হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার, হলেন ফুটবলার, অতঃপর...

শৈশব থেকে ঝোঁক ছিল ক্রিকেটে। শেরপুরের জি কে পাইলট প্রাথমিক স্কুলের হয়ে মাঠ মাতিয়ে বেড়াতেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতায় পেস বোলিংটা বেশ টানতো আতিকুজ্জামানকে।

২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে একদিন জেলা শহরের স্টেডিয়ামে স্থানীয় স্কুল ক্রিকেটের ফাইনাল দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানকার জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আবার সেদিন জেএফএ কাপের জন্য স্থানীয়দের মেডিক্যাল পরীক্ষা চলছিল। কৌতূহলবশত আতিকও অনেকটা অনুনয়-বিনয়ের পর পরীক্ষার লাইনে দাঁড়িয়ে যান। শেরপুরের দলে বাছাইও হয়ে গেলেন। সেই যে ক্রিকেট-স্বপ্ন বিলীন করে ফুটবলে নাম লেখালেন। এরপর তো ইতিহাস! জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের সিঁড়ি ভেঙে এখন ২২ বছর বয়সী ডিফেন্ডার জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে।

কিরগিজস্তানে তিন জাতির ফুটবলে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই প্রতিযোগিতার জন্য জেমি ডের ঘোষিত ২৩ সদস্যের দলে আছেন আতিক। যদিও একাদশে জায়গা করে নেওয়াটা চ্যালেঞ্জের মোহামেডান ডিফেন্ডারের জন্য। জাতীয় দলে তার পজিশনে আছেন অভিজ্ঞ তপু বর্মন, রিয়াদুল হাসান রাফি, মেহেদী হাসান, বিশ্বনাথ ঘোষ ও কাজী তারিক রায়হান।

চ্যালেঞ্জটা অবশ্য নিচ্ছেন আতিক। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘কিরগিজস্তানে খেলার সুযোগ পেলে নিজের কাছেই ভালো লাগবে। তবে জাতীয় দলের এই পজিশনে যারা খেলছে বর্তমানে, তাদের অনেকে অনেক অভিজ্ঞ। সেরা একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে লড়াই করতে পারাটাও আমার জন্য অনেক ভালো হবে। অনেক কিছু শিখতে পারবো। যেটা সামনের দিনগুলোতে কাজে লাগবে।’

২০১৫ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে টাইব্রেকারে গোলও আছে এই আতিকের। মাঝে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ২০১৭ সালে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ দিয়ে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক তার। দুই বছর পর পা রাখেন ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডানের আঙিনায়। শন লেনের অধীনে নিজেকে মেলে ধরছেন নিয়মিত।

মোহামেডান ডিফেন্ডার আতিকুজ্জামানক্লাব সতীর্থ অনেকে জাতীয় দলে আগেই সুযোগ পেলেও আতিকের ভাগ্য খুলতে সময় লেগেছে। বয়সভিত্তিক দলগুলোতে খেললেও এবারই প্রথম জেমি ডের গুড বুকে জায়গা হয়েছে। যদিও এ নিয়ে আক্ষেপ নেই শেরপুরের ফুটবলারের, ‘আমি ধৈর্য ধরে আছি। জেএফএ কাপ খেলার পর নিজের এলাকায় একসময় অনুশীলনের জন্য নিরুপায় হয়ে এক কোচের কাছ থেকে বলও চুরি করেছিলাম। সেই কথা এখনও মনে পড়ে। আসলে চেষ্টা করে যাচ্ছি নিজেকে প্রমাণের। জানতাম কষ্ট করলে ফল পাবোই। এখন সামনের দিকে আরও ভালো করে এগিয়ে যেতে হবে।’

জাতীয় দলে সুযোগ প্রাপ্তির খবর বাড়িতে আগেই পৌঁছে গেছে সবাই অনেক খুশি। তবে প্রয়াত বাবাকে অনুভব করেন আতিক এখনও, ‘২০১৩ সালে স্ট্রোকে বাবা মারা যান। দুই ভাই ও মাকে নিয়ে সংসার। বাবা বেঁচে থাকলে আজ অনেক খুশি হতেন। তবে ফুটবল খেলে সংসারের হাল ধরেছি। এটা আমার কাছে আনন্দের।’

তবে ফুটবলের জন্য একবার বিমানবাহিনীতে মেডিক্যাল পরীক্ষায় অংশ নেননি। কারণ ফুটবলেই তার পূর্ণ মনোযোগ। ভালোবাসার জায়গাও। আর সেই ভালোবাসার পথে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের পথে আতিকের এগিয়ে চলা।