বিপাকে তরুণ ‘উদ্যোগ’

facebook-apps-know-about-youবিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ কোনটি ? এমন প্রশ্ন করলে যে কেউ এখন খোঁজ বন্ধ করে বলে দেবে ফেসবুকের কথা। রকেট গতিতে যোগাযোগের এ মাধ্যমটি ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আসক্তি।

বাংলাদেশে কমবেশি ২০০৬/০৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করলেও,সরকারি তথ্যমতে এক দশকের কম ব্যবধানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ। তরুণ-যুবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের কাছে ক্রমেই এ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এ মাধ্যমটির ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠলেও, নভেম্বরের ১৮ তারিখে থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে ফেসবুক, ভাইবারসহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম।

এদিকে ই-কমার্স ও ফেসবুকনির্ভর বাণিজ্যে (এফ-কমার্সে) যুক্ত দেশের অসংখ্য তরুণ-তরুণী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতের পেমেন্ট গেটওয়ে, কুরিয়ার সার্ভিস, কল সেন্টার, ব্যাংকিং ও পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে প্রায় এক লাখ মানুষ জড়িত। মাসিক ই-কমার্স লেনদেনের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সরকারি নির্দেশে এক সপ্তাহের বেশি সময় ফেসবুক বন্ধ থাকায় দুঃসময় পার করছে ফেসবুককেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া এজেন্সিগুলোও চুক্তি অনুযায়ী তাদের বড় কর্পোরেট গ্রাহকদের ফেসবুক পেজ ব্যবস্থাপনা ও বিজ্ঞাপন দিতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

ফেসবুকে ‘ধবল’ নামে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা চালান আসমা হক কান্তা। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ হবার পড় তার বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রায় নেই বললে ভুল হবে না। পরিস্থিতি বর্ণনা করতে যেয়ে তিনি বলেন,বর্তমানে অর্ডারের পরিমাণ দিন প্রতি নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। এ অবস্থা আর কিছু দিন চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ ছাড়া উপায় থাকবে না।  

ভাইপার নামে একটা চামড়াজাত প্রতিষ্ঠানের মূল প্রচার এবং বিক্রি হয় ফেসবুকে। এখন তাদের ব্যবসা পড়ে গেছে ৯০ ভাগ। ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ায় এমন বিপদে পড়েছেন আরও অনেকে। তাদের ব্যবসায়ে বড় ভাটা দেখা দিয়েছে। এমন সংকট ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়ী তরুণদের।

ভাইপার-এর মালিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদের রাজধানীতে দুটি আউটলেট থাকলেও মূল বিক্রি হয় ফেসবুকে। তিনি বলেন, ‘ প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১০০ ডলার ব্যয় করা হয় ফেসবুক প্রচারণার কাজে। গত এক সপ্তাহে যা প্রায় বন্ধ।’  

আমার গ্যাজেট ডটকম-এর উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যবসা অন্তত ৭০ ভাগ পড়ে গেছে। আমাদের মতো যারা ফেসবুক-কমার্স নির্ভরশীল তাদের ব্যবসা এর ফলে প্রায় ৫ ভাগে নেমে এসেছে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিএশন অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়,  প্রায় সাত হাজার পাঁচশ ফেসবুক পেজ রয়েছে যারা এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া ছয়শ ব্যবসায়ী ওয়েব কেন্দ্রিক ব্যবসা পরিচালনা করে। এদের কাজও চলে ফেসবুকে।

ফ্যাশন ডিজাইনার জান্নাতুল ফেরদৌস বিপা  চাকরির পাশাপাশি ই-কমার্সে হাত পাকাচ্ছেন। এক বছর বয়স হয়েছে নিজের ডিজাইনে করা পোশাক ব্যবসার। বড় কোন পুঁজি না থাকায়, ফেসবুকে খোলা একটি পেইজের মাধ্যমেও চলে বিকিকিনি। পেইজটিতে লাইক পড়েছে প্রায় দু লাখ। এক বছরের মাথায় এই পর্যায়ে আসা অবশ্য এমনি এমনি নয়। ডলার খরচ করে পেইজটির বিজ্ঞাপন চালিয়েছেন দিনের পর দিন। শাড়ি,পাঞ্জাবি থেকে থ্রি-পিসসহ মেয়েদের অত্যাধুনিক পোশাকের সমাহারও ছিল পেইজটিতে। ছবির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া দাম। তার নিচে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে অর্ডার দিলে ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে যেত পণ্য। এছাড়া ক্রেতারা চাইলে নির্দিষ্ট স্থানে ঠিকানায় লোক দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পছন্দের পোশাকটি। সামনাসামনি দেখার ব্যবস্থাও রয়েছে। ছোট একটি চাকরির পাশাপাশি এই ব্যবসা থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে পরিবারের ভালই চলতো। কিন্তু গত ১৪ দিন যাবত বন্ধ হয়ে আছে ভার্চুয়াল স্টোরটি। আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন বিক্রির সংখ্যা ছিল ১০,  ফেসবুক বন্ধের পড় সে সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ২ থেকে ৩।

ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স পরিচালনাকারীরা অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফেসবুক পুনরায় চালু হলেও এই সংকট কাটিয়ে নেওয়ার বিষয়েও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তরুণ ব্যবসায়ীরা।

/এআই /এফএএন/