কান্না আর আর্তনাদে ভারী শাপেকোর বাতাস

এই যন্ত্রণা সহ্য করার মতো নয়, সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে শাপেকোয়েনসে সমর্থকদেরব্রাজিলের সান্তা কাতারিনা প্রদেশের ছোট্ট এক শহর, নাম শাপেকো। কৃষি-শিল্পের রাজধানী হিসেবে ডাকা হয় জায়গাটিকে। মাত্র ২ লাখ মানুষের এই শহরকে এক মোহনায় মিলিয়ে দেয় শাপেকোয়েনসে নামের এক ফুটবল দল। কৃষির সঙ্গে ফুটবলের শহর হিসেবেও তাই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পথে ছিল শাপেকো।

এই ফুটবল দিয়েই আগাম উৎসবের সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল শহরটির মানুষ। লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদার টুর্নামেন্ট কোপা সুদামেরিকানার ফাইনাল জয় থেকে মাত্র দু পা দূরত্বে ছিল যে তারা। উৎসবের অপেক্ষায় থাকা সেই শাপেকো এখন কান্নার নগরী। বিমান দুর্ঘটনা স্বপ্নের রাজ্যে থাবা বসিয়ে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে শাপেকোয়েনসে ফুটবল দলকে। এত বড় আঘাত সইবে কী করে ব্রাজিলের ছোট্ট শহরটির মানুষ? তাদের কান্না আর আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে শাপেকোর বাতাস।

শাপেকোর রাস্তায় শোক মিছিলসপ্তাহ খানেক আগে আনন্দ-উৎসবে মেতেছিল শাপেকোর ফুটবলপ্রেমিরা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। আর্জেন্টাইন ক্লাব স্যান লরেঞ্জোকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যোগ করেছিল শাপেকোয়েনসে কোপা সুদামেরিকানার ফাইনালে উঠে। বুধবার আবারও শহরের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হলেন শাপেকোর মানুষ, তবে এবার চোখের জল নিয়ে। হেঁটে গেলেন তারা শাপেকোয়েনসের স্টেডিয়ামে, সেখানে জড়ো হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তাদের আর্তনাদ আর চিৎকারে ভারি হয়ে উঠল বাতাস। কে, কাকে সান্তনা দেবেন; তারা সবাই যে ভাষাহীন। কারও চোখে নীরবে ঝরছে পানি, কেউ আবার বুকের কষ্ট চেপে ধরতে না পেরে কেঁদে উঠছেন হাউমাউ করে। প্রিয় দল মুহূর্তের এক ঝড়ে এভাবে এলোমেলো হয়ে যাবে, এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা।

গোটা ব্রাজিলের চিত্রই যেন এই ছবিকলম্বিয়ায় বিধ্বস্ত হওয়া বিমানে ছিল ৮১ যাত্রী। মারা যাওয়া ৭৬ জনের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক ও বিমান ক্রু ছাড়া সবাই শাপেকোয়েনসে ফুটবল দলের সদস্য। নির্মম ট্র্যাজেডির শিকার এই ক্লাবের খেলোয়াড়-কোচ-কর্মকর্তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা চলছে গোটা বিশ্বে। অ্যারেনা কোন্দায় জড়ো হওয়া সমর্থকরাও করলেন প্রার্থনা। যেখানে উপস্থিত ছিলেন দানিয়েল মারলিন নামের এক ভক্ত। প্রিয় দলের এমন করুণ পরিণতি কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি। ঠিকঠাক কথাই বলতে পারছিলেন এই ভক্ত, ‘কথা বলাটা সত্যি কঠিন। এখানে আমরা সবাই আসতাম খেলা দেখছে, ঠিক এই জায়গাতে বসেই আমরা উপভোগ করতাম খেলা। আজ এখানে আমরা আবার এসেছি, তবে...।’ শেষ করতে পারলেন না কথাটা, নিজেকে সামলে পরে বললেন, ‘জানি এই সপ্তাহান্তে কিংবা পরের সপ্তাহে আমাদের লড়াকু দলটাকে আর দেখা যাবে এই স্টেডিয়ামে।’

সত্যি অ্যারেনা কোন্দায় আর দেখা যাবে না শাপেকোয়েনসের বীরদের। থাকবেন তারা এখন ভক্ত-সমর্থকদের হৃদয়ের গভীরে।

/কেআর/