সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত সরকার

দেশে আইফোনের কারখানা কবে হবে?

দেশে স্যামসাং, শাওমি, অপো, ভিভো, রিয়েলমি, নকিয়া, টেকনো, ইনফিনিক্সের মতো আন্তর্জাতিক মোবাইল ব্র্যান্ড কারখানা চালু করে সেখানে মোবাইল উৎপাদন করছে। অপরদিকে ওয়ালটন, সিম্ফনি, ফাইভ স্টার ইত্যাদি স্থানীয় ব্র্যান্ডের মোবাইল কারখানাও রয়েছে। দেশে তৈরি ফোনই এখন দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে। মোবাইলের আমদানি নেমে গেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। বরং দেশে তৈরি ফোন এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। দেশে যে সামান্য পরিমাণ ফোন আমদানি করা হয় তার বেশির ভাগই আইফোন। যদিও গ্রে মার্কেটেই (অবৈধ পথে) এই ফোন বেশি আসে।

তবে এখন পর্যন্ত দেশে নেই আইফোনের কারখানা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও আইফোন তৈরির কারখানা রয়েছে। দেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অপেক্ষায় রয়েছে আইফোনের কারখানার অনুমোদন দেওয়ার জন্য। যে কেউ আবেদন করলেই আইফোন তৈরির কারখানার অনুমোদন দিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে আইফোন কারখানাকে বিশেষ ছাড় দিতেও সংস্থাটি প্রস্তুত বলে জানা গেছে।

জানা যায়, দেশে আইফোন আমদানিকারকরা বিশেষ করে রিসেলাররা এককভাবে বা যৌথভাবে আবেদন করলে তাদের বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, যারা উদ্যোগ নেবে আমরা তাদের আইফোনের কারখানা তৈরির অনুমোদন দেবো। আমাদের দেশে প্রায় সব বড় ব্র্যান্ডের মোবাইল তৈরির কারখানা রয়েছে। আইফোন এলে আমরা খুশি হবো।

তিনি আরও বলেন, আইফোন তৈরির কারখানার জন্য যা যা সুবিধা দিতে হয় আমরা দেবো। তারা আমাদের কাছে এসে বলুক তাদের কী লাগবে। আমরা দিতে প্রস্তুত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আইফোন তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, আমাদের দেশেও এই কারখানা চালু করতে পারে। তিনি মনে করেন, আইফোন সরাসরি কারখানা চালু করতে পারে বা এ দেশে তাদের পার্টনার বিশেষ করে যেসব রিসেলার আছে তাদের সবাইকে নিয়েও তৈরি করতে পারে। এ দেশে আইফোনের বাজার বড় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বড় বাজার ধরতে হলে দেশে কারখানা চালুর কোনও বিকল্প নেই। শুধু আমদানি নির্ভর থেকে এ শিল্প খাত টেকসই করা যাবে না।

বিটিআরসি থেকে এখন পর্যন্ত মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ভেন্ডর এনলিস্টমেন্ট সনদ নিয়েছে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড, আলামিন অ্যান্ড ব্রাদার্স, এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কার্লকেয়ার টেকনোলজি বিডি লিমিটেড, আনিরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, ওকে মোবাইল লিমিটেড, বেস্টটাইকুন (বিডি) এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, বাংলাট্রোনিক্স টেকনোলজি লিমিটেড, বেনলি ইলেক্ট্রনিক এন্টারপ্রাইজ কোং লিমিটেড, মাইসেল টেকনোলজি লিমিটেড, ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড, ডিবিজি টেকনোলজি বিডি লিমিটেড, লিনেক্স ইলেক্ট্রনিকস বাংলাদেশ ও আরএফএল  ইলেক্ট্রনিকস।

দেশে বর্তমানে ১৬টির মধ্যে ১৪টি কারখানা চালু রয়েছে। বন্ধ থাকা কারখানার মধ্যে একটি কারখানা শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। আরএফএল  গ্রুপ সর্বশেষ মোবাইল তৈরির অনুমোদন নিয়েছে। জিও নামের একটি মোবাইল ব্র্যান্ডের কারখানা শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি বলে জানা গেছে। মটোরোলা মোবাইল এ দেশে সরাসরি কারখানা চালু না করলেও সিম্ফনি মোবাইলের কারখানায় তৈরি হচ্ছে মটোরোলা মোবাইল ফোন।

জানা গেছে, দেশে মোবাইল আমদানি করলে ৫৭ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। অপরদিকে দেশে তৈরি করলে ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হয় ৩২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ট্যাক্স-ভ্যাটের বিষয়টা জটিল। বিশেষ করে আমদানির বেলায়। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন আইফোন এ দেশে কারখানা করলে টিকে থাকতে পারবে না।

জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর দেড় লাগের বেশি আইফোন বিক্রি হয়। এরমধ্যে মাত্র ৩-৪ শতাংশ আসে বৈধ পথে। বাকি ফোন আসে অবৈধ পথে। গ্রে মার্কেটে (অবৈধ বাজার) বিক্রি হয় ফোনগুলো।

দেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান-এক্সিকিউটিভ মেশিন, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার ও সেলেক্সট্রা লিমিটেড দেশে আইফোন আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটি অনেক ধরনের উদ্যোগ নিয়ে গ্রে মার্কেটে আইফোনের প্রবেশ বন্ধ করতে পারছে না। এজন্য তারা সরকার বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদকরা বলছেন, দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোনের যে বাজার তাতে করে এ দেশে আইফোনের কারখানা কোনও লাভজনক কিছু হবে না। বাজার বড় না করলে এই উদ্যোগ টেকসই রূপ পাবে না। তবে এই দেশে কারখানা তৈরি করে যদি রফতানির টার্গেট নেওয়া হয় তাহলে সেই উদ্যোগের পালে হাওয়া লাগলেও লাগতে পারে।

কারখানা সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, মোবাইল কারখানার ট্যাক্স ও ভ্যাট নিয়ে যে জটিলতা দেশে বর্তমানে বিদ্যমান তার যদি সমাধান না হয় তাহলে এ দেশে আইফোনের কারখানা চালু হবে না। তাছাড়া বর্তমানে যেসব কারখানা চালু রয়েছে সেগুলোর মধ্যে থেকে হয়তো ৩-৪টা কারখানা টিকে থাকতে পারে। 

প্রসঙ্গত, দেশের মোবাইল কারখানায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ২৫ লাখ ২১ হাজার ৮৫৩টি মোবাইল ফোনসেট উৎপাদন করা হয়। (এর আগের অর্থবছরে যার সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩ কোটি) যার মধ্যে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৬টি ফিচার ফোন, ৭ হাজার ৮৪০টি থ্রিজি ফোন সেট, ৬৭ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৩টি ফোরজি ফোন সেট এবং ১৫ হাজার ৫০৪টি ফাইভ-জি স্মার্টফোন।