ঋতুপর্ণা ইউ বিউটি!

ঋতুপর্ণার অবয়ব থেকে হাসি যেন সরছিল না। জর্ডানের রেফারির শেষ বাঁশি  বেজে উঠতেই শুধু ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের নয়, মিয়ানমারের ইয়াংগুনের থুয়ুন্নু স্টেডিয়ামে পুরো বাংলাদেশ দলে খুশির ফোয়ারা। এই প্রথম নারীদের এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকা মিয়ানমারকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২-১ গোলে জেতা ম্যাচে স্পটলাইট শুধু ঋতুপর্ণার দিকে। অসাধারণ দুটি গোল করে দলকে জয়ের ভেলায় পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম চরিত্র। ইয়াংগুনের মাঠে এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর তাই বলতে হচ্ছে- ঋতুপর্ণা ইউ বিউটি!

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা টুর্নামেন্ট সাফে সেরা খেলোয়াড় হয়ে ঋতুপর্ণা নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন। ২০২২-এর পর ২০২৪-এ এসে সাফ জেতার পিছনে রাঙামাটির মেয়ের অবদান অনস্বীকার্য। ধারাবাহিকতায় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে রাখছেন দারুণ সব কীর্তি।

অথচ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে খেলা নিয়ে বিদ্রোহ করে মাঝে কিছু দিন দলের বাইরে থাকতে হয়েছে। ঋতুপর্ণার না থাকাটা তখন দলে বেশ অনুভূত হয়েছিল। জটিলতা নিরসনের পর ঋতুপর্ণা ও ৫ ফুটবলার দলে যোগ দেওয়ায় অন্যরকম এক বাংলাদেশকে দেখা গেছে।

বাহরাইনকে প্রথম ম্যাচে ৭-০ গোলে হারানো ম্যাচে ঋতুপর্ণার ছিল একটি লক্ষ্যভেদ। আজ সবচেয়ে মূল্যবান ম্যাচে তো নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন উইংগার। বাঁ প্রান্তে বল পেলে তো কথাই নেই। আক্রমণও কম হয়নি এই প্রান্ত থেকে। তেড়েফুঁড়ে হোক আর ড্রিবলিং বা ডজ  দিয়ে, ঋতুপর্ণাকে আটকানো কঠিন ছিল। মিয়ানমারের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারদের প্রায়ই খাবি খেতে হয়েছে। অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য ছিলেন পার্বত্য অঞ্চল থেকে উঠে আসা ফুটবলার। নিজের ফুটবল মুন্সিয়ানায় সবাইকে আবার মুগ্ধ করেছেন।

ঋতুপর্ণার উদযাপন

১৮ ও ৭১ মিনিটে গোল দুটি ছিল দারুণ। এমনিতে ঋতুপর্ণা সেটপিসে দারুণ। প্রথম গোলটি যেভাবে মানববর্ম থেকে ফেরার পর বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের মাপা শটে সবার মাঝ দিয়ে গোলকিপারকে হারিয়েছেন, তা ছিল দেখার মতোই। আর পরেরটি তো তার ট্রেডমার্ক, সরাসরি বল ভাসিয়ে দেখে-শুনে গোলকিপারের ওপর দিয়ে জড়িয়ে দেন জালে।

এমন দুটি গোলের পর স্বাগতিকদের দর্শকদের মন খারাপ হতে পারে। তার ওপর দল হেরেছে। তবে ঋতুপর্ণার দুটি দারুণ গোলের মুহূর্তের তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ার কিঞ্চিত আ্নন্দও আছে।

শুরুতে বলছিলাম ঋতুপর্ণা চাকমার চওড়া হাসি যেন বন্ধ হচ্ছিল না। ম্যাচ শেষে ক্যামেরার সামনে হাস্যোজ্জ্বল ঋতু বলছিলেন, ‘প্রথমেই বলবো, আমরা দেশ থেকে লক্ষ্য নিয়ে এসেছি ম্যাচ বাই ম্যাচ জেতার। আমরা আমাদের.. যার যার সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেটাই পেরেছি। সমর্থকদের বলবো, আমাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তাদের অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাদের যেভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আগামীতেও যেন আরও সমর্থন দিয়ে যায়।’

৭ বছর আগে ঠিক ইয়াংগুনের এই মাঠেই ৫ গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ দল যে এবার বদলে গেছে ঋতুপর্ণাদের পারফরম্যান্সে। প্রতিশোধের সঙ্গে নতুন ইতিহাসও রচিত হয়েছে। এখন মূল পর্বে এক পা বাকি। তাই দৃষ্টিনন্দন পারফরম্যান্সের কারণে আবারও বলতে হচ্ছে- ঋতুপর্ণা ইউ বিউটি!