X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার কারণে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় বাড়ে

শফিকুল ইসলাম
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২০:৫০আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২০:৫৬

 

চার কারণে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় বাড়ে চার কারণে বাংলাদেশের সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় বাড়ে বলে মনে করে বিশ্ব ব্যাংক। কারণগুলো হলো—দুর্নীতি; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারা;  দরপত্রে প্রতিযোগিতা না থাকা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি ব্যয়। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশে প্রকল্প প্রণয়নের সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ব্যয় ধরা হয়, পরবর্তী সময়ে সেই ব্যয় বাড়ানো হয়। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্নীতি। আর এভাবেই বাড়ে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয়। এ কারণে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংক্রান্ত এক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস এমন পর্যবেক্ষণ দেয়।

এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণে গড়ে ব্যয় হয় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পের মধ্যে সেতু, ফ্লাইওভার বা ওভারপাস থাকলে এই ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে।

ভারতের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণ খরচ যুক্ত করে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় গড়ে ৮-৯ কোটি রুপি। যা বাংলাদেশের মুদ্রায় সাড়ে ৯ থেকে সাড়ে ১০ কোটি টাকা।

আর চীনের (২০১০-১৫) ১২তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সে দেশে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় গড়ে ১৬-১৭ লাখ ডলার।  বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। তবে দুই লেনের মহাসড়ক চার লেন করতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয় ১০ কোটি টাকার কম।

বিশ্বব্যাংক তাদের এক গবেষণায় দেখিয়েছে, ইউরোপে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয় ২৮ কোটি টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ব্যয় ১০ কোটি টাকা। আর চীনে তা গড়ে ১৩ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশের তিনটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় ধরা হচ্ছে কিলোমিটারপ্রতি গড়ে ৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা মহাসড়ক চার লেন নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা।

এদিকে কক্সবাজারের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার বাঁকা রাস্তা সোজা করতে ১০৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে এ ব্যয় অনেকটাই বেশি। ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল হতে চক্রশালা পর্যন্ত বাঁক সরলীকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় হবে। সড়ক পরিবহন ও মহসড়ক বিভাগের আওতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল হতে চক্রশালা পর্যন্ত বাঁক সরলীকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পে মূল সড়ক হবে ৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার। চার লেনের এই সড়কের প্রস্থ হবে ১০ দশমিক ৩০ মিটার। পুরো প্রকল্পে চার লেন পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে একটি। যার দৈর্ঘ হবে ৩৭ দশমিক ৯২ মিটার। এছাড়া চার লেন আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ২০টি। যার দৈর্ঘ হবে ৬৯ মিটার। এর পরেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ব্যয় ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা হওয়ার কথা নয়।

জানা গেছে, এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১০৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। শেষ হবে ২০১৯ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পটি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় অবস্থিত।

এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল হতে চক্রশালা’ পর্যন্ত বাঁক সোজা করা এবং পটিয়া শহরের যানজট কমানো।

প্রকল্পের আওতায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা নিমাণের অতিরিক্ত ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য এক দশমিক ৮৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যয় আছে। অর্থ ব্যয় হবে অধিগ্রহণ করা জমিতে মাটি ভরাটসহ জমির অন্যান্য উন্নয়নে। প্রকল্পের আওতায় ৩৭ দশমিক ৯২ মিটার দৈর্ঘের একটি ব্রিজ ও ২০টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। নির্মাণ করতে হবে প্রকল্পের সাইড অফিস। এসব অবকাঠামো নির্মাণেও ব্যয় আছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় একটু বেড়েছে। তবে তা তুলনামূলক বেশি নয়।’  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক বজলুর রশিদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘বিভিন্ন কারণে মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় বাড়তে পারে। তবে অবশ্যই তা যৌক্তিক হতে হবে।’

জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে যেকোনও প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ জটিল সমস্যা। জমি অধিগ্রহণ ও এর মূল্য পরিশোধে দুর্নীতি হয়। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ কাজও এর ব্যতিক্রম নয়।’তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দুর্নীতি হয় জমি অধিগ্রহণে, মূল্য দেখায় বেশি, কৃষককে কম দেওয়া যায়। টাকা যায়  মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে। টেন্ডারে প্রতিযোগিতা না থাকা সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের জন্য মালামাল কেনার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়। এছাড়া এদেশে কোনও প্রকল্পই সময়মতো শেষ হয় না। ফলে সময় বাড়ে। সময় বাড়লেও ব্যয়ও বাড়ে।’ 

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!