নিবিড় পর্যবেক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ, ওয়েবসাইট

সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) প্রকাশিত স্ট্যাটাস ও কমেন্ট, পেজগুলোর কার্যক্রম, ব্লগে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা এবং সব ধরনের ওয়েবসাইটগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। বিশেষ করে যে কোনও বিষয়ে উস্কানিমূলক লেখালিখি বা মন্তব্য বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

জঙ্গিবাদ রুখতে পর্যবেক্ষণের মাত্রা বহুমুখী করার পাশাপাশি এর আওতা আরও বাড়ানো হয়েছে। এর সুফলও মিলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, কোনও সাইট বা ব্লগের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদী প্রচারণা ও বিদ্বেষমূলক কথাবার্তার প্রকাশের অভিযোগ থাকলে তা বন্ধ করবে সরকার। এছাড়া চরমপন্থা নিরসনের বদলে তা ছড়ালে বা উসকে দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সংবাদ ও ব্লগভিত্তিক ৩৫টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে ৩০টি ফেসবুক পেজ ও আইডি বন্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’তে চিঠি পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটা নজরদারির প্রাথমিক অগ্রগতি।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা বিভাগ থেকে দাবি উঠেছে, আলাদাভাবে না করে সমন্বিতভাবে নজরদারি চালানো হোক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সমন্বিতভাবে অনলাইনে নজরদারি করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলেও মনে করছেন তারা।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, জঙ্গিদের প্রযুক্তির ব্যবহার রোধ করতে একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউর (পদ্ধতি) প্রস্তুত করা হচ্ছে। গুলশানের মতো জঙ্গি হামলা হলে কার কী দায়িত্ব হবে, সে ধরনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

জানা গেছে, আইসিটি অধিদফতর ‘ইন্সটলেশন অব সাইবার থ্রেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মের অধীনে সবকিছু নজরদারি করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হবে। ফলে কে, কোথায়, কখন, কী করছে, তা নজরদারি করা সহজ হবে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জঙ্গি রিক্রুটের একটি উর্বরক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এটি রোধ করতে সরকার কঠোর আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কমিশনের একটি টিম আছে, যারা সবসময় অনলাইনে নজরদারি চালায়।

তিনি আরও বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা, ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেল (এনটিএমসি) থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে বিটিআরসি। কোনও কিছু বন্ধ বা ব্লক করতে হলে কমিশন থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েগুলোকে (আইআইজি) নির্দেশনা পাঠানো হয়।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রয়েছে আইটি ফরেনসিক ল্যাব। সেখানে মূলত পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ হলেও নজরদারির কাজও হয়। বিভাগটির জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার রেজাউল হায়দার বলেন, তারাও বিভিন্ন পদ্ধতিতে নজরদারি করেন।

প্রযুক্তি বিশ্লেষক সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা ওভার দ্য টপ (ওটিটি) সেবা ব্যবহার করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের আলাপে তারা আমার কাছে এসব প্রযুক্তি নিয়ে আলাপ করতেন। এতে আমার কাছে মনে হয়েছে, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা ওটিটি ব্যবহার করে থাকতে পারে। ওটিটি সহজে ব্যবহার করা যায়। কেবল ইন্সটল করে নিলেই হয়। এগুলো পরিবর্তনও করা যায় দ্রুত। বেশিরভাগ ওটিটি সেবায় কোনও রেকর্ড থাকে না। ফলে কোনও ধরনের সন্দেহজনক কথাবার্তা বা ভিডিও বার্তা উদ্ধার করা কঠিন।’

তিনি আরও বলেন, কয়েকজন প্রোগ্রামার মিলে অল্প সময়ের মধ্যে একটি অ্যাপ তৈরি করে ফেলতে পারে। এগুলো নজরদারি করা বেশ কঠিন।

আরও পড়ুন: যে কারণে বন্ধ হলো নিউজ পোর্টালসহ ৩৫ সাইট

/এআরএল/এসএনএইচ/এসটি/