X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক ঋণে বৈষম্য: বরিশাল শহরের চেয়ে রংপুরের গ্রাম উন্নত!

গোলাম মওলা
০৮ এপ্রিল ২০১৬, ০৭:৫৫আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০১৬, ২২:৪৫

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো রংপুরের গ্রাম-গঞ্জের মানুষদের জন্য যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে, তার চেয়ে অনেক কম পান বরিশাল শহরের মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি করা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা প্রতি ১০০ টাকা ঋণের মধ্যে বরিশাল বিভাগের শহরের মানুষ ঋণ পেয়েছেন মাত্র ৬৭ পয়সা। এর চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৭৩ পয়সা ব্যাংক ঋণ পেয়েছেন রংপুর বিভাগের গ্রাম-গঞ্জের মানুষ। অর্থনীতিবিদরা বিষয়টিকে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর চরম বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে দেখছেন।  

ব্যাংক ঋণে বৈষম্য: বরিশাল শহরের চেয়ে রংপুরের গ্রাম উন্নত!

অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধাভোগীরা ঘুরেফিরে বিভিন্ন নামে সুযোগ নিচ্ছেন। যারা প্রভাবশালী, যারা পরিচিত, যাদের রাজনৈতিক দাপট রয়েছে, তারাই ঋণ পাচ্ছেন। এর ফলে একদিকে গ্রামের মানুষ ঋণ পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে বসবাসকারী মানুষ কাঙ্ক্ষিত হারে  ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারপ্রেস নেটওয়ার্কের (আইপিএন) সিনিয়র গবেষক আনোয়ারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গ্রামে শাখার বিস্তার ঘটলেও ব্যাংকগুলো গ্রামীণ পর্যায়ে অর্থায়ন বাড়াচ্ছে না। দেশের অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে ব্যাংক ব্যবসায় শহর-গ্রামের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি যেসব অঞ্চলের মানুষ অবহেলিত, সেই সব অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ঋণ বিতরণসহ ব্যাংকিং সেবা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর কেন্দ্রিক নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাংকিং সেবা সীমাবদ্ধ না রেখে দেশজুড়ে ব্যাংকিং কার্যক্রমকে সুষমভাবে বিস্তৃত করতে হবে। তাতে গোটা অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে বসবাসকারী শহরের মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৬২ টাকা ৪৮ পয়সা। চট্টগ্রাম বিভাগের শহরগুলোয় বসবাসকারী মানুষ ঋণ নিয়েছেন প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ১৭ টাকা ২৫ পয়সা। খুলনা বিভাগের শহরগুলোয় বসবাসকারী মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৩ টাকা ১৬ পয়সা। রাজশাহী বিভাগের শহরগুলোয় বসবাসকারী মানুষ ঋণ নিয়েছেন প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৩ টাকা ১১ পয়সা। রংপুর বিভাগের শহরগুলোয় বসবাসকারী মানুষ ঋণ পেয়েছেন প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ১ টাকা ৬৬ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগের গ্রাম-গঞ্জে বসবাসকারী মানুষ ঋণ পেয়েছেন প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৩ টাকা ৯৬ পয়সা। চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রাম-গঞ্জে বসবাসকারী মানুষ ঋণ পেয়েছেন প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ১ টাকা ৮৫ পয়সা। খুলনা বিভাগের গ্রাম-গঞ্জে বসবাসকারী মানুষ ঋণ পেয়েছেন প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ১ টাকা ০৪ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের শহরগুলোর চেয়ে ময়মনসিংহ বিভাগের শহরের মানুষ সামান্য বেশি ঋণ নিতে পেরেছেন। প্রতি ১০০ টাকা ঋণের মধ্যে তারা নিতে পেরেছেন ৮২ পয়সা। আর সিলেট বিভাগের শহরগুলোর মানুষ ঋণ পেয়েছেন ৯৯ পয়সা। ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ১ টাকারও কম ঋণ নিতে পেরেছেন এই তিন বিভাগের শহরের মানুষ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভাগ অনুযায়ী শহরের তুলনায় গ্রামে-গঞ্জে ঋণ-বিতরণের অবস্থা আরও করুণ। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগের গ্রামের মানুষ ব্যাংক থেকে প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ঋণ নিতে পেরেছেন  মাত্র ৩৮ পয়সা। বরিশাল বিভাগে বসবাসকারী মানুষ ব্যাংক থেকে প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ঋণ নিতে পেরেছেন ৪৫ পয়সা। ময়মনসিংহ বিভাগের গ্রামে বসবাসকারী  মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পেয়েছেন  প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৬৩ পয়সা। রংপুর বিভাগে বসবাসকারী গ্রামের মানুষ ঋণ পেয়েছেন ৭৩ পয়সা। রাজশাহী বিভাগে বসবাসকারী গ্রামের মানুষ প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ঋণ পেয়েছেন ৮১ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। খুলনা বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৬৫কোটি টাকা। রাজশাহী বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। বরিশাল বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। সিলেট বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। রংপুর বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ বিভাগে বিতরণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণবিতরণের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গ্রাম ও শহরের মধ্যে থাকা বৈষম্য কমাতে হলে ব্যাংকগুলোকে মনে-প্রাণে গ্রামের মানুষকে ঋণ দিতে হবে। এছাড়া, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর কেন্দ্রিক ব্যাংকিং কার্যক্রম থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক সবসময় লাভের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে, গ্রামে বড় অংকের ঋণ দেওয়ার সুযোগ কম। ছোট-ছোট অংকের যেসব ঋণ দেওয়া হয়, সেগুলোর পরিমাণও অনেক কম। এ কারণে গ্রামে ঋণ দেওয়ার  ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরও ছাড় দিতে হবে।

/এমএনএইচ/

/আপ-এএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস