এ বছর প্রযুক্তির যত ব্যর্থতা

২০২১ সালটি ছিল আশা ও চ্যালেঞ্জের। তবে এ বছর বেশ কিছু প্রযুক্তি গেছে ভুল রাস্তায়। আবার প্রযুক্তিনির্ভরতার খেসারতও দিতে হয়েছে অনেককে। তথ্য ফাঁস, ইন্টারনেট আউটেজ ও র‌্যানসামওয়্যারের আক্রমণ ছিল আলোচনায়।

ফেসবুক-লিঙ্কডইনে তথ্য ফাঁস

এপ্রিলে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানান, অন্তত ৫০ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর, জন্ম তারিখ ও ই-মেইল ঠিকানা একটি ওয়েবসাইটে ফাঁস হয়েছে। কাজটি একজন মাত্র হ্যাকারের। ফেসবুক জানায়, ২০১৯ সালে এমন একটি ঘটনা ঘটলেও তখন সেটার সমাধান করা হয়েছিল। এবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি থেকে বোঝা যায় সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টটির নিরাপত্তা কতটা দুর্বল।

ফেসবুক

একই মাসে সমপরিমাণ ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস হয় লিঙ্কডইন থেকে। তবে সেগুলো গোপন তথ্য ছিল না। ছিল প্রোফাইলের পাবলিক তথ্য। সেগুলো বিক্রির জন্য একজন হ্যাকার ওয়েবসাইটে নিলামে তুলেছিল। অবশ্য লিঙ্কডইন জানায়, এখানে নিয়মের কোনও লঙ্ঘন হয়নি।

ভুল অপরাধী চিহ্নিত

মে মাসে রিয়েল টাইম ক্রাইম অ্যালার্ট অ্যাপ সিটিজেন ঘোষণা দেয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসের বনে অগ্নিসংযোগকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৩০ হাজার ডলার পুরস্কার দেবে। সূত্র হিসেবে একজন ব্যক্তির ছবি দেওয়া হয়। তিনি মূলত একজন পুলিশ। সব ঠিক থাকলেও একজন ভুল ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছিল সিটিজেন অ্যাপ।

র আক্রমণ

এ বছর র‌্যানসামওয়্যারের আক্রমণও হয়েছিল বেশ। পাসওয়ার্ড রিসেটের নাম করে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা হয় এতে। আমেরিকার অন্যতম বড় জ্বালানি পাইপলাইন প্রতিষ্ঠান কলোনিয়াল পাইপলাইনও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে হ্যাকারদের ৪৪ লাখ ডলার মুক্তিপণ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক আবার সচল করে তারা।

ইন্টারনেটে বড় ‍দুই আউটেজ

দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে পরপর দুবার ইন্টারনেটের আউটেজ হয়। এতে ইন্টারনেটের বড় একটা অংশ অচল হয়ে পড়ে। টেক প্রতিষ্ঠানে এরকম বড় রকমের আউটেজের খবর কেউ কখনও শোনেনি। জুনের ৮ তারিখে রেডিট, অ্যামাজন এবং এরকম আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আউটেজের কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখে। ১৭ জুন আকামাই টেকনোলজিসও পড়ে একই দুর্যোগে।

ইন্টারনেট আউটেজ

আবার ডিসেম্বরে অ্যামাজনে তিনবার আউটেজের ঘটনা ঘটে। যার প্রভাব পড়ে ডিজনি প্লাস, স্ল্যাক, নেটফ্লিক্স, হুলুসহ অনেক কিছুর ওপর।

ফেসবুকের আগাগোড়া খারাপ বছর

অক্টোবরের ৪ তারিখে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু তার আগের রাতেই ফ্রান্সেস হগেন ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দাবি করেন ফেসবুক কীভাবে ভুল তথ্য, বাজে কথা এবং সহিংসতা ছড়ায়।

তার ফাঁস করা তথ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রকাশ করতে শুরু করে। এরপর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টগ্রামে বড় রকমের আউটেজ হয়। স্থায়ী হয় প্রায় ঘণ্টাখানেক। হগেনের ইস্যুটি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও চলছে।

ভুলপথে টেসলা

‘ফুল সেলফ ড্রাইভিং’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানোয় বেশ পরিচিত টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। যদিও এর সম্পূর্ণ অটোমেশন এখনও হয়নি। বরং যখন তখন হঠাৎ করেই ড্রাইভিং-এর নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়।

ফিচারটি যখন খুব জনপ্রিয় পেতে থাকে, তখন অনেক ড্রাইভারই অভিযোগ করেছে, তারা বুঝতে পারে না তাদের গাড়ি কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে। টেসলার মডেল-৩ গাড়ি নিয়ে নিউইয়র্কের একটি রাস্তায় পরীক্ষা চালায় সিএনএন। এই সময় দেখা যায় ভুল দিক দিয়ে আসা একটি সাইকেলকে পাশ দিতে গিয়ে গাড়িটি একটি ইউপিএস ট্রাকের দিকে এগিয়ে যায় এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পায়।