরং চাপের কাছেই মাথা নত করেছেন তারা। স্যান্টনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে প্রলুব্ধ হয়ে খেলতে গিয়ে গ্লাভসবন্দি হয়েছেন ৪ রানে। পঞ্চম বলে সুইপ করতে গিয়ে শামীমও ক্যাচ তুলেছেন সাউদির হাতে। ফেরার আগে শামীম করেছেন ৯ রান।
হৃদয়ের আউটে আরও বিপদে বাংলাদেশ
৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এমন সময় আলসে ভঙ্গিতে খেলে দলের বিপদটা আরও বাড়িয়ে গেছেন তাওহীদ হৃদয়। স্যান্টনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল অলস ভঙ্গিতে খেলতে গেলে বল এজ হয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। তাতে ১৮ বলে ১৬ রানেই শেষ হয় হৃদয়ের ইনিংস। ছিল দুটি চার। হৃদয়ের বিদায়ে ৬৮ রানে পড়েছে পঞ্চম উইকেট।
আফিফের বিদায়ে আরও চাপে বাংলাদেশ
৪৫ রানে তিন উইকেট পতনে দ্রুত চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। নতুন নামা আফিফ সেই চাপ থেকে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি। বরং স্যান্টনারের বলে আউট হয়ে আরও চাপ বাড়িয়ে গেছেন। উইকেট থেকে বের হয়ে খেলতে গিয়েও ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি। বল এজ হয়ে প্যাডে লেগে উঠে যায় বাতাসে। সেটি লুফে নিতে ভুল হয়নি কিউই কিপারের। তাতে ১৪ রানে আউট হন আফিফ।
পাওয়ার প্লেতেই তিন উইকেট নেই বাংলাদেশের
শুরুতে নামলেও রয়ে সয়ে খেলছিলেন ওপেনার রনি তালুকদার। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। ১০ রানে তাকে এলবিডাব্লিউ করেছেন বেন সিয়ার্স। কিউই পেসারের ফুলার লেংথের বলে পুরোপুরি পরাস্ত হন রনি। তার বিদায়ে পাওয়ার প্লেতে পড়ে বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেট। স্কোরবোর্ডের জমা পড়ে ৪৫ রান।
আক্রমণাত্মক হলেও ইনিংস বড় হলো না শান্তর
সৌম্য প্রথম ওভারে আউট হলে নেমেই মেরে খেলতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। কিন্তু পঞ্চম ওভারে আগ্রাসী হতে দিয়েই ক্যাচ তুলে দেন তিনি। মিলনের লিংথ ডেলিভারিতে উইকেট ছেড়ে শান্ত খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রত্যাশা মতো শটটা সেটা হয়নি। বল চলে যায় অ্যালেনের হাতে। তাতে ১৫ বলে ৪ চারে ১৭ রানে আউট হন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
প্রথম ওভারেই আউট সৌম্য
প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাউদির ওভারে আগের বলে চার মেরে দারুণ সূচনা করেন সৌম্য সরকার। পরের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। অবশ্য সেজন্য দুর্ভাগ্য বলতে হবে। সাউদির সুইং করে ভেতরে ঢুকে পড়া বলে তিনি পরাস্ত হয়েছিলেন। বল প্যাডে লাগতেই নিউজিল্যান্ড আবেদন করলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সৌম্য রিভিউ নিলে আম্পায়ার্স কলে এলবিডাব্লিউ হন তিনি। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লেগ স্টাম্পের বাইরের অংশ ছুঁয়ে যেতে পারতো। অবশ্য সেটি আম্পায়ার্স কল না হলে তিনি রক্ষা পেতেন। ফেরার আগে সৌম করেছেন ৪ রান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
ইতিহাস গড়ার হাতছানি নিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনও সিরিজ জয়ের সুযোগ। ওয়ানডে সিরিজটি হারলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম ম্যাচ জিতেই সেই মঞ্চটা তৈরি করেছে সফরকারীরা। অবশ্য বৃষ্টিতে ভেসে গেছে দ্বিতীয় ম্যাচ। তৃতীয় ম্যাচেও চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। সেই শঙ্কা মাথায় নিয়ে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নামছে সফরকারীরা। শুরুতে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
একাদশে কারা
বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন এসেছে একটি। বাংলাদেশ তানজিম হাসান সাকিবকে বাইরে রেখে একাদশে নিয়েছে বামহাতি তানভীর ইসলামকে। তাতে শেখ মেহেদী ও রিশাদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ স্পিনার বাড়লো আরও একজন। লিটন দাস গত ম্যচের মতো এই ম্যাচেও হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন। কিউইরা অবশ্য গত ম্যাচের মতো একই একাদশ নিয়ে খেলছে।
বাংলাদেশ একাদশ: রনি তালুকদার, শামিম হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, তাওহীদ হৃদয়, আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদী, রিশাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, তানভীর ইসলাম।
নিউজিল্যান্ড একাদশ: ফিন অ্যালেন, টিম সেইফার্ম (উইকেটরক্ষক), ড্যারিল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস, মার্ক চ্যাপম্যান, জেমস নিশাম, মিচেল স্যান্টনার (অধিনায়ক), অ্যাডাম মিলনে, টিম সাউদি, ইস সোধি ও বেন সিয়ার্স।