করোনাকালে এবং করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের সব বেসরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘নতুন দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষাই বড় সহায়ক।’ মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল ক্লাস রুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টরা যুক্ত ছিলেন।
আড়াই ঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমাদেরকে কয়েক বছর পর অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় যেতেই হতো। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগেই শুরু করতে হলো। রূপকল্প ২০৪১ ছাড়াও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব রয়েছে, তা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে। ক্লাসরুমে এসে আর নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকবে না। সুতরাং, অনলাইন শিক্ষাই তাদের জন্য বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।’
বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে অনলাইনে শিক্ষার উদাহরণ রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের কনটেন্ট ই-কনটেন্টে রূপান্তরিত করতে হবে। আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে। ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী— যাদের অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ (অ্যাকসেস) দিতে পারছি না। কীভাবে দেওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে লোন দেওয়া যায় কিনা, ইন্টারনেটের খরচ কমানো যায় কিনা, সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে। কোভিড পরবর্তী সময়েও এটি বহাল রাখতে হবে।’
এই প্ল্যাটফর্ম আরও কত ভালো করতে পারা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণ বড় বিষয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে।’
অনলাইনে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে বিজ্ঞান শিক্ষা কোনোভাবেই করা যাবে না তা নয়। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল ল্যাবরেটরি রয়েছে। এটি অসম্ভব তা নয়। যত রকমের চ্যালেঞ্জ থাকুক আমরা তা মোকাবিলা করবো। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারেও এটি রয়েছে। আমাদের কোথাও আটকে রাখার সুযোগ নেই। আমাদের আটকে রাখতে পারে আমাদের মাইন্ড সেট। তাই আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই প্ল্যাটফর্মের (ভার্চুয়াল ক্লাস রুম) মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হবে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিগগিরই এই ক্লাস রুম পুরোপুরি চালু হবে। পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের ব্যবহার শুরু করেছে। এই ব্যবস্থায় পরীক্ষাও নেওয়া যাবে বলে জানানো হয়। করোনার পরও যাতে এই ক্লাসরুম ব্যবহার করা যায়, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়। ভার্চুয়াল এই ক্লাসরুমে লাইভ এবং রেকর্ডিং উভয় ব্যবস্থা থাকবে। লাইভ ক্লাসে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রশ্ন করে সরাসরি উত্তর জানতে পারবেন শিক্ষকের কাছ থেকে।
আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘১০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেওয়া যায় কিনা, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ লোন দিতে পারি।’
অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, শিগগিরই সব বিশ্ববিদ্যালয় ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে যুক্ত হবে। পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ক্লাস শুরু করেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শনিবার থেকে ক্লাস শুরু হবে। ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অপশন থাকবে।