যে যুক্তিতে এক পরিচয়পত্রে ২০ সিম

একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে একজন ব্যক্তি ২০টি মোবাইল সিম নিতে পারবেন- এমন সীমা নির্দিষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও এর আগে বিভিন্ন পক্ষের প্রস্তাবনায় কখনও ১০, ২৪ বা ২৫টি সিমের কথা শোনা গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২০ সিমেই খুশি থাকতে হবে ব্যবহারকারীকে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল-মে’র দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একজন ব্যক্তি কয়টি সিম ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানতে চাওয়া হয়। ওই প্রশ্নের জবাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে প্রস্তাব করা হয় একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২০ এবং এক অপোরেটরের ৭টি সিম রাখতে পারেন। যদিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রস্তাব করে যথাক্রমে ২০ এবং ৫টি। ওই সূত্র আরও জানায়, এই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পক্ষের সুপারিশ ছিল।

কেন ২০টি সিম- এই তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে জানা গেল অনেকগুলো বিষয় সামনে নিয়ে এই সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়ে থাকতে পারে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্যাকেজ, ইন্টারনেট প্যাকেজ, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা ইত্যাদি বিষয় সিম সংখ্যা ২০টি নির্ধারণে সহায়তা করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।

তবে এই সিম সংখ্যা ভবিষ্যতে কম মনে হতে পারে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ভারতে একজনের ৬০, শ্রীলংকায় ৫০টি সিম ব্যবহারের সীমা নির্দিষ্ট করা রয়েছে। পাকিস্তানে এ সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়েও বেশি। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা (২০টি) সমস্যা তৈরি করতে পারে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, একেক মোবাইল ফোন অপারেটর একেক প্যাকেজ অফার করে। কারও কোনও অপারেটরের সকালের প্যাকেজ পছন্দ, কারও দুপুরের, আবার কারও রাতের। কেউ আবার অন্য কোনও অপারেটরের ইন্টারনেট প্যাকেজ পছন্দ করেন। এখানেই তো তার ৫টি সিম হয়ে গেল। তার বৃদ্ধ-বাবা মায়ের সিমও তার নামে নিবন্ধন করা থাকতে পারে। অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সিমও তারা বাবার নামে নিবন্ধন করা হতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গাড়িতে ভেহিক্যাল ট্র্যাকার বসাতে গেলে তাতেও সিম প্রয়োজন। ফলে ২০টি সিম একজন পেতেই পারেন।

আগামীতে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক ডিভাইস আসবে। সিম সংখ্যা নির্দিষ্টকারীদের ওই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে বলে ওই কর্মকর্তা মনে করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এখন সিমযুক্ত স্মার্ট ঘড়ি আসছে। সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণেও সিম ব্যবহার হচ্ছে। চিল্ড্রেন ট্র্যাকার যন্ত্রে (সন্তান কোথায় আছে তার খোঁজ দেয় যে যন্ত্র) সিম ব্যবহার হয়। ফলে দিন যত যাবে, সিমের ব্যবহারও বাড়বে। ওই কর্মকর্তা মনে করেন, সিমের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পেছনে এসব বিষয় কাজ করেছে।

আপাতত ২০টির বেশি সিম থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে একটি এনআইডির বিপরীতে একটি মোবাইলফোন অপারেটরের কয়টি সিম রাখা যাবে তা চূড়ান্ত হয়নি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগের কার্যক্রমের অগ্রগতি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা সভা শেষে বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এসব তথ্য জানান। শিগগিরই বিটিআরসি এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, করপোরেট গ্রাহকদের বেলায় এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে না। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন। 

সোমবার বিকেলে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তারানা হালিম বলেছিলেন, আমরা এখনও চূড়ান্ত করতে পারিনি আসলে একজনের কয়টি সিম থাকবে। বিষয়টি চূড়ান্ত করা বেশ জটিল।

১৬ ডিসেম্বর বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, এটা চলবে এপ্রিল পর্যন্ত। মে মাস থেকে নিবন্ধন বিহীন বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হলে মোবাইলফোন সেট নিবন্ধন শুরু হবে সেটের আইএমইআই  নম্বর নিবন্ধনের মাধ্যমে।

তারানা হালিম বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নতুন সিম কিনতে গেলে এনআইডির কপি, আঙুলের ছাপের সঙ্গে সেটের নম্বরও (আইএমইআই) প্রয়োজন হবে। তার মতে, সিম নিবন্ধন সম্পন্ন হলে একজন ব্যক্তি অর্ধেক নিরাপদ হবেন। আইএমইআই নিবন্ধন সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারী হবেন শতভাগ নিরাপদ।   

 

/এইচএএইচ/এফএ/আপ-এনএস/