দেশের সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ই-কেওয়াইসি চালুর জন্য সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পরবর্তী সময়ে বিএফআইইউ ২০১৮ সালে গ্রাহকের তথ্য নিয়ে হিসাব খোলার নির্দেশনা জারি করে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনের জন্য হিসাব খোলার ফরমের সঙ্গে নতুন নতুন অংশ সংযোজন করা হয়। ই-কেওয়াইসিও তেমন একটি সংযোজন। ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিসহ কয়েকটি দেশে ই-কেওয়াইসি প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে বলে জানা যায়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক ও ই-কেওয়াইসি প্রকল্পের কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব ব্যাংকে এটা ব্যবহার করতে হবে। সেই হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব ব্যাংকের কেওয়াইসি হবে অটোমেটেড বা ই-কেওয়াইসি। বিএফআইইউ গত অক্টোবরে সফলভাবে ই-কেওয়াইসি পাইলট করেছে।’
এই প্রযুক্তি ব্যবহারে দেখা গেছে, ব্যাংক হিসাব খুলতে যেখানে ম্যানুয়ালি (কাগজে-কলমে) ফরম পূরণ করতে সময় লাগতো কয়েকদিন, সেখানে ই-কেওয়াইসিতে কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার কাজ সম্পন্ন হয়। দেশের ১০ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান গিগা ই-কেওয়াইসি পাইলট করে সন্তোষজনক ফল পেয়েছে। দেশের ৩৩ জেলার ৫০টি এলাকায় ব্যাংকগুলোর শাখায় ই-কেওয়াইসি পাইলট করা হয়েছে। গত অক্টোবর মাস থেকে পাইলটিংয়ের কাজ শুরু হয়।
‘গিগা ই-কেওয়াইসি’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একজন গ্রাহকের পেছনে ব্যয় করা সময় ও আর্থিক খরচ দুই-ই কমবে। একই সঙ্গে ভোগান্তি কমবে গ্রাহকেরও।
হিমিকা জানান, এ প্রযুক্তির সুবিধা হচ্ছে এটা দেশীয় প্রযুক্তি, শতভাগ স্বয়ংক্রিয়, ই-কেওয়াইসির নীতিমালার মাধ্যমে পরীক্ষিত, ১০টি ব্যাংকে ব্যবহারের যোগ্যতা প্রমাণিত, সম্পূর্ণ ডাটা সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, মাল্টি ফাংশনাল সিস্টেম, ফিঙ্গার টেস্ট ও ফেসিয়াল সিস্টেম এবং মানি-লন্ডারিং ঠেকানোর জন্য এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। ম্যানুয়ালি যেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লাগে, সেখানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়েক মিনিটেই ভেরিকেশনসহ গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব।
জানা যায়, ‘গিগা ই-কেওয়াইসি'-তে গিগাটেকের নিজের তৈরি ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম, জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই পদ্ধতিসহ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এরমধ্যেই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনে সব ধরনের প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা কাস্টমার কেয়ার সাপোর্ট থাকছে। এজন্য ডেভেলপার টিম কাজ করবে সব সময়। এটাতে এমন সুবিধা রাখা হচ্ছে যেন নতুন নতুন নিরাপদ প্রযুক্তি যুক্ত করা যায়। এরমধ্যেই অনেকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘গিগা ই-কেওয়াইসি’ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে হিমিকা জানান।
তিনি বলেন, ‘শুধু ব্যাংক নয়, লিজিং কোম্পানি, বীমা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান এটা ব্যবহার করতে পারবে। এ প্রযুক্তির সুবিধা হচ্ছে এটা দেশীয় প্রযুক্তি।’ গিগাটেক বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রযুক্তি সেবা ও উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান বলেও জানান তিনি।