কেন? আল আমিনের বাড়িকে ছোটখাটো ক্রীড়াঙ্গন বললে ভুল হবে না। ছোট চাচা শরিফুল ইসলামের হাত ধরে তারা হয়ে উঠেছে ‘ক্রীড়া পরিবার’। বাড়ির নামকরণটাও যথার্থ- ‘মা স্পোর্টস ভিলা’। এবারের এসএ গেমসে এই বাড়ি থেকে আল আমিন একা যাননি, উশু ইভেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন ছোট ভাই মিলন আলীও।
আল আমিনের বাবা বাবর আলীর চার ভাই। সবার ছোট শরিফুলের হাত ধরেই সাফল্যের যাত্রা শুরু এই সোনা জয়ীর। জাতীয় উশু প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা শরিফুলের প্রচেষ্টায় উশু ও কারাতে মিলিয়ে এই পরিবারের ছয়জন চাকরি করছেন সেনাবাহিনীতে।
মঙ্গলবার সকালে আল আমিন যখন সোনা জেতেন, তখন মাঠে কাজে ব্যস্ত ছিলেন বাবা বাবর আলী। বাড়ি ফিরতেই শোনেন সুসংবাদ। সেই সময়ের অনুভূতি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তিনি ভাগাভাগি করেছেন এভাবে, “বাড়ি ফিরতেই সবাই বলে উঠলো, ‘আমাদের নয়ন ভাই (আল আমিনের ডাক নাম) গোল্ড জিতেছে।’ এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। যার রক্ত-মাংসে খেলাধুলা মিশে গেছে, সেই দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। এর চেয়ে বড় খবর আর কী হতে পারে।”
আনন্দের সঙ্গে আক্ষেপও মিশে থাকলো বাবর আলীর কণ্ঠে, ‘রাজশাহীর ক্রীড়াঙ্গনের কেউ কোনও খোঁজ-খবর কিংবা আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য আসেনি, এমনকি ফোনও দেয়নি।’
বড় ছেলেকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই মা শরিফার, ‘আমি গর্বিত, আমার ছেলে এলাকায় যেমন সবাইকে সম্মান করে, ঠিক সেভাবেই সোনার পদক পেয়ে নেপালে দেশের পতাকা উচুঁ করে ধরেছে। মা হিসেবে এমন সন্তানকে গর্বে ধারণ করে সত্যি আমি গর্বিত ও আনন্দিত।’
যার হাত ধরে শুরু হয়েছিল আল আমিনের পথচলা, সেই শরিফুলও ভাতিজার সাফল্যে গর্বিত। এই জাতীয় উশু প্রশিক্ষকের বক্তব্য, ‘ও ছোট থেকেই খুব পরিশ্রমী ও জেদি ছিল। তাই সাফল্য পেতে ঝুঁকি নিতে কখনও পিছ পা হতো না। খুব ভালো লাগছে। নেপালে পদক পাওয়ার পর জাতীয় সঙ্গীত বেজেছে ও লাল-সবুজের পতাকা উঠেছে— একজন ওস্তাদ হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে।’
এরপর শোনালেন ক্রীড়া পরিবার হয়ে ওঠার গল্প, ‘ছোট থেকেই আমি আত্মরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট পছন্দ করতাম। একসময় আমার দেখাদেখি ভাতিজা-ভাতিজিরাও ট্রেনিং করা শুরু করলো। কিন্তু বড় ভাইদের দ্বিমত ছিল। এগুলো শিখে কী হবে- এই ধরনের প্রশ্ন তাদের মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। কিন্তু যখন তারা দেখলো খেলার মাধ্যমে সবাই চাকরি পাচ্ছে, তখন থেকে তারাও উৎসাহ দিতে থাকতো। এভাবেই আমাদের ক্রীড়া পরিবার গড়ে ওঠে।’