করোনা সংকটে সবার চোখ ইন্টারনেটে, বেশি ব্যান্ডউইথ খরচ ইউটিউব-ফেসবুকে

ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজোনকরোনাভাইরাসের এই সংকটকালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বেড়েছে। ভিডিও দেখা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে ইন্টারনেটে ব্যবহারের শীর্ষে রয়েছে ভিডিও পোর্টাল ইউটিউব, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ফেসবুক ভিডিও। আর বিনোদন মাধ্যম হিসেবে শীর্ষে রয়েছে নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসপি ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।  

জানা গেছে, গত শুক্রবার (১০ এপ্রিল) দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৫০ জিবিপিএস (গিগাবিট পার সেকেন্ড)। এরমধ্যে সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ ছিল ১ হাজার ৫০ জিবিপিএস। অবশিষ্ট ৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে দেশের ৭টি আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল)। অন্যদিকে, শনিবার (১১ এপ্রিল) দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭০০ জিবিপিএস। দেশে গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ এই হারে ছিল। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তাও ২০০-২৫০ জিবিপিএস বেশি। বর্তমানে ২৫-৩০ শতাংশ ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়েছে।

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই সংকটকালে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভালো রয়েছে। ইন্টারনেট বিষয়ক কোনও কাজে আমরা ব্যর্থ হইনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইন বৈঠক থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ আমরা সাফল্যের সঙ্গে করতে পারছি।

তিনি জানান, গত কয়েকদিনে আমাদের দেড়শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়েছে। ইন্টারনেটই এখন আমাদের লাইফ লাইন।  

ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সহ-সভাপতি আহমেদ জুনায়েদ বলেন, মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় টোটাল ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বেড়ে গেছে। তিনি জানান, বর্তমানে ব্যান্ডউইথ সবচেয়ে বেশ ব্যবহার হচ্ছে ইউটিউব দেখা, ফেসবুক ব্যবহার ও ফেসবুক ভিডিওতে। নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও রয়েছে জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম তালিকার শীর্ষে। অন্যান্য জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তালিকায় আরও আছে ইনস্টাগ্রাম ও লিংকড-ইনের ব্যবহার। আর ভিডিও কনফারেন্সে এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে জুম, স্কাইপ, মাইক্রোসফট ‍টিমস, গুগল হ্যাংআউটস মিটস ও সিসকো ওয়েবেক্স। ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের প্যাটার্ন দেখে এটা বোঝা গেছে বলে তিনি জানান।

মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ভয়েস ও ইন্টারনেট প্যাকেজ নতুন করে সাজিয়েছে। কোনও কোনও অপারেটর আগের দামে বেশি ডাটা অফার করছে। কোনও অপারেটর তাদের ডাটার দাম কমিয়েছে। মোবাইল অপারেটররা বলছে, তাদের ডাটার (ইন্টারনেট) ব্যবহার বাড়লেও কমেছে ভয়েস কলের পরিমাণ।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে অপারেটররা ডেটা প্যাকের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। ফলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ডেটা ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়লেও এ থেকে অপারেটরদের আয় সন্তোষজনক নয়। বিশেষত উদ্বেগজনক হলো যে গত কিছুদিন ধরে ভয়েস কল ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

এদিকে, মানুষদের চলাচলের সীমাবদ্ধতার কারণে খুচরা চ্যানেলের মাধ্যমে মোবাইলে টাকা রিচার্জের হার প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি আমরা মোবাইল গ্রাহকদের অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা যেমন-ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার, মোবাইল মানি কিংবা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে টকটাইম রিচার্জ করতে উৎসাহিত করছি।