বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য চমৎকার স্থান। এখানে অল্প খরচে বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। সৌদি বিনিয়োগকারীরা একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করতে পারেন।’
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশে সফররত সৌদি আরবের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিজনেস মিটিং-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এই বিজনেস মিটিং-এর আয়োজক ছিল এফবিসিসিআই।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীরা এখন শতভাগ বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। কোনও ধরনের বাধা ছাড়াই যেকোনও সময় লাভসহ বিনিয়োগের পুরোঅর্থ ফিরিয়ে নিতে পারবেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে দ্বৈত শুল্কনীতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আইন পাস করা হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে উন্নত বিশ্ব থেকে ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদিত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সেই (ডিউটি ও কোটা ফ্রি ) সুবিধাও ভোগ করতে পারবে। সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুন্য হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে কিছুই ছিল না। তিনি দু’টি স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রাম করেছিলেন, একটি বাঙালি জাতির মুক্তি, অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা। অন্যটি হলো বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি, অর্থাৎ বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন,‘একসময় বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট ছিল ৯০ ভাগ বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। আজ নিজস্ব অর্থেই বৃহৎ বাজেট ঘোষণা করা হয়। নিজস্ব অর্থে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একসময় যারা বাংলাদেশকে বলতো তলাবিহীন ঝুড়ি এবং বিশ্বের দরিদ্র দেশের রোল মডেল, আজ তারাই বলছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ শুধু পাট,চা ও চামড়াসহ মাত্র ২৫টি পণ্য রফতানি করে আয় করতো ৩৪৮ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আজ সেই বাংলাদেশ সাড়ে সাতশ’ পণ্য বিশ্বের প্রায় সব দেশে রফতানি করে সার্ভিস সেক্টরসহ আয় করছে ৩৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ এখন তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রফতানি পণ্য সংখ্যা ও বাজার বৃদ্ধির জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালে বাংলাদেশের রফতানি দাঁড়াবে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে উভয় দেশের বাণিজ্য ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে এ বাণিজ্য অনেক বাড়ানো সম্ভব।’
এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, সৌদি আরবের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের দলনেতা সৌদি আরবের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি গ্রুপ লি.এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোশাবাব আব্দুল্লাহ আল খাহতানি, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম এবং এফবিসিসিআই-এর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহীম।
আরও পড়ুন:
শীতলপাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