এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা অনুভূত হবে বেশি

গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে। চৈত্রের দাপটের সঙ্গে এবার এপ্রিল মাসে যোগ হতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। এর সঙ্গে কালবৈশাখীও হতে পারে বেশ কয়েকটা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বছরের উষ্ণতম মাস হিসেবে বিবেচিত হয় মার্চ এবং এপ্রিল। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই তাপমাত্রা আগের কয়েকবছরের তুলনায় গত কয়েকবছর বেশিই অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে শহর এলাকায় তাপমাত্রার প্রভাব গ্রামের তুলনায় বেশি অনুভূত হয়।

আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে; যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এদিকে  দেশে ৫ থেকে ৭ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা বা  মাঝারি ধরনের এবং এক থেকে তিন দিন তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই মাসে দেশে দুই থেকে চারটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও মাঝারি (৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং এক থেকে দুটি তীব্র (৪০ থেকে ৪০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, মার্চ এবং এপ্রিল মাস বছরের উষ্ণতম মাস। এ সময় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। বেশ কয়েকটা কালবৈশাখী এবং তাপপ্রবাহ বইতে পারে এপ্রিল মাস জুড়েই। 

তিনি বলেন, বৃষ্টি বা ঝড় হলে কিছুক্ষণের জন্য তাপমাত্রা নেমে গেলেও আবার তা আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলে তিনি জানান। 

এদিকে ঈদের ছুটিতে ঢাকা ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় সড়কগুলোতে যানজট নেই। রিকশা চালকসহ রাস্তায় কাজ করা শ্রমিকরা স্বস্তিতে কাজ করছেন। তবে দুপুরের দিকে তাপমাত্রা অসহনীয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

শান্তিনগর মোড়ে গরমের মধ্যে রিকশায় হুট তুলে বসেছিলেন মমিনুল। গরমে হাসফাঁস অবস্থা হওয়ায় আজকে আর রিকশা চালাবেন না বলে জানালেন। 

একই অবস্থা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে না পারা শামসুর রহমানেরও। একই এলাকায় ভ্যানে ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। সামসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন ঈদের কারণে কেনাকাটা কম। কিন্তু তাও তো ভ্যানে ফল নিয়ে বসতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর্যন্ত অপেক্ষা করি সূর্য ডোবার। এরপর কিছুটা আরাম হয়। লোকজন এমনিতেই কম। 

এদিকে আজকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের অপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, নীলফামারী, যশোর, ঢাকা, ফরিদপুর এবং রাঙ্গামাটি জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত কয়েকবছর ধরে তাপমাত্রা আগের বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এর বাইরে গাছপালা কমে যাওয়া, অন্যদিকে শহরে বিল্ডিং এত বেশি এখন যে বৃষ্টি হয় তা মাটি পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারে না। ফলে মাটি সব সময় গরমই থাকছে। এদিকে গাছপালা আমাদের যে ছায়া দিতো সে গাছপালাও কমে যাচ্ছে এতে করেও তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিল মাসে এই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদরা।