X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাল বিক্রির লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

শফিকুল ইসলাম
০৩ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:০১আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৫৭

রাজশাহীর একটি চালের দোকান চাল বিক্রির লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে খাদ্য অধিদফতর থেকে দেওয়া নির্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের চাল ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এ নির্দেশ চালের বাজারকে আরও অস্থির করতে তুলতে পারে। এই নির্দেশের মাধ্যমে মূলত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে চাল আমদানিতে আরও জটিলতা ও খরচ বাড়বে। তবে, সরকারের এই নির্দেশকে  ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন চালকল মালিকরা। তারা বলছেন, সরকারের এই নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে  চাল-গমের মজুদের স্থান ও প্রকৃত পরিমাণ  জানা যাবে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব কমোডেটিস অ্যাক্ট অনুযায়ী খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নিতে গেলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হবে। অন্যদিকে লাইসেন্স নিতে গেলে নানাভাবে হয়রানিরও শিকার হবেন। এর ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাদের খুশি করে লাইসেন্স আনতে গেলে উৎকোচ দিতে হবে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।  

জানতে চাইলে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী রুস্তম আলী ফকির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চালের পাইকারি ব্যবসায়ী। আমাদের কোনও গুদাম নেই। আড়ৎ থেকে চাল আনি আর বিক্রি করি। এতে মজুদের প্রশ্ন আসছে কেন জানি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন চাল আনি আবার তা খুচরা বাজারে তা সরবরাহ করি। এতেই আমাদের মুনাফা। চাল আটকে রেখে আমাদের কোনও লাভ নেই। আমরা ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। এতে সরকারি ঘরে লাইসেন্স ফি বাবদ টাকা দিয়েছি। প্রতিবছর সেই লাইসেন্স যখন নবায়ন করি, তখনও নবায়ন ফি বাবদ সরকারি ঘরে টাকা দেই। এর ওপর আবার খাদ্য অধিদফতরের লাইসেন্স লাগবে কেন, তা জানি না।’

রুস্তম আলী ফকির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি আমাদের প্রতি অবিচার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় এ বছর বাজারে চাল নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর দায় আমাদের ওপর দেওয়া হচ্ছে।’ 

শান্তিনগর বাজারের মুদি দোকানদার বজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করি। এছাড়া আমার দোকানে শুধু চাল নয়, অনেক আইটেম বিক্রি করি। এখন যদি শুধু চাল বিক্রির জন্য খাদ্য অধিদফতর থেকে পৃথক লাইসেন্স নিতে হয় বা ভবিষ্যতে যদি প্রতিটি আইটেমের জন্য লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ আসে, তাহলে তো সারা বছর আমাদের ব্যবসা ছেড়ে লাইসেন্সের অফিসে দৌড়াতে হবে। ব্যবসা করব কখন?’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ নির্দেশের কারণে  খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেবে।’ 

এদিকে বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসাসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান কাওসার আরম খান বাবলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আমদানিকারকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার পরও  খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছি। এতে অসুবিধা কোথায়?’ তিনি বলেন, ‘একদিকে বিষয়টি সরকারের মনিটরিংয়ে থাকবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের রাজস্ব বাড়বে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বদরুল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার তা মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে রিং বাজলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বাংলা ট্রিবিউনের রাজশাহী প্রতিনিধি দুলাল আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, চাল ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা মেনে চলবেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর চাল ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই খাদ্যমন্ত্রীর এ নির্দেশ মেনে চলবেন। তবে মিল মালিকদের ধান মজুদ রাখার দিকেও প্রশাসনের নজরদারির দাবি জানান তারা।

দুলাল আবদুল্লাহ জানান, খাদ্যমন্ত্রীর এসব নির্দেশ প্রসঙ্গে কাদিরগঞ্জ পাইকারী চাল ব্যবসায়ী আড়ত সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এরশাদের আমলে চাল ব্যবসায়ীদের জন্য লাইসেন্সের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তা বাতিল করে দেওয়া হয়। খাদ্যমন্ত্রী আবার নতুন করে লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তার বেঁধে দেওয়া সময় মেনেই লাইসেন্স নেব।’

বজলুর রহমান আরও বলেন, ‘আগামী মাস থেকে রিটার্ন দাখিল করব। এছাড়া আমরা ট্রেড লাইসেন্স, সিটি করপোরেশনের ক্লিনিং লাইসেন্স, লেবার ইনস্পেক্টর, ইনকাম ট্যাক্স ফাইল, চেম্বার অব কর্মাসের সদস্যপদ—সবকিছু করে রেখেছি। এখন থেকে খাদ্য অধিদফতর থেকেও লাইসেন্স গ্রহণ করব। বিষয়টা আমরা ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছি।’

বাংলা ট্রিবিউনের হিলি প্রতিনিধি হালিম আল রাজী জানিয়েছেন, দেশের বাজারে চালের দামের লাগাম ধরাসহ মজুদ বন্ধ করতে আমদানিকারক, মজুদদার, আড়ৎদার, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে চাল আমদানিতে আরও  জটিলতা বাড়বে। খরচও বাড়বে। তবে এমন আইনের ফলে চালের অবৈধ মজুদ বন্ধ হবে বলেও মনে করছেন অনেকে।

হিলি বাজারের চাল বিক্রেতা অনুপ কুমার বসাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই ফুড অফিস থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছি। প্রতিবছর এ লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। তবে বর্তমানে বাড়তি হিসেবে ১৫ দিন পরপর মজুদের হিসাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বাড়তি ঝামেলা। এরপরও সরকার যখন নিয়ম করেছে, আমাদের পালন করতেই হবে। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় খাদ্য অধিদফতরকেও সহযোগিতা করতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক ললিত কেশেরা বলেন, ‘সরকার চাল আমদানির ক্ষেত্রে ফুড লাইসেন্স করার কথা হয়েছে। এ সংক্রান্ত লাইসেন্স আমরা আগে থেকেই করে রেখেছি। বন্দরের আরও কয়েকজনের এ ধরনের লাইসেন্স করা রয়েছে। তবে অনেক আমদানিকারকের লাইসেন্স নেই।’

এর আগে, সোমবার (২ অক্টোবর) চালের আমদানিকারক, মজুদদার, আড়ৎদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের খাদ্য অধিদফতর থেকে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী। এছাড়া ১৫ দিন পরপর চাল ব্যবসায়ীদের গুদামে মজুদ রাখা চাল ও গমের হিসাব স্থানীয় খাদ্য দফতরকে জানানোরও নির্দেশ দেন তিনি।  

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিম স্মার্টের প্রতি ঝোঁক বেসিস ভোটারদের
টিম স্মার্টের প্রতি ঝোঁক বেসিস ভোটারদের
মির্জা আব্বাসের ভাগ্নে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে
মির্জা আব্বাসের ভাগ্নে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া চালাবে রাশিয়া
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া চালাবে রাশিয়া
প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলছে কাল
প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলছে কাল
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?