X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পিপিপির আওতায় যাচ্ছে ফারমার্স ব্যাংক!

গোলাম মওলা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৩৬আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:২১

পিপিপির আওতায় যাচ্ছে ফারমার্স ব্যাংক! অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিপর্যস্ত বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) দিকেই যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার ও ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যেই সরকার ব্যাংকটিতে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার মূলধন সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ মূলধন জোগাবে। তবে এর বিনিময়ে তারা ব্যাংকটির আনুপাতিক হারে মালিকানাও দাবি করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর এ শর্ত মেনে নিলে ফারমার্স ব্যাংক পিপিপির আওতায় চলে যাবে।

এতদিন অনিয়মে জর্জরিত সরকারি বেসিক, সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করলেও এই প্রথমবারের মতো দুর্নীতির কারণে দেউলিয়া হতে যাওয়া বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংককে তহবিল জোগান দিতে যাচ্ছে সরকার। এ কাজটি করা হচ্ছে সরকারি আর্থিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। এ চার ব্যাংক ও আইসিবি মিলে ফারমার্স ব্যাংকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শেয়ার কেনার বিষয়ে এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা দুই দফা বৈঠকও করেছেন। মঙ্গলবারও প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ বৈঠকে ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে ব্যাংকটির মালিকানা দাবি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এছাড়া ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদেও নিজেদের উপস্থিতির নিশ্চয়তা চেয়েছেন তারা। তবে ফারমার্স ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আমাদের প্রতিনিধি রাখার শর্তে আমরা সরকারি ৫ প্রতিষ্ঠান মূলধন সহায়তা দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টাকা নিলে ব্যাংকটি পিপিপির আওতায় চলে যাবে। টাকা দিলাম, আর সেটা যত্রতত্র ব্যবহৃত হলো, আমরা এটা চাচ্ছি না।’

সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা বলছেন, আইসিবির নেতৃত্বে জোট গঠন করে অর্থায়নের পরিবর্তে ব্যাংকগুলো মূলধন হিসেবে ফারমার্স ব্যাংককে টাকা দিতে চায়। পাশাপাশি ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদেও তাদের প্রতিনিধিকে বসতে চায়।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বর্তমানে দেউলিয়া পর্যায়ে চলে গেছে। আর্থিক সংকটের কারণে গ্রাহকরা তাদের আমানতও তুলতে পারছেন না মাসের পর মাস। ছোট বড় সব ধরনের গ্রাহক ব্যাংকটি থেকে নিজেদের টাকা উঠানোর জন্য আবেদন দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ব্যাংক প্রতিবারই তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সরকারের জমা রাখা জলবায়ু তহবিলের টাকাও ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে ব্যাংকটি।

এ প্রসঙ্গে ফারমার্স ব্যাংকের উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রাহকদের টাকার সমস্যা প্রায় কেটে যাওয়ার পর্যায়ে চলে এসেছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে টাকা পেলে আমানতকারীরা আর আস্থা হারাবেন না।’ অনেক গ্রাহক টাকা না পেয়ে ফেরত গেছেন বলেও স্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এই আমানত ফেরত পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে। শুধু ফারমার্স ব্যাংকই নয়, আরও কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে দেউলিয়া পর্যায়ে চলে গেছে। এ জন্য মূলত সুশাসন না থাকা এবং সরকারের অবহেলা দায়ী।’

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘কোনও ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে তা হবে পুরো ব্যাংকিং খাতের সমস্যা। কোনও ব্যাংক দেউলিয়া হলে এর প্রভাব অন্য ব্যাংকগুলোর ওপরও পড়ে। পুরো খাতের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে। এজন্য ফারমার্স ব্যাংককে মূলধন জোগান দিয়ে টেনে তুলতে হবে।’

রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালের ৩ জুন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগিতে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে বাড়তে থাকে খেলাপি ঋণ। তারল্য সংকটের পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতেও ব্যাংকটি দুরাবস্থায় পড়েছে। আগ্রাসী ঋণ বিতরণের ফলে দেখা দিয়েছে তহবিল সংকট।

এ অবস্থায় গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতী। এরপর ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ২৩৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটি এখন ৭৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা