‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই, কী বলবো জানি না’

ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে নিজের ইভেন্টে একের পর এক সাফল্য বয়ে এনেছেন শেরপুর থেকে উঠে আসা জহির রায়হান। শুধু দেশেই ২০০ কিংবা ৪০০ মিটারে সোনার পদক জিতেছেন এমন নয়। এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাফল্য পেয়েছেন। ইরানে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটার দৌড়ে রুপার পদক জিতে সবাইকে চমকেও দিয়েছেন ২২ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট। চমকে দেওয়ার পর চারদিক থেকে অভিনন্দন-বৃষ্টিতে সিক্ত হচ্ছেন। রবিবার গভীর রাতে তেহরানের হোটেল থেকে ক্লান্ত শরীরে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে নিজের অনুভূতিসহ সেখানকার সাফল্য-অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন—

প্রশ্ন: প্রথমবারের মতো পদক জিতেছেন। নিশ্চয়ই এই ভালোলাগা অন্যরকম...

জহির রায়হান: তা তো অবশ্যই। এতদিন দেশেই শুধু পদক জিতেছি। অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক কোনও মিটে পদক জেতার, দেশের মানুষকে আনন্দে ভাসাবো-মুখ উজ্জ্বল করবো। অবশেষ তা করতে পেরে আমি অনেক খুশি।

প্রশ্ন: পদক জেতার আগে আত্মবিশ্বাস কেমন ছিল?

জহির রায়হান: ২০১৭ সালে নাইরোবিতে এশিয়ান যুব অ্যাথলেটিকসে সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এরপর থেকে বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করি। এবার আত্মবিশ্বাসী ছিলাম ভালো কিছু একটা হবে। সেই আশা নিয়ে মাঠে নেমে আল্লাহর অশেষ রহমতে পদক জিততে পেরেছি। সবার ভালোবাসায় আজ এই পর্যন্ত আসা। তেহরানে আমি সর্বোচ্চটা দিয়েছি।

 

‘আমার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার। এটা অনেক দিনের ইচ্ছা, কী বলবো তা এখনও জানি না। তবে অ্যাথলেটিকস এবং নিজের কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো। করতে পারলে অনেক খুশি হবো, মনের ইচ্ছা পূরণ হবে। তাছাড়া উনি তো ক্রীড়াবান্ধব।’

 

প্রশ্ন: আর একটু হলে তো সোনা জিতে চমকটা আরও বেশি দেওয়ার ‍সুযোগ ছিল…

জহির রায়হান: আমি চেষ্টা করেছি। শেষ দিকে এসে কিছুটা পিছিয়ে পড়ি। তবে যা হয়েছে আমি সন্তুষ্ট। এ নিয়ে কোনও আফসোস নেই। সোনা জয়ের স্বপ্ন সবার মধ্যে থাকে, সেটা হয়নি। যা করতে পেরেছি তা নিয়ে উচ্ছ্বাস কম নয়।

প্রশ্ন: এখন তো প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেলো?

জহির রায়হান: এটাই স্বাভাবিক, সামনের দিকে বড় বড় আসর রয়েছে। এই যেমন এসএ গেমসসহ অনেক চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে ভালো কিছু করার ইচ্ছা আছে। যদি অনুশীলনসহ অন্য সুবিধাদি ঠিকমতো পাওয়া যায়, তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব। এটা আমার বিশ্বাস।

প্রশ্ন: একটা বিব্রতকর প্রশ্ন করতে হচ্ছে। ২০২১ টোকিও অলিম্পিক খেলে আসার পর আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় বয়ে যায়। তখন তো অ্যাথলেটিকস থেকেও অনেক দূরে থাকতে হয়েছিল। সেখান থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন?

জহির রায়হান: পেছনে আর তাকাতে চাই না। আর ওই বিষয়ে কিছু বলতেও চাই না, এখন সবই অতীত। সবকিছুই ভুলে যেতে চাই। সেসব কাটিয়ে আমি জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েছি দুইবার। জাতীয় রেকর্ড গড়েছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো টাইমিং করেছি; এখন পদক জিতলাম। সামনে আরও এগিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন: এশিয়ান ইনডোরে পদক জেতালেন। ইনডোরের মানে আলাদা কোনও বিশেষত্ব আছে কিনা?

