কেন কমে না মোবাইলের কলড্রপ, বাড়ে না সেবার মান

মোবাইলে কল এলে তা মিসড কল হয়ে যাওয়া এবং পরক্ষণেই নতুন করে আবার কল আসা তথা রিং হওয়া হালে যেন নতুন সমস্যা হিসেবে হাজির হয়েছে মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে। যদিও মোবাইল অপারেটররা বলছেন, আগের চেয়ে মোবাইল সেবার মানের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ব্যবহারকারীদের অভিযোগ তা বলে না। বেশ কয়েকজন এই প্রতিবেদকের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভোগান্তির অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তবে মোবাইল অপারেটররা বলেছেন, মোবাইল নিয়ে দেশে ভোগান্তির হার আন্তর্জাতিক মান মাত্রার নিচে আছে।

কল ড্রপ, নেটওয়ার্ক নো-সার্ভিস হয়ে যাওয়া, কল চালু থাকা অবস্থায় কথা শোনা না যাওয়া, শোঁ শোঁ শব্দ হওয়ার মতো সমস্যা মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই পরিচিত সমস্যা। ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করছেন, হালে এই সমস্যা আরও বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) স্বীকৃত কলড্রপের হার ৩ শতাংশ বা এর নিচে হতে হবে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা গেছে, দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মধ্যে কলড্রপের হার গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে ০.৫৫, বাংলালিংক ০.৭৬ এবং রবির ১.০৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে দেশের ৯৮ ভাগ এলাকা ফোর-জি নেওয়ার্কের আওতায় এসেছে। এটা একটা বড় দিক। আর সাধারণ দিক বিবেচনা করলে মোবাইল নেটওয়ার্কের আরও উন্নতি করা দরকার। অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্কে উন্নয়নে বিনিয়োগের জায়গা আছে। কিন্তু যথাযথ বিনিয়োগ হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের করনীতির কারণে অপারেটরগুলোর আয়ের বড় একটা অংশ কর দিতে চলে যায়। ফলে তাদের এ বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া গেলে তারা আরও বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।

 

তিনি জানান, টেলিটক ও বাংলালিংক সম্প্রতি একটি চুক্তি করেছে। যেখানে টেলিটকের নেওয়ার্ক নেই সেখানে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে টেলিটক। আবার যেখানে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক নেই সেখানে অপারেটরটি টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সেবা দেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে এটা অনুমোদন পেলে অন্যরাও নেটওয়ার্ক শেয়ার করতে পারবে। ফলে নেটওয়ার্কের মান তথা কোয়ালিটি অব সার্ভিস আরও ভালো হবে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে গ্রাহক সংখ্যার তুলনায় মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা কম, পর্যাপ্ত স্পেক্ট্রামের অভাব, সক্ষম মোবাইল সেটের অপ্রতুলতা, আরবান এরিয়ায় নেটওয়ার্ক পকেট তৈরি, অপরিকল্পিত নগরায়ন, রেডিয়েশনের ভয়ে বাসা বাড়িতে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে বাধা এবং ঢাকার ১০০ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় টাওয়ার বসানো না যাওয়ার কারণে মোবাইল সেবার মান (কোয়ালিটি অব সাভির্স) ভালো হয় না। অপারেটররা সব স্পেক্ট্রাম (তরঙ্গ) কিনে ফেললেও সেবার মান ভালো হবে না। সবকিছু একসঙ্গে ভালো করতে হবে।

তিনি জানান, এসব ছাড়াও সীমান্ত এলাকায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নেটওয়ার্ক সীমিতকরণের কারণে, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অবৈধ জ্যামার ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ইন্টারফেয়ারেন্স, অনুমোদনহীন রিপিটার, বুস্টার ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ইন্টারফেয়ারেন্স, ইনডোর বিল্ডিং সলিউশন (আইবিএস) বসানোর যথাযথ অনুমতি না পাওয়া, অবকাঠামো সেবাদাতা কোম্পানি যেমন এনটিটিএন’র (ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা) ফাইবার কাটা গেলে অথবা মানের অবনতি হলেও নেটওয়ার্ক সমস্যা হয়।

ফলে কল ড্রপ, নেটওয়ার্ক নো-সার্ভিস হয়ে যাওয়া, কল চালু থাকা অবস্থায় কথা শোনা না যাওয়া, কল এলে মিসড কল হয়ে সঙ্গে সঙ্গে আবার রিং বাজতে থাকার মতো সমস্যার আর সমাধান হয় না। আশ্বাসে আশ্বাসে দিন পার করতে হয় মোবাইল ব্যবহারকারীদের।

বর্তমানে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার এবং টেলিটকের ৬৫ লাখ ৪০ হাজার। নতুন তরঙ্গ কেনার পরে অপারেটরগুলোর তরঙ্গের পরিমাণ গ্রামীণফোনের ১০৭.৪০, রবির ১০৪, বাংলালিংকের ৮০ এবং টেলিটকের ৫৫.২০ মেগাহার্টজ। নতুন স্পেকট্রাম যুক্ত হওয়ায় গ্রামীণফোন ৭ লাখ ৭০ হাজার, রবি ৫ লাখ ২০ হাজার, বাংলালিংক ৪ লাখ ৭০ হাজার এবং টেলিটক ১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহককে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে।