‘কখন টিকটক করতে হবে তা সবার বোঝা উচিত’

চীন থেকে এসে আঁখি খাতুন বিয়ের পিঁড়িতে বসার অপেক্ষায়। শুক্রবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আজ বুধবার তার ভাই গাঁটছড়া বেঁধেছেন। তাই ২০২২ সাফ জয়ী ডিফেন্ডার দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাসায় উৎসবের রং লেগেছে। তবে এরই মাঝে আঁখির মন আবার কিছুটা বিষন্ন। একসময়ের জাতীয় দলের সতীর্থদের অনেকেই কোচ পিটার বাটলারকে বয়কটের আন্দোলনে রয়েছেন। এ নিয়ে চলছে নানান মাধ্যমে চাপান-উতোর খেলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব দেখে আঁখি নিজের হতাশা লুকাতে পারেননি। দুইপক্ষকেই ছাড় দিয়ে সমাধানে এসে আবারও আগের মতো সুখী একটি পরিবার দেখতে চাওয়ার আকুতি দীর্ঘদেহী সাবেক এই ডিফেন্ডারের।

২০২২ সালে সাফ জেতার পর জাতীয় দলের খেলা ছেড়ে চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন আঁখি। সেখানে ছিলেন অনেক দিন। এবার দেশে ফিরে শুভ কাজ সম্পন্ন করার অপেক্ষায়। ব্যস্ততার ফাঁকে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে নিজের হতাশা লুকাননি তিনি, ’আমি আসলে বর্তমান দলে কী হচ্ছে তার তেমন খোঁজ খবর নেই না। যেহেতু আমি দলে নেই। তাই  সতীর্থদের সঙ্গে কথা বার্তাও সেভাবে হয় না। তবে সামাজিক যোগাযোগ ও মিডিয়ার মাধ্যমে দেখলাম পরিস্থিতি কতটা খারাপ। অনুশীলন বয়কট চলছে। আসলে আমার কাছে মনে হয় এসব ঠিক না। অনুশীলন চলবে। খেলা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চলবে। এটাই আমার চাওয়া। আমি যখন দলে ছিলাম সেভাবেই আমাদের লক্ষ্য ছিল।’

সাবিনা-মাসুরাদের নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত নেপালের সাফ ফুটবল থেকে। সেখানে টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটান তারা। কোচ অভিযোগ দিয়েছিলেন। যা এবার নতুন করে কোচের সঙ্গে চুক্তি করার পর বিদ্রোহ-বয়কট শুরু। আঁখি বলছিলেন, 'টিকটক-ইনস্টাগ্রাম তো মেসি-রোনালদোরাও ব্যবহার করে থাকে। আমরা অনেকেই করি। তবে কখন টিকটক করতে হবে তা সবার বোঝা উচিত। অন্তত অনুশীলনের আগে বা পরে করা উচিত না। সব নিয়ম তো মানতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন সমালোচনা  না হয়। কেউ কিছু বলতে না পারে।’

ইংলিশ কোচ বাটলার যেভাবে ফুটবলারদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন তা নিয়েও সমস্যা দেখছেন আঁখি, 'আমাদের সবার কথা বুঝতে হবে। মেয়েরা কী চাইছেন। কার কী অবস্থা। তা অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ না দেওয়া ভালো। কোচ আর একটু নমনীয় হয়ে সবার সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করলেই পারতেন। তিনিও হার্ডলাইনে চলে গেছেন!’

নারী ফুটবলে বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াতে সেরা হয়েছে। টানা দুবার। দেশের মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়েছে। এখন এই মুহূর্তে যেন নেতিবাচক কিছু না হয় সেই আশায় আছেন আঁখি, 'আমাদের ফুটবলারদের সবাই সমীহ করে। ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখে। আমাদের ছাদখোলা সংবর্ধনা দিয়েছে সবাই। আমাদের সবকিছু মগজে রাখতে হবে। তাই আমি চাই সবাই যেন পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়। দেশের কথা ভাবে। মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভাবে। সর্বোপরি নিজেদের কথা ভাবে। আমাদের নারী ফুটবল যে জায়গায় আছে সেখান থেকে আমরা এক বিন্দু নিচে নামতে চাই না। সবাই মিলে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে পারলেই শান্তি।’

এই বলেই আঁখি তার আগে নিজের ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তবে  মনের আড়ালে বাফুফে ভবনে রেখে আসা সতীর্থ ও ফুটবল নিয়েই ভাবনা তাকে উদ্বেলিত করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।