হাওরের অকাল বন্যার উদাহরণ টেনে পলক বলেন, ‘আমাদেরএকটি সুপার কম্পিউটার থাকলে আমরা আবহাওয়ার ডাটা অ্যানালাইসিস করে অনেক আগেই পূর্বাভাস পেতে পারতাম। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার হাওর এবং চলনবিলে অকাল বন্যার হাত থেকে কষ্টার্জিত ফসল রক্ষা করতে পারতাম। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতিও কম হতো। হাওরের বাঁধ আরও মজবুত ও শক্তিশালী করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ যেত।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের জন্য সুপার কম্পিউটার কেনার কথা ভাবছি। আমি শিগগিরিই প্রধানমন্ত্রী ও তার আইসিটি উপদেষ্টার সঙ্গে সুপার কম্পিউটার আনার বিষয়ে কথা বলব।’ পলক জানান, সুপার কম্পিউটার একটি জায়গায় স্থাপন করা হলেও দেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয় সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে টার্মিনাল বসানো হবে। এতে করে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বড় ধরনের ‘ডাটা অ্যানালাইসিস’ করতে পারবেন।
আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুপার কম্পিউটার আনার উদ্যোগ বিষয়ে মঙ্গলবার (৯ মে) আইসিটি বিভাগে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ডের ইন্সপার (থাইল্যান্ড) কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এড মন্ড ও অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার ডা উই। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বৈঠকে দেশীয় একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। আইসিটি বিভাগের ওই বৈঠকে সুপার কম্পিউটারের সুবিধা, ডাটা অ্যানাইলাইসিসসহ বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র।
আবহাওয়ার ডাটা বিশ্লেষণ ও নিখুঁত পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য সুপার কম্পিউটারের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. আরিফ হোসেন। আবহাওয়া অধিদফ্তরের এই কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারলে আবহাওয়ার যেকোনও পূর্বাভাস আরও আগে পেতে পারব। সুপার কম্পিউটার থাকলে দীর্ঘদিনের ডাটা (বেশি সংখ্যক) বিশ্লেষণ করতে সুবিধা হয়।’ আবহওয়া অধিদফতর সুপার কম্পিউটার কেনার জন্য সরকারের কাছে অনেক আগেই প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি হাওরে যে বন্যা হলো, তার আগে কিন্তু প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির পূর্বাভাস কিন্তু আমরা ১৮ এপ্রিল দিয়েছিলাম। পূর্বাভাসে উল্লেখ ছিল, ১৯ থেকে ২৪ এপ্রিল সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকায় ভারি বর্ষণ হবে। হয়েছেও তাই।’ তবে তিনি মনে করেন, এই পূর্বাভাসটা যদি আরও আগে পাওয়া যেত তাহলে হাওরবাসী সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারতেন। এক-দুই দিন আগেই তারা ফসল ঘরে তুলে নিতে পারলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
এদিকে হাওর অঞ্চলে কম সময়ে ধান উৎপাদনের প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন প্রখ্যাত জিন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘হাওরাঞ্চলের এক ধরনের ধান আছে যে ধান বোরো মৌসুমে ৯০ এবং আউশ মৌসুমে ৭৫ দিনে ফলন দেয়। এই ধানের জেনম সিকোয়েন্স করে কোন জিনটার জন্য ধান হতে দেরি হয় সেটা চিহ্নিত করা হবে। তখন আগাম ধান ঘরে উঠবে। এপ্রিলে আগাম বন্যা হলেও কোনও সমস্যা হবে না।’ এই গবেষণার জন্যও সুপার কম্পিউটার তথা উচ্চক্ষমতার কম্পিউটার প্রয়োজন বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ‘১০ হাজার প্রজাতির ধানের দেশ এই বাংলাদেশ। এই দেশে আগাম ধান উৎপাদনও সম্ভব। ধান নিয়ে আমরা গবেষণা করতে চাই। তার ডিএনএ বিশ্লেষণ, জেনম সিকোয়েন্স, ডাটা বিশ্লেষণ ইত্যাদির জন্য সুপার কম্পিউটার প্রয়োজন।’
আবেদ চৌধুরী বলেন, ‘পাটের জেনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেছিলেন মাকসুদুল আলম। তাকেও পাটের জিনের সিকোয়েন্স মেলাতে সুপার কম্পিউটারের সাহায্য নিতে হয়েছিল। দেশে না থাকায় তিনি মালয়েশিয়ায় গিয়ে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) দেশে প্রথম ডিপ-ব্লু নামের একটি সুপার কম্পিউটার নিয়ে আসে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া, আরও দু’টি সুপার কম্পিউটার আছে দেশে। এর মধ্যে সরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি এবং বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অন্য সুপার কম্পিউটারটি।
আরও পড়ুন-
সুপার কম্পিউটার যুগে যাচ্ছে বাংলাদেশ
জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ নিরাপদ, তবে…
/টিআর/