ডেলিভারি খাতে সুখবর, বাড়ছে অর্ডার

অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ফুডপ্যান্ডায় কর্মরত ১৯ বছর বয়সী হাসান খুব ব্যস্ত। হাতে থাকা খাবারের প্যাকেটটা ডেলিভারি দিয়েই তাকে আবার ছুটতে হবে। তার ডেলিভারি বক্সে আরও দুটো অর্ডারের প্যাকেট আছে। দ্রুত ডেলিভারি দিয়ে নতুন অর্ডার নিতে হবে তাকে। ডেলিভারি অর্ডার কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে হাসান বলেন, ‘আগের চেয়ে বাড়ছে।’

সপ্তাহখানেক আগে ডেলিভারি বয় হিসেবে যোগ দেওয়া হাসান জানালেন, প্রথম দিন ৪-৫টা (নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে) অর্ডার পেলেও এখন ৮-৯টা, কোনও কোনও সময় ১০-১২টাও অর্ডার ডেলিভারির জন্য পান। হাসান আর কথা বাড়ান না। সাইকেলে প্যাডেল মেরে নতুন ঠিকানার খোঁজে চলে যান তিনি।

মাসুম নামে এক ডেলিভারি বয়ের সঙ্গে কথা হলো। শুধু বললো ‘অর্ডার বাড়ছে। কথা বলার টাইম নাই’ বলে সাইকেলটা একটা ভবনের গ্যারেজে রেখে লিফটের দিকে দৌড়ে গেলো। ঘটনা ‍দুটি রাজধানী মিরপুরের।

শুধু প্যান্ডামার্টেই নয়, ইকুরিয়ার, হাংরিনাকি, ডেলিভারি টাইগারেও অর্ডার বেড়েছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোজায় ডেলিভারির সংখ্যাও বেড়েছে। রাস্তায় বেশ চোখেও পড়ছে ডেলিভারি বয়দের। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ডেলিভারি চার্জ বাড়িয়েছে। দুই একটি প্রতিষ্ঠান আগের চার্জই রাখছে। অর্ডার বেশি পাওয়ায় চার্জ না বাড়িয়েও বিষয়টি সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি টাইগার (এফ কমার্সনির্ভর প্রতিষ্ঠান)-এর প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, জ্বালানি, বিদ্যুৎ আর গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরে সবাই ডেলিভারি চার্জ বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। আগে ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে পার্সেল পাঠাতে ছোট ই-কমার্স বা এফ-কমার্সের গড়ে ১০০ টাকা লাগতো। এখন লাগে কমপক্ষে ১৩০ টাকা। তিনি জানান, ডেলিভারি টাইগার আগে ৭০ টাকা চার্জ করতো ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে পার্সেল পাঠাতে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটি ৮৫ টাকা করেছে। ঢাকার ভিতরে এখন ৩৫ টাকা, আগে যা ছিল ৩০ টাকা।

তিনি বলেন, তবে সব কোম্পানির সার্ভিস ভালো হয়েছে। এখন ঢাকার ভিতরে অর্ডারের পরের দিনেই পার্সেল পৌঁছায়। ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে ২-৩ দিনে সারা দেশে পার্সেল পৌঁছে যায়, সেটা দেশের যেকোনও প্রান্তেই হোক না কেন।

সংশ্লিষ্টরা বললেন, অর্থনীতি স্বাভাবিক হলে এই খাতে আগামী ৩-৫ বছরে ৪০-৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। তবে চলতি বছরে গত বছরের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ নেগেটিভ প্রবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

এক বিবৃতিতে সবচেয়ে বড় ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ফুডপ্যান্ডা জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মোটরবাইক ব্যবহার করা রাইডারদের পেমেন্ট ৩৫ শতাংশ বাড়িয়েছে তারা। ফুডপ্যান্ডা প্ল্যাটফর্মে মোট রাইডারের ৮৫ শতাংশ বাইসাইকেল ব্যবহার করেন, বাকি ১৫ শতাংশ রাইডার মোটরবাইক ব্যবহার করেন। গ্রাহক আগে যে ডেলিভারি চার্জ দিতেন, এখনও সেটাই দিচ্ছেন। গ্রাহককে বাড়তি কোনও চার্জ দিতে হচ্ছে না। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, রাইডার পার্টনারদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ফুডপ্যান্ডায় ইন্স্যুরেন্স সুবিধা চালু রয়েছে। এছাড়া রাইডার পার্টনারদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনলাইন শিক্ষার সুযোগ এবং সাইকেল বা স্মার্টফোনের মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য লোন সুবিধা রয়েছে ফুডপ্যান্ডায়।

এদিকে দেশের ই-কমার্সভিত্তিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী (লজিস্টিকস) বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, ‘গত এক বছরে আমাদের লজিস্টিকস ব্যয় ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু আমরা কুরিয়ার চার্জ বাড়াইনি।’ তিনি জানালেন, তাদের অর্ডার ভলিউম আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রতি মাসে তাদের প্রবৃদ্ধি ৬-৭ শতাংশ।

ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার তাসফিন আলম জানান, হাংরিনাকির অর্ডার ভলিউম কমেনি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেলেও প্রতিষ্ঠানটি তাদের ডেলিভারি চার্জ বাড়ায়নি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে ডেলিভারি শিল্পে কিছু অর্ডার ভলিউম কমেছে। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ফুড ইন্ডাস্ট্রির আগামীতে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে, প্রবৃদ্ধিও ভালো হবে। নতুন নতুন গ্রাহকরা প্রতিদিনই এই খাতের সেবা নিচ্ছেন। ফলে সুদিন আসছে।