মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে ৩৫২২ অভিযোগ, শীর্ষে গ্রামীণফোন

মোবাইল ফোন অপারেটরটেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসিতে) গত একবছরে মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের অভিযোগ জমা পড়েছে তিন হাজার ৫২২টি। এরমধ্যে বেশি অভিযোগ গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। একবছরে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে ১৯৭৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিটিআরসি’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ হয়েছে।

বিটিআরসি’র  প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলালিংকের বিরুদ্ধে ৬১২, রবির বিরুদ্ধে ৬০৪, এয়ারটেলের বিরুদ্ধে ২২১, টেলিটকের বিরুদ্ধে ১০৪ ও সিটিসেলের বিরুদ্ধে রয়েছে আটটি অভিযোগ। অভিযোগগুলো জমা হয়েছে ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অভিযোগের যে ধরন পাওয়া গেছে তা হলো— সামাজিক গণমাধ্যম ও সাইবার সংক্রান্ত, মোবাইল সিম ব্লক, মোবাইল ইন্টারনেটের গতি, ট্যারিফ, মূল্য সংযোজিত সেবা (ভিএএস), নেটওয়ার্ক সমস্যা, এসএমএস, অনলাইন গেম নিয়ে সচেতনতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, ডাটা ভলিউম, মোবাইল আর্থিক সেবা তথা মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়ক, কলড্রপ, প্যাকেজ মাইগ্রেশন, প্রতারণা ও জালিয়াতি সংক্রান্ত।

বিটিআরসি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করে থাকে কমিশন। এর আগে গ্রাহকের অভিযোগ বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে থাকে বিটিআরসি। কমিশনের এই উদ্যোগের ফলে গ্রাহক ও অপারেটরের মধ্যে সমঝোতা হয়। অপারেটরের ভুল বা কোনও ধরনের গাফিলতি থাকলে অপারেটরের পক্ষ থেকে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি কমিশনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।

জানা গেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের আটটি শর্টকোড বাতিল করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিয়েছে কমিশন। অন্যদিকে, বাংলালিংকের একজন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে অটো অ্যাক্টিভেটেড সাবস্ক্রিপশনের বিষয়ে অপারেটরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলালিংকের সক্ষমতা বাড়ানো হবে এবং এ ধরনের সব সমস্যা দূর করা হবে। সক্ষমতা বাড়ানোর আগ পর্যন্ত এ ধরনের সাবস্ক্রিপশনের (কোনও সেবা গ্রহণ করে গ্রাহক হওয়া) ক্ষেত্রে অপারেটরের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের মধ্যস্থতায় গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তিও করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে ৭৪৫টি অভিযোগের মধ্যে ৭৩২টি সমাধান করা হয়েছে। রবির বিরুদ্ধে করা ৩০৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩০৫টি, বাংলালিংকের ৩০৪টির মধ্যে ৩০০টি, টেলিটকের ৭২টির মধ্যে ৬৬টি এবং সিটিসেলের দুটির মধ্যে দুটি অভিযোগেরই সমাধান করা হয়েছে।

জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, ‘অপারেটরদের পাশাপাশি গ্রাহকদের কথা শুনতে বিটিআরসির নেওয়া এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বিটিআরসির কাছে নিবন্ধিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ৯৮ দশমিক ৯ ভাগের সমাধান গ্রামীণফোন করেছে। ২০১৭ সালে আমাদের সেবাগুলোকে আরও  সহজ করা হয়েছে, যার ফলে গ্রাহকের অভিযোগ ৭৪ ভাগ কমে গেছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অভিযোগের সবগুলো সরাসরি অপারেটরকেন্দ্রিক নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, একইসঙ্গে অনলাইনে তেমন বেড়েছে দুষ্কৃতিকারীদের উপস্থিতি। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ব্যবহারের সময় ব্যবহারকারীর অসচেতনতাই মূলত এর জন্য দায়ী। কমিশন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বসে এসব সমাধানের চেষ্টা করে থাকে বলে জানা যায়।

বাংলালিংকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অপারেটরটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের তিন কোটি ২০ লাখের বেশি গ্রাহক। ফলে গ্রাহকদের কিছু অভিযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে গ্রাহকদের প্রতিটি অভিযোগ আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলালিংক একটি প্রযুক্তিভিত্তিক নেটওয়ার্ক কোম্পানি। আর নেটওয়ার্ক অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে থাকে। অনেক সময় সেসব ফ্যাক্টরের কারণেও নেটওয়ার্ক সমস্যা হয়ে থাকে। আমরা সব সময় গ্রাহকের পাশে থেকে সমস্যাগুলো সমাধান করে থাকি।