X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমাতে ব্যর্থ বেশিরভাগ বিতরণ প্রতিষ্ঠান

সঞ্চিতা সীতু
১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:২৭আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:০৫

বিদ্যুৎকেন্দ্র (ছবি: সংগৃহীত) আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও কমানো যায়নি সিস্টেম লস। ২০১৭-১৮ অর্থব্ছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) মাত্র দুটি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশই পূরণ করতে পারেনি সিস্টেম লস কমানোর লক্ষ্যমাত্রা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত পাঁচ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। তাই সরকারের বেঁধে দেওয়া সিস্টেম লস কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো।

সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সিস্টেম লস কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু সিস্টেম লস হয়েছে ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) সিস্টেম লস কমিয়ে ১১ দশমিক ১০ শতাংশে নিয়ে আসার কথা থাকলেও সিস্টেম লস হয়েছে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানের (ওজোপাডিকো) সিস্টেম লস কমিয়ে ৯ দশমিক ৪০ করার কথা থাকলেও হয়েছে ১০ দশমিক ৫৬ ভাগ। নর্দান পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (নেসকো) সিস্টেম লস ১১ দশমিক ৫০ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও হয়েছে ১৫ দশমিক ৬৫ ভাগ।

তবে ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসি ও ডেসকো তাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি কমিয়েছে সিস্টেম লস। ডিপিডিসির লক্ষ্য ছিল ৮ দশমিক ২৫। তারা কমিয়ে করেছে ৭ দশমিক ৭৬ ভাগ। অন্যদিকে ডেসকোর লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৫০। তারা কমিয়ে এনেছে ৪ দশমিক ৫৯ ভাগে।

গত কয়েক বছরের সিস্টেম লসের তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, এর মোট পরিমাণ প্রায় একই আছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের বিদ্যুৎ বিতরণে ক্ষতি ছিল ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরের চার অর্থবছর পর্যন্ত এ হার ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ২৬; ১২ দশমিক শূন্য ৩; ১১ দশমিক ৯৬ ও ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বর্তমানে এই সিস্টেম লসের পরিমাণ ১১ শতাংশ।

বিদ্যুৎ বিভাগের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে সিস্টেম লস এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হলেও ঢাকার দুই প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউই সেই জায়গায় যেতে পারেনি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বি ডি রহমতুল্লাহ মনে করেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ার কারণেই আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে দুইভাবে সিস্টেম লস হচ্ছে। একটি কারিগরি সিস্টেম লস, আরেকটি বিদ্যুৎ চুরি। কারিগরি সিস্টেম লস নির্ভর করে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার ওপর। একই কারণে বিদ্যুৎ চুরিও হচ্ছে। তাই বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন সমানতালে করা দরকার। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি হওয়া জরুরি।’

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বিআরইবি তাদের সমিতির অর্থায়নে ২০ হাজার ৫০০টি প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করেছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করেছে ঢাকার তিন অঞ্চলে। আজিমপুর, লালবাগ ও শ্যামলী এলাকায় ইতোমধ্যে ৮০ হাজার ৫৬৮টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ডেসকোর অধীন এলাকায় ১ লাখ ২ হাজার ৭৭৪টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১ লাখ মিটার স্থাপনের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে পিডিবি, ওজোপাডিকো ও নেসকো তাদের অধীন এলাকাগুলোতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ করছে। আগামী বছরের মধ্যে এগুলোর কাজ শেষ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

২০১০-১১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট। পরের বছর সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬৬ মেগওয়াট। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ৬ হাজার ৪৩৪ মেগাওয়াট।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ হাজার ৩৫৬ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট। এভাবে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭০১ মেগাওয়াটে। বর্তমানে ১১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ১৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তবে পিডিবি জানায়— চাহিদা না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৮ হাজার ১১০ মেগাওয়াট।

শিগগিরই সিস্টেম লসের পরিমাণ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া মন্তব্যে তার কথা— ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করে। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় এখন বিদ্যুতের উৎপাদন সেই সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। উৎপাদনের পাশাপাশি সরকার বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের কাজ করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে।’

/জেএইচ/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না