‘মোবাইল অ্যাপ দিয়ে দুর্নীতি রোধ করতে চাই’

 

 

Jubayer 1দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পেলেও বুদ ছিলেন প্রোগ্রামিংয়ের নেশায়। এলগোরিদমের জালে নিজেকে জড়িয়ে শিক্ষাজীবন থেকে বেরিয়ে আসলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে নাম কুড়িয়েছেন মোবাইলের এন্ড্রয়েড অ্যাপস বানিয়ে। প্রোগ্রামিংয়ে আসক্ত সেই তরুণের নাম জুবায়ের হোসেন।

মোবাইল অ্যাপস নিয়ে তার শুরুটা খুব অল্প সময়ের। কলেজে পড়াশোনার সময় থেকেই প্রোগ্রামিং করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিযোগিতায় পাওয়া প্রথম পুরস্কার তার চিন্তাশক্তিকে পাল্টে দেয়। নেমে পড়েন মানুষের নানা সমস্যা সমাধানে অ্যাপ বানানোর চেষ্টায়। শুরুটা হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য বানানো ‘ডিএসই অ্যালার্ম’ নামক অ্যাপ দিয়ে। এটির কাজ ছিল কখন কোন শেয়ার কিনতে হবে বা বিক্রি করতে তা ক্রেতার সাধ্য অনুযায়ী তাকে সংকেত দিয়ে জানানো। ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন তাতে এবং প্রশংসাও।

তারপর তৈরি করেন ‘সিএনজি মিটার’ নামক অ্যাপ। এই অ্যাপ প্রতি কিলোমিটার গন্তব্যে ভাড়া কত হবে তা হিসাব করতো। এছাড়া এর বিশেষ দিক ছিল ভাড়া সংক্রান্ত ঝামেলা হলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ফোন করার সুবিধা।

বাংলাদেশ বিমানের জন্য সফটওয়্যার সরবরাহ করেছেন তিনি। এতদিন বিমানের কেবিন ক্রুদের শিডিউল হাতে লেখা হতো। কিন্তু তাঁর তৈরি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান ফ্লাইং সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এখন ডিজিটালি কাজ করছে। এরপর আলোচনায় আসলো জুবায়ের এবং তার বুয়েট পড়ুয়া বন্ধু আসিফ কামারের বানানো অ্যাপ ‘ভ্যাট চেকার’। এই অ্যাপটির কাজ ছিল ভ্যাট ফাঁকি রোধ করা। সে জন্য কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড কমিশনার নর্থের ফেসবুক পেইজে নক করেন এবং কিভাবে ভ্যাট সাধারণ মানুষ ভ্যাট  ফাঁকির বিষয়ে অভিযোগ করলে তাঁরা সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন সেটি জানাতে চান। বিষয়টি নজরে এনে কাস্টমসের মিরপুর বিভাগের ডেপুটি কমিশনার রকিবুল হাসান জুবায়েরকে ডেকে বিস্তারিত আলাপ করেন।

Downloads8২০১৫ সালের অক্টোবরের ১৫ তারিখে এই অ্যাপসটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যবহার করা শুরু করে। কোনো দোকানদার যদি ভুয়া ব্যবসা রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে ভ্যাট ফাঁকি দেন, তাহলে সে ব্যাপারে তখনই ক্রেতারা নিশ্চিত হতে পারবেন। এ জন্য তাঁকে শুধু বিলের রসিদে দেওয়া বিআইএন নম্বরটি তাঁর ভ্যাট চেকার অ্যাপসের মাধ্যমে চেক করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিশ্চিত হবেন তাঁর দেওয়া ভ্যাটের টাকা কোথায় জমা হচ্ছে। সরকারের কোষাগারে, না দোকানদারের পকেটে? এরপর মোবাইল ক্যামেরায় সেই রসিদের ছবি তুলে এনবিআরের ডাটাবেজে দিয়ে দিতে হবে। কাস্টমসের ঢাকা পশ্চিম বিভাগের সঙ্গে এই অ্যাপসের মাধ্যমে পরিচালিত কয়েকটি অভিযানেও অংশ নিয়েছেন জুবায়ের। তাঁর সঙ্গে এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান দেখা করেছেন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাদের এই সাফল্য দেখে সম্মাননা জানিয়েছিল। পরবর্তীতে সরকারিভাবে অ্যাপসটিকে স্বীকৃতিও দেয়া হয়।

শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই নয়াদিল্লিতে ভ্যাট চেকার পেয়েছিল ‘এমবিলিয়ন্থ অ্যাওয়ার্ড সাউথ এশিয়া ২০১৬’। ২০১০ সাল থেকে মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের জন্য এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় এবং এটিই হলো মোবাইল খাতের উদ্ভাবন নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সম্মাননা। এছাড়াও ভ্যাট চেকার পেয়েছে জাতীয় মোবাইল এপ্লিকেশন পুরস্কার।

এখানেই থেমে নেই তার কাজ, সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য তৈরি করেছেন ‘টপটিউব’। ইউটিউবে কোন গান পুরো বিশ্বে মানুষ সবচেয়ে বেশি শুনছে এই মুহূর্তে, এই অ্যাপে ঢুকলেই জানা যাবে। জানা গেছে এই অ্যাপের বেশিরভাগ ব্যবহারকারী দেশের বাইরের।

বাংলাদেশে মোবাইল এপ্লিকেশনের ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ নিয়ে জুবায়ের জানান, “এই খাত নিয়ে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। অনেক বড় একটা মার্কেট, দক্ষ লোকের যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতার। সরকার এক্ষেত্রে চাইলে আগিয়ে আসতে পারে। বেকারদের পাশাপাশি যারা বর্তমানে মার্কেটে কাজ করছে তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়েও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়”

তিনি আরও বলেন, সরকারি সেবা যদি অ্যাপভিত্তিক হয়ে যায়, তাহলে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি, কিভাবে মানুষের সমস্যা দূর করে ডিজিটাইলশনের মাধ্যমে সহজতর করা যায় সেটাই ভাবছি। আমার একার পক্ষে সম্ভব না বলেই ফ্রি সেমিনার, ওয়ার্কশপের মাধ্যমে আগ্রহীদের তুলে নিয়ে আসছি কাজ করার জন্য।     

/এফএএএন/