ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম (মার্কেটপ্লেস) দারাজ ডটকমে অন্য সব পণ্যের পাশাপাশি খোলামেলা বিক্রি হচ্ছে ‘যৌন উত্তেজক’ ও কথিত ‘শক্তিবর্ধক’ ওষুধও। দারাজের সাইট এমনভাবে তৈরি করা যে সংশ্লিষ্ট পণ্যের বিজ্ঞাপনের নিচে ক্রেতারা নিজের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে উত্তরও জেনে নিতে পারেন। তবে সাধারণ পণ্যের পাশাপাশি এ ধরনের বিশেষ ওষুধের ক্ষেত্রেও একইভাবে তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ রেখেছে ওয়েবসাইটটি। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রশ্নের পাশাপাশি এমন কিছু প্রশ্ন করে উত্তর জানার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এসব বিষয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। আর এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বিষয়টি অনৈতিক হয়েছে বলে মনে করছে। তবে এমন পণ্য রাখা ও এগুলো নিয়ে ক্রেতাদের আপত্তিকর প্রশ্নের জবাবে দারাজ বলছে, তারা পণ্যগুলো সাইট থেকে সরিয়ে ফেলেছে। প্রয়োজনে দারাজ কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে এর কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
দারাজের সাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বাজারে থাকা অসংখ্য পণ্যকে বিশেষ বিশেষ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে এই সাইটে কেনাবেচা হয়। এরই একটি বিশেষ ক্যাটাগরিতে রয়েছে যৌনশক্তি বর্ধক বিভিন্ন ওষুধ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নামের ও ব্র্যান্ডের এসব পণ্যের দামেও রয়েছে ভিন্নতা। ওয়েবসাইটটির পেজে এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা। আগ্রহীরা প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনটা জানাচ্ছেন। তবে এসব প্রশ্নের মধ্যে কোনটি আসল আর কোনটি নকল তেমন জিজ্ঞাসাই বেশি। এসব বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যৌন উত্তেজক ও যৌনবর্ধক এসব ওষুধ কাজে লাগে কিনা তার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা চিকিৎসকের পরামর্শ কথিত ওষুধগুলোর প্যাকেটের গায়ে লেখা নেই। যা আছে তা কিছু বিক্রেতার মনগড়া ব্যাখ্যা। এসব ওষুধের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্যেই প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে কেউ কেউ ‘মানুষ অজ্ঞান’ করার ওষুধ আছে কিনা তাও জানতে চাইছে। সেখানে এর উত্তরে বলা হয়েছে ‘আপাতত নেই, স্টোরটা ফলো করে রাখুন।’ এছাড়া এ ধরনের ওষুধ দিয়ে ক্রেতারা ‘নারী বশীকরণ’ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন। এগুলোর জবাবও দেয়া হচ্ছে খোলামেলাভাবে। বাতলে দেওয়া হচ্ছে কৌশল। এমন কাজে এসব ওষুধ বা পণ্য যে কার্যকর তাও দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু, সেসব প্রশ্ন কতটা যৌক্তিক বা কী ধরনের প্রশ্ন করা যেতে পারে সে বিষয়ে দারাজ কর্তৃপক্ষের কোনও নির্দেশনা সাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দারাজ ডটকম কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দারাজ একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেখানে দেশি এবং বিদেশি দুই ধরনের বিক্রেতারাই পণ্য বিক্রি করে থাকেন। যেহেতু দারাজ একটি টেকনিক্যাল প্ল্যাটফর্ম তাই বিক্রেতাদের পণ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের বিরতিতে পর্যবেক্ষণ করা হয়। দারাজে রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার বিক্রেতা এবং ৭০ লাখ পণ্য। আমাদের একটি দায়িত্বশীল টিম রয়েছে, যারা অননুমোদিত পণ্যগুলো চিহ্নিত করতে প্রতি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এই প্ল্যাটফর্মটিকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। অপরাধের ধরন বুঝে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, ব্ল্যাকলিস্ট এবং ডিলিস্ট ( তালিকা থেকে বাদ দেওয়া) করা হয়ে থাকে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘দারাজের প্ল্যাটফর্মে পণ্য তালিকাভুক্তিকরণের পলিসি অনুসারে, যদি পণ্যটির সঠিক বিবরণ দেওয়া থাকে তাহলে অননুমোদিত অথবা কোনও অশ্লীল পণ্য প্রদর্শন সম্ভব নয়। আমাদের টেকনিক্যাল যে সিস্টেমটি আছে তাতে কিছু পূর্বনির্ধারিত শব্দ দেওয়া আছে, যা অননুমোদিত এবং অশ্লীল পণ্য তালিকাভুক্তিকরণে বাধা সৃষ্টি করে। তবে কিছু বিক্রেতা অনৈতিকভাবে সঠিক তথ্য প্রদান না করে এবং আমাদের সিস্টেম বাইপাস করে এসব অনৈতিক এবং অননুমোদিত পণ্য তালিকাভুক্ত করেছে। দারাজে এসব অননুমোদিত পণ্যগুলোকে ম্যানুয়ালি পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি দারাজ এরকম কোনও কার্যক্রম চিহ্নিত করে তাহলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেয় এবং এ ধরনের বিক্রেতা ও পণ্যকে ব্লক করে দেয়।’ তবে এ ধরনের পরিবর্তন বাস্তবায়ন করতে সিস্টেমগত কারণে কিছুটা সময় লাগে জানিয়ে বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ‘দারাজ সব আইন-কানুন ও নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে। যদি কখনও দারাজ ফার্মাসিউটিকাল পণ্য বিক্রির মাধ্যমে তার ব্যবসার পরিধি বড় করতে চায় তাহলে দারাজ তা অবশ্যই ডিজি ডিএ-র কাছ থেকে যথাযথ লাইসেন্স গ্রহণের মাধ্যমে করবে।’
তবে কর্তৃপক্ষ ওইসব পণ্য দারাজের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বললেও মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে সাইটে প্রবেশ করে এ ধরনের অনেক পণ্য দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হক অনু বলেন, এটা তো নৈতিকতার ব্যাপার। নৈতিকতার দিক থেকে দারাজের এ কাজটা ঠিক নয়। এটা দেখা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। তবে তিনি মনে করেন, কেউ এ ধরনের কিছুতে সংক্ষুব্ধ হলে তিনি ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বা প্রতিযোগিতা কমিশনে অভিযোগ দিতে পারেন।