একে একে বন্ধ হচ্ছে থ্রিজি

দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো থ্রিজি সেবা বন্ধ করতে শুরু করেছে। একে একে বন্ধ হচ্ছে থ্রিজি। এরইমধ্যে গ্রামীণফোন, রবি (এয়ারটেল) ও বাংলালিংক টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন নিয়ে থ্রিজি সাইট (টাওয়ার) বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ফলে হয়তো কিছুদিন পরে আর এই নেটওয়ার্ক কাউকে ব্যবহার করতে দেখা যাবে না।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, থ্রিজি সেবা থাকবে না। থাকার কোনও কারণ দেখি না। আমরা এখন ফোকাস করছি ফোরজিতে। সারা দেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষের দিকে।

জানা যায়, রবি বিটিআরসিতে সবার আগে থ্রিজি সেবা বন্ধের জন্য আবেদন করে। এরপরে ছিল গ্রামীণফোন। বাংলালিংকও একই সময়ে আবেদন করে। কয়েকটি অবশ্য পালনীয় শর্ত জুড়ে দিয়ে সবার আবেদন মঞ্জুর করে অনুমোদন দেয় বিটিআরসি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপারেটরগুলো থ্রিজি সেবা বন্ধ করলেই হবে না। থ্রিজি সেবার কাভারেজ এলাকায় টুজি ও ফোরজি সেবা আগে নিশ্চিত করতে হবে। এটা করা না হলে গ্রাহক সেবা ব্যাহত হবে। বিটিআরসির শর্তগুলোতেও এসব বিষয় মানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণফোন থ্রি-জি সেবা বন্ধ (স্থগিত) করতে ৬ হাজার ৪২৯টি সাইট (টাওয়ার) বন্ধ করবে।

গ্রামীণফোনের থ্রি-জি সাইটের (মোবাইল টাওয়ার) সংখ্যা ৬ হাজার ৪২৯টি। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ২ হাজার ৬০১টি, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৬১২টি, রাজশাহীতে ৮৩৩টি, ময়মনসিংহে ৬৮০টি, ঢাকায় ৫৫০টি এবং বরিশাল বিভাগে ১৫৩টি সাইট।   

বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে থ্রি-জি সেবা স্থগিত করতে ৫টি শর্ত দিয়ে তা প্রতিপালন করার নির্দেশনা জারি করেছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির স্পেক্ট্রাম বিভাগ থেকে ২টি শর্ত দিয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। শর্তযুক্ত নির্দেশনাগুলো মেনে থ্রি-জি সেবা বন্ধের জন্য কাজ শুরু করেছে গ্রামীণফোন।

একই শর্ত পরিপালনের নিমিত্তে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংককেও থ্রিজি সেবা বন্ধের জন্য অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বাংলালিংক এরই মধ্যে থ্রিজি সাইট বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বাংলালিংকের থ্রিজি সাইটের সংখ্যা ৯ হাজার ২০০টি। এরমধ্যে ৩৫০টি বন্ধ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি সাইটগুলোও বন্ধ করা হবে।

জানা গেছে, ফোরজি সেবা আরও শক্তিশালী করতে ২০২৩ সালের মধ্যে থ্রিজি সেবা বন্ধ করতে শুরু করেছ মোবাইল অপারেটর রবি। এরইমধ্যে অপারেটরটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর থেকে থ্রিজি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রবির থ্রিজি সাইটের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবার আগে রবি থ্রিজি বন্ধ করতে শুরু করেছে। 

টেলিটক এখনই থ্রিজি বন্ধ করবে না
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকও থ্রিজি সেবা থেকে সরে আসবে। তবে অপারেটরটির এখনই এ ধরনের কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানালেন টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম হাবিবুর রহমান।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সারা বিশ্বেই থ্রিজি এক সময় থাকবে না। বিশ্ব এমন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আমরাও থ্রিজি থেকে সরে আসবো। আমাদের পরিকল্পনায়ও বিষয়টি রয়েছে। তবে এখনই নয়।

হঠাৎ থ্রিজি সেবা বন্ধ করে দিলে গ্রাহকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হবে। যেসব এলাকায় থ্রিজি সেবা চালু রয়েছে সেসব এলাকার গ্রাহকরা ডেটা (ইন্টারনেট) ব্যবহার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন। যেখানে থ্রিজি সেবা বন্ধ করা হবে সেখানে আগে টুজি এবং ফোরজি নেটওয়ার্ক শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে গ্রাহকের কোনও সমস্যা হবে না। ফোরজি সেবা নিশ্চিত না করে থ্রিজি সেবা বন্ধ করলে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়বে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে নিশ্চয়ই টেলিকম খাত থ্রিজি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবেন মনে করেন টেলিযোগাযোগ খাতে কর্মরত নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।