ভালো ফুটবলারের সংকট কেন?

সঠিক পরিচর্যার অভাবে ভালো মানের ফুটবলার বেরিয়ে আসছে না। ছবি-বাফুফেঘরোয়া ফুটবলের মৌসুম শেষ হলো মাত্র কয়েক দিন আগে। নতুন মৌসুম শুরু হতে অনেক দেরি। অথচ এখনই দল গোছাতে ব্যস্ত কয়েকটি দল। বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে নিয়ে টানাটানি চলছে। পারফরম্যান্স যেমনই হোক, তাদের ভীষণ চাহিদা।

কয়েক মৌসুম ধরেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলে, হু হু করে পারিশ্রমিক বেড়ে যাচ্ছে খেলোয়াড়দের। অথচ লিগে বড় দলের ম্যাচে গ্যালারি ফাঁকা থাকে! ‘দামি’ ফুটবলারদের খেলা দেখার আগ্রহই নেই কারও। মানসম্পন্ন ফুটবলারের সংকটের কারণে হয়তো এমন অবস্থা।

আশির দশকের তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন চুন্নু এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বললেন, ‘কম্পিটিশন না থাকলে কোয়ালিটি ফুটবলারও থাকবে না। বাংলাদেশে তেমন কোয়ালিটি ফুটবলার নেই। জেলা, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাতীয় পর্যায়ে তো খেলাই হচ্ছে না।’

ফুটবলের দুরবস্থার জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে পরোক্ষে দায়ী করে চুন্নুর মন্তব্য, ‘ঢাকার মধ্যেই শুধু খেলা হচ্ছে। মফস্বলে তেমন লিগ হয় না, যা-ও হয় নামকাওয়াস্তে। আমার জেলা নারায়ণগঞ্জে কয়েক বছর ধরে লিগ হচ্ছে না। ক্লাবগুলোর অবস্থা ভালো নয়, ফেডারেশন থেকে সাহায্য নেই। স্পন্সরদের আগ্রহ কমে গেছে। বাফুফে দেশের ফুটবলের অভিভাবক, তবু কেন এমন দুর্দশা? তাদের এর উত্তর খুঁজে বের করা উচিত।’

ঘরোয়া ফুটবলের বিখ্যাত কোচ মারুফুল হক অবশ্য অন্যভাবে দেখছেন বিষয়টি। তার মতে, ‘ফুটবলারের তো সংকট নেই। ট্রায়াল দিলে ফুটবলারের অভাব হয় না, তবে কোয়ালিটি ফুটবলারের সংকট। কোয়ালিটি ফুটবলার তো গাছে ধরে না, তৈরি করে নিতে হয়। তৃনমূলে কাজ করতে হবে, ছেলেদের ভালো কোচিং করাতে হবে।  ধরেন ময়মনসিংহের একটি অঞ্চলে আট থেকে ১২ বছর বয়সী ছেলেদের যদি দীর্ঘমেয়াদে কোচিং করানো হয়, তাহলে কোয়ালিটি ফুটবলার বেরিয়ে আসতে বাধ্য।’

সম্প্রতি স্বাধীনতা কাপে আরামবাগকে শিরোপা এনে দেওয়া ‍মারুফ তৃণমূল পর্যায়ে জোর দেওয়ার পক্ষে,  ‘একাডেমি তেমন জরুরি নয়, বরং ছেলেদের স্কুলিং দরকার। একটা আট বছরের ছেলে সপ্তাহে তিনদিন অনুশীলন করবে। এভাবে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত কোচিং করা জরুরি। ছেলেরা ফুটবলের আধুনিক শিক্ষা পেলে বিভিন্ন আসর বা ট্রায়ালের মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাবে, আর তখনই কোয়ালিটি ফুটবলার পাওয়া যাবে। আসলে শর্টকাটে বড়লোক হওয়া যায়, কিন্তু ভালো ফুটবলার হওয়া যায় না।’

সাবেক তারকা ফুটবলার আরমান মিয়া বললেন, ‘আমাদের সময় ঈশ্বর প্রদত্ত সৃষ্টিশীল খেলোয়াড় দেখা যেতো। এখন সেটা নেই বললেই চলে। এখন দুনিয়া বদলে গেছে, ফুটবলার তৈরি করতে হয়। একাডেমি বলুন আর যা-ই বলুন, ছোটবেলা থেকে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে না পারলে কোয়ালিটি ফুটবলার বেরিয়ে আসবে না।’