পরিবারের বাধা জয় করে শিরিন আজ দ্রুততম মানবী

শিরিন আক্তারবাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের এখন দৃপ্ত পদচারণা। শুধু খেলার মাঠে নয়, সংগঠক হিসেবেও দেশের জন্য অনেক অবদান রাখছেন নারীরা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাদেরই কয়েকজনকে নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ আয়োজনে থাকছে দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারের কথা।

ছেলেবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ। প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হন ২০০৭ সালে, সপ্তম শ্রেণিতে। একের পর এক বাধা পেরিয়ে ২০১৪ সালে দেশের দ্রুততম মানবীর খেতাব জিতে নেন শিরিন আক্তার। আজও সম্মানটা তার অধিকারে।

অথচ একসময় পরিস্থিতি ছিল প্রতিকূল। কৃষক শেখ আব্দুল মজিদ মেয়ের ঘরের বাইরে যাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারেননি। তার ছিল একটাই চিন্তা, মেয়ে খেলাধুলা করলে পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়স্বজন কী বলবে। সাতক্ষীরা থেকে উঠে আসা সেই শিরিন সব বাধা ছিন্ন করে আজ দ্রুততম মানবী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী শিরিনকে অনেকেই চেনে এখন। তিনি জানালেন কীভাবে পরিবারের বাধা পেরিয়ে অ্যাথলেটিকসে জড়িয়ে পড়লেন, ‘প্রাইমারি স্কুলে খেলাধুলা করতাম। বিকেএসপির সার্কুলার দেখে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকে যাই। কিন্তু বাসা থেকে কেউ রাজি হয়নি। বাবা তো কিছুতেই ভর্তি করাবেন না বিকেএসপিতে। তার শুধু চিন্তা কে কী বলবে। মেয়ে সাতক্ষীরার বাইরে যাবে চিন্তা করে গ্রামেই পড়তে বলতেন। আমার জেদের কারণে বাবাই শেষ পর্যন্ত বিকেএসপিতে ভর্তি করান।’

তবে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি শুরুতে গ্রামের মানুষ ভালোভাবে নিতে পারেনি। শিরিন বললেন, ‘প্রথমে কেউ এটা পছন্দ করতো না। তাছাড়া আমার মামারা হাজি। এমন পরিবেশ থেকে খেলাধুলায় আসা সত্যিই কঠিন।’ অথচ বিকেএসপিই শিরিনের জীবন পাল্টে দিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দ্রুততম বালিকা ও কিশোরী হওয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।  

এখনও অ্যাথলেটিকসে মেয়েদের স্বল্প উপস্থিতি শিরিনকে হতাশ করে। তার কথা, ‘অ্যাথলেটিকসে আরও অনেক মেয়ের আসা উচিত। স্পন্সর ও মিডিয়ার সহযোগিতা দরকার। আমি এসব বিষয়ের অভাব অনুভব করি। নিজেকে নিয়ে আমি গর্বিত। নিজের আয়ে চলতে পারছি, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি। খেলাধুলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে খারাপ কাজ থেকেও দূরে থাকা যায়।’