১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমস হকির ফাইনালে পাকিস্তান একই ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল স্বাগতিক ভারতকে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ওই হারের ‘মধুর প্রতিশোধ’ ভারতের হকি দল এমন দিনে নিলো, যেদিন ক্রিকেট দল হারের বেদনায় নীল।
দিল্লি এশিয়াডের দুই বছর আগে অলিম্পিক হকিতে শেষবার স্বর্ণ জিতেছিল ভারত। কিন্তু মস্কোর সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারে নি তারা। বরং দিল্লিতে পাকিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর ভারতে হকির দুর্দিন শুরু। তরুণরা হকির প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকে, কমতে থাকে হকির জনপ্রিয়তা।
অন্যদিকে ১৯৮৩ সালে ইংল্যান্ডে কপিল দেবের নেতৃত্বে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ভারতে। পঁচাশিতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে ‘মিনি বিশ্বকাপ’ নামে পরিচিত বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ জয়, শচীন টেন্ডুলকারের আবির্ভাব, আইপিএল উন্মাদনা মিলিয়ে ভারতে এখন ক্রিকেট ধর্মের মতো। হকি ভারতের জাতীয় খেলা হলেও জনপ্রিয়তায় ক্রিকেট অনেক অনেক এগিয়ে।
ভারতের বিশিষ্ট সমাজতাত্ত্বিক ও ক্রিকেট অনুরাগী ড. আশিস নন্দী চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ব্যর্থতার পেছনে একটা অন্য অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, “১৮ জুনের লন্ডন ক্রিকেট-অনুরাগের ছবিটা হয়তো বদলাতে পারবে না, কিন্তু একটা জোর ধাক্কা নিশ্চয়ই দেবে। ক্রিকেটই যে সব নয়, দেশের ক্রিকেট তারকারা যে ‘ঈশ্বর’ নন, রক্তমাংসের মানুষ–দুটো ম্যাচের রেজাল্ট দেখে মানুষ এটুকু অন্তত বুঝতে শিখবে। এই উগ্র ভারত-পাকিস্তান রক্ত-উন্মত্ততার মধ্যে সেটুকুও বা কম কী?”
ভারতীয় হকির সাবেক তারকা ও অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ী ভেস পেজ এমন ঘটনাকে হকির জন্য ‘শাপে বর’ হিসেবেই দেখছেন। মুম্বাই থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে পুরো ভারত যে ক্রিকেট ছাড়া বাকি সব খেলা ভুলে যেতে শুরু করেছে, এবার ধীরে ধীরে সেই অবস্থা পাল্টাতে পারে। হাজার হোক হকি এখনও ভারতের জাতীয় খেলা। কিছুটা সম্মান বা মর্যাদা তো হকি খেলোয়াড়দেরও পাওনা, তাই না?’
টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজের বাবা নিজেও খুব ভাল করে জানেন, তার ছেলে ডেভিস কাপে ভারতকে একের পর এক অবিশ্বাস্য জয় উপহার দিলেও ভারতীয়রা লিয়েন্ডারকে কখনোই টেন্ডুলকার বা বিরাট কোহলির আসনে বসাতে পারে নি।
সেজন্যই ওভালের ফাইনালে ‘টিম ইন্ডিয়া’ বিশাল ব্যবধানে হেরে গেলেও ভারতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরবে না বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষক সাম্য দাশগুপ্ত। বেঙ্গালুরু থেকে উইজডেন ইন্ডিয়া’র সিনিয়র এডিটর বলছিলেন, ‘আমার ধারণা, ভারতের ক্রিকেট দল আবার কোনও বড় জয় পেলে লোকে কোহলি-ধাওয়ান-বুমরাদের মাথায় তুলে নাচানাচি করবে। রবিবার ওভালে কী ঘটেছিল, সেটা ভুলে যেতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। হলোই বা সেটা পাকিস্তানের বিপক্ষে হার!’
অতীতের উদাহরণ টেনে সাম্য দাশগুপ্তর অভিমত, ‘কয়েক বছর আগে ভারতীয় দল ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টানা আটটা টেস্ট হেরেছিল। আর সেটা ঘটেছিল ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার ঠিক পরেই। কিন্তু সেই লজ্জাজনক হারের কথা কে আর মনে রেখেছে?’
এএআর/