সংযোগ নেই, কর্মী নেই, চাকরি না থাকায় অফিসও নেই। এত নেই-এর মাঝে শূন্য থেকে শুরু হওয়া মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল ফের শূন্য হতে চলেছে। এরই মধ্যে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি অপারেটরটির লাইসেন্স বাতিলের আবেদন পাঠিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে। ফলে সিটিসেলের ফিরে আসার আর কোনও সম্ভাবনাই দেখছেন না এর কর্মীরা।
এদিকে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের অনুমতি চেয়ে গত ৮ জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি। কমিশনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে ৮ মে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। বৈঠকে ‘বিটিআরসির কাছে পিবিটিএল (প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড-সিটিসেল)-এর চলমান বকেয়া অনাদায়ে অবিলম্বে লাইসেন্স বাতিলের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অন্যদিকে গত বছর বন্ধ হওয়ার পরে অপারেটর প্রতিষ্ঠানটি ৬ নভেম্বর ফের চালু হলেও কার্যত তা ছিল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। কারণ সিটিসেল নম্বর থেকে কোথাও ফোন করা যেত না এবং এসব নম্বরে কোনও ফোনও আসতো না।
সিটিসেলের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ও এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পিয়ন, গাড়িচালক থেকে শুরু করে জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পর্যন্ত কর্মকর্তারা বকেয়া বেতন, গ্র্যাচুইটি, উৎসব বোনাস এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের কিছু অংশের টাকা পেয়েছেন। ডেপুটি ম্যানেজার পর্যায়ের কেউ কেউ বকেয়া পেয়েছেন বলে জেনেছি।’
যদিও ২০১৪-২০১৬ সালের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেছেন, ‘সত্যি বলতে এখন কর্তৃপক্ষ বলে তো আর কিছু নেই, আছে মালিক পক্ষ আর কর্মীরা। ফলে দাবি আদায়ের জায়গাটা সংকুচিত হয়ে গেছে। আমাদের পুরো বকেয়া পাবো কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত আমরা। কারণ ৩-৪ মাস ধরে অফিসে যাওয়া বন্ধ রয়েছে আমাদের। অফিসে না গেলে আসলে সেভাবে দাবি আদায়ের জোর চেষ্টা চালানো যায় না।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ জুলাই বিটিআরসি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিটিসেলের গ্রাহকদের দুই সপ্তাহের মধ্যে বিকল্প সেবা গ্রহণের অনুরোধ জানায়। সে হিসাবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় পান গ্রাহকরা। যদিও ১৪ আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, ‘বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটিসেলের গ্রাহকরা আরও সময় পাবেন।’
এরপর সিটিসেল উচ্চ আদালতে গেলে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর চলে যায়। বিটিআরসি ওই নোটিশের পর আপিল বিভাগে যায় প্রতিষ্ঠানটি। আপিল বিভাগ গত বছরের ২৯ আগস্ট এই অপারেটরকে বকেয়া ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা দুই কিস্তিতে পরিশোধ করার শর্তে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলে। এজন্য তারা সময় পেয়েছিল দুই মাস।
সিটিসেল আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে গেলে গত বছরের ৩ নভেম্বর শর্তসাপেক্ষে অবিলম্বে এর তরঙ্গ খুলে দেওয়ার নির্দেশ আসে সর্বোচ্চ আদালত থেকে। দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তরঙ্গ ফিরে না পেয়ে ফের আদালতে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে তাদের পক্ষ থেকে বকেয়া টাকার মধ্যে ১৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। পরে আপিল বিভাগ আদেশ দেন, ১৯ নভেম্বরের (২০১৬) মধ্যে সিটিসেল বকেয়ার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে আবারও তরঙ্গ বন্ধ করে দিতে পারবে বিটিআরসি।
এর আগে বকেয়া টাকা শোধ না করায় গত বছরের ২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ স্থগিত করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে তরঙ্গ বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন বিটিআরসির কর্মকর্তারা।
/জেএইচ/এপিএইচ/আপ-এমও/