জহির রায়হান: তা তো আছেই, একটু ব্যতিক্রম। ইনডোর স্প্রিন্টে ভিন্নতা অনেক। প্রথমত ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য অনেক কম, বাঁকের সংখ্যা বেশি। তাই আউটডোরের চেয়ে ইনডোরে সময় বেশি লাগে। একটু অসচেতন হলে অ্যাঙ্কেল (গোড়ালি) টুইস্ট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। আউটডোরের চেয়ে ইনডোরে চ্যালেঞ্জের মাত্রা বেশি। তবে আমি সব উতরে গেছি।

প্রশ্ন: তেহরানে পদক জেতার পর আপনার এখন ইচ্ছা কী?

জহির রায়হান: সামনের অন্য আসরগুলোতে তো ভালো করতে চাই। তার আগে দেশে ফিরে আমার খুব ইচ্ছা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা। যদি করতে পারি তাহলে অনেক দিনের সুপ্ত ইচ্ছা পূরণ হবে।

প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে কী বলবেন?

জহির রায়হান: আমার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার। এটা অনেক দিনের ইচ্ছা, কী বলবো তা এখনও জানি না। তবে অ্যাথলেটিকস এবং নিজের কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো। করতে পারলে অনেক খুশি হবো, মনের ইচ্ছা পূরণ হবে। তাছাড়া উনি তো ক্রীড়াবান্ধব।

প্রশ্ন: দেশের অ্যাথলেটিকসে ফিরে যাই। দেশে তো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। এর মধ্যে অনেক দিন পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়…

জহির রায়হান: সবাই জানি বাংলাদেশের কী অবস্থা, সুযোগ সুবিধা কেমন আছে। এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমার পরিশ্রম ও সবার সহযোগিতায় এই পর্যন্ত এসেছি। বিকেএসপি, নৌবাহিনী ও ফেডারেশনসহ সবার সহযোগিতা পেয়েছি।

প্রশ্ন: পদক পাওয়ার পর অন্য দেশের অ্যাথলেটদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

জহির রায়হান: অন্য দেশের অ্যাথলেটরা প্রশংসা করেছেন। তাদের চিন্তা-ভাবনায় ছিল না কখনও আমাদের দেশ থেকে কেউ পদক পেতে পারে। বিশেষ করে ইমরানুর রহমান গতবার সোনার পদক পাওয়ার পর সবার ফোকাস ছিল এবার বাংলাদেশের দিকে। আমি পদক পাওয়ার পর সবার মধ্যে ধারণা হয়েছে আমাদের দেশ থেকে ভালোমানের অ্যাথলেট তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় খুশি বলতে পারেন।

জহির রায়হান প্রশ্ন: তাহলে ইমরানুরকে আপনাদের অনুপ্রেরণা বলতে পারি?

জহির রায়হান: তা তো অবশ্যই। ও ভালো করছে, আমরাও ভালো করতে চাই। তেহরানে আমি সাফল্য পাওয়ার পর নিশ্চয়ই অন্যরা আরও অনুপ্রেরণা পাবে।

প্রশ্ন: আপনার বাবা আব্দুর রাজ্জাক স্কুলশিক্ষক। শুনেছি তিনি আপনার এই পর্যন্ত আসার পেছনে অনেক অবদান রেখেছেন?

জহির রায়হান: হ্যাঁ, যা শুনেছেন ঠিকই। আমার ফল জানার জন্য বাবা অধীর অপেক্ষায় ছিলেন। রুপা জিতেছি শুনে উনি অনেক খুশি হয়েছেন। তার প্রেরণায় আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। বাবার অনেক বড় স্বপ্ন যেন অনেক বড় কিছু করতে পারি। সেই স্বপ্ন এখন কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছি। তাছাড়া মা-সহ অন্য ভাই-বোনরাও আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।