মোবাইল অপারেটরদের ‘লুকোচুরি’ বন্ধে কেনা হচ্ছে যন্ত্র!

দেশে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু না হলেও এর মান পরীক্ষার জন্য উচ্চক্ষমতার যন্ত্র  কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই যন্ত্র দিয়ে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের মান যাচাইয়ের পাশাপাশি বিদ্যমান সব নেটওয়ার্কের মান পরীক্ষা করা যাবে। এজন্য প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। এই যন্ত্র থাকলে মোবাইল অপারেটররা সেবার মান নিয়ে কোনও লুকোচুরি করতে পারবে না। বিটিআরসির পরীক্ষায় তা ধরা পড়বে।

সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।  

বর্তমানে বিটিআরসির একসেট যন্ত্র রয়েছে। এই যন্ত্র দিয়ে সারা দেশের মান পরীক্ষা করা বেশ কঠিন ও সময় সাপেক্ষ।  এর সক্ষমতাও কম।  ফলে অপারেটররা তাদের সেবার মান নিয়ে পার পেয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন ভালো মানের সেবা না দিলে পার পাওয়া বেশ কঠিন হবে।  বিভিন্ন জায়গায় একইসঙ্গে ড্রাইভ টেস্ট করা যাবে।

বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরগুলোর ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ পরীক্ষার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দুই সেট ড্রাইভ টেস্ট টুলস ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।  বিটিআরসির ২৫০তম কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।  এই টেস্টের জন্য বিটিআরসির একসেট যন্ত্রপাতি রয়েছে, যার ক্যাপাসিটি ৮টি পোর্টের (এ পার্টি) ও ৪টি পোর্টের (বি পার্টি)।  কিন্তু নতুন যে  ড্রাইভ টেস্ট টুলস (এ পার্টি) কেনা হচ্ছে, এর প্রতিটিতে রয়েছে ১২টি পোর্ট।  আর বি পার্টিতে রয়েছে ৩২টি পোর্ট।  আর চেসিস বেজড টুল রয়েছে ২টি, যার প্রতিটির ক্যাপাসিটি ২৪ পোর্টের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির ইঅ্যান্ডও বিভাগের উপপরিচালক ড. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘যন্ত্রপাতি কেনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।২৬ এপ্রিল টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ দিন।’  তিনি জানান, যে টেন্ডার হয়েছে তাতে করে কমিশন ৪ সেট ড্রাইভ টেস্ট টুলস কিনতে যাচ্ছে।  দুই সেট আউটডোরের জন্য দুই সেট ইনডোরের জন্য।  এতে করে কম সময়ে বেশি টেস্ট সম্পন্ন করা যাবে।  তিনি ‍উল্লেখ করেন, বর্তমানে যে টুলস আছে তার চেয়ে নতুন টুলস দিয়ে ৫ গুণ বেশি দ্রুততার সঙ্গে ড্রাইভ টেস্ট করা সম্ভব হবে। 

জানা যায়, এটি উন্নত প্রযুক্তির বেঞ্চমার্কিং সিস্টেম যা ফাইভ-জি সাপোর্ট করবে।  এটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বলে সব সার্ভিস এক টেস্ট ড্রাইভে পরিমাপ করা যাবে, সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে।  এই যন্ত্র ব্যবহার করলে দ্রুততার সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্কের ত্রুটি নিরূপণ ও ড্রাইভ টেস্ট প্রতিবেদন তৈরি করা যাবে।  এছাড়া কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) রেগুলেশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিটিআরসির সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোয়ালিটি অব সার্ভিস পরিমাপক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কমিশনের ২২৯তম বৈঠকে ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট প্রশাসনিক অফিস আদেশের মাধ্যমে দরপত্র দলিল প্রস্তুতকরণ কমিটি, প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়।  আরও জানা যায়, দরপত্র দলিল প্রস্তুতকরণ কমিটি গত ১৪ জানুয়ারি খসড়া টেন্ডার ডকুমেন্ট এবং ইনভাইটেশন ফর টেন্ডারসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছে।  প্রস্তাবিত দরপত্রের দলিল অনুযায়ী, ব্যাকপ্যাক বেজড যন্ত্রপাতির পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভেহিকেল মাউন্টেড চেসিস-বেজড যন্ত্রপাতি কেনা হবে।  এছাড়া এই যন্ত্রপাতি ফাইভ-জি প্রযুক্তি সাপোর্ট করবে এবং পুরো সিস্টেম ফাইভ-জির জন্য প্রস্তুত থাকবে।  ফলে প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ফাইভ-জি সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) পরিমাপ করা যাবে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিটিআরসিতে কিউওএস পরিমাপ করার জন্য মাত্র একসেট যন্ত্রপাতি রয়েছে, যার সীমাবদ্ধতাও অনেক।  এই যন্ত্রপাতির বয়স ৪ বছর পার হয়ে গেছে।  এই সময়ের মধ্যে দেশে মোবাইল নেটওয়ার্কের কাভারেজ ও গ্রাহক সংখ্যাও বেড়েছে।  নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বাড়লেও মোবাইল অপারেটররা সে অনুযায়ী নতুন তরঙ্গ না কেনার পরিপ্রেক্ষিতে সেবার নিম্ন মানের বিষয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে।  এজন্য আপডেটেড যন্ত্রপাতি কেনা প্রয়োজন বলে মনে করে বিটিআরসি। কমিশন চলমান ড্রাইভ টেস্ট কার্যক্রমে ৮ পোর্টের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে।  এরমধ্যে ৪টি পোর্ট ভয়েস সার্ভিস পরিমাপের জন্য এবং ৪টি পোর্ট ডাটা সার্ভিস (ইন্টারনেট) মাপার জন্য।  সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে পুরনো যন্ত্রের মাধ্যমে টুজি ও থ্রিজি ভয়েস সেবা একসঙ্গে পরিমাপ করা সম্ভব হয় না।  একইভাবে থ্রিজি ও ফোর-জি ডাটা স্পিড একসঙ্গে পরিমাপ করা যায় না।  অপরদিকে দেশে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজির ভয়েস এবং ডাটা ইত্যাদি সার্ভিস চালু রয়েছে। উচ্চ সক্ষমতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে সব সার্ভিস এক টেস্ট ড্রাইভে পরিমাপ করা যাবে।  ড্রাইভ টেস্টের সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে।