X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে স্বর্ণের নিলাম বন্ধ

গোলাম মওলা
৩০ মার্চ ২০১৮, ১৩:৩৫আপডেট : ৩০ মার্চ ২০১৮, ১৯:১৩

স্বর্ণবাজার পর্ব ৪ দেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা ৩০ থেকে ৪০ টন। দেশে কোনও স্বর্ণের খনি নেই। তাই নিয়মানুযায়ী,এই পরিমাণ স্বর্ণ আমদানি করেই চাহিদা পূরণের কথা। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে দেশে বৈধপথে স্বর্ণ একেবারেই আমদানি হয় না। ফলে এই চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে অবৈধ পথে আনা স্বর্ণের সাহায্যে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে,চোরাচালানের মাধ্যমে আনা স্বর্ণ সহজলভ্য, তাই এই পণ্যটি আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। শুধু তাই নয়,বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণও কিনতে আগ্রহী নন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণের নিলাম ডাকা হলে ব্যবসায়ীরা ৪০ হাজার টাকার স্বর্ণের দাম হাঁকেন ৩ হাজার টাকারও কম। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক গত সাড়ে ৯ বছর ধরে স্বর্ণের নিলাম ডাকা বন্ধ রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখপাত্র ম.মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে আসা স্বর্ণতেই বেশি লাভ করতে পারে। হয়তো সে কারণেই তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণের দাম খুবই কম বলতেন। স্বর্ণের নিলাম ডাকা হলে ব্যবসায়ীরা ৪০ হাজার টাকার স্বর্ণের দাম বলতেন ৩ হাজার টাকার কম। এ কারণে গত সাড়ে ৯ বছর ধরে স্বর্ণের নিলাম হয় না। ২০০৮ সালের নিলামের সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিল, দেশে স্বর্ণের নাকি চাহিদা নেই।’

তিনি আরও বলেন,‘সারাবিশ্বে স্বর্ণ ব্যবসা পরিচ্ছন্ন হলেও বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। একমাত্র বাংলাদেশেই স্বর্ণে খাদ মেশানোর পর এর দাম আরও বেড়ে যায়।’  

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘স্বর্ণের বিষয়টি স্পর্শকাতর বিষয়। এটি এক ধরনের কারেন্সি। চোরাচালানের মাধ্যমে আসা স্বর্ণই ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করেন। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে খুব বেশি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’

স্বর্ণের দোকান

এনবিআরের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন,‘স্বর্ণ এমন এক সম্পদ যা আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়। ফলে এ সংক্রান্ত আইনের কঠোরতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর যে কোনও সীমাবদ্ধতার সুযোগ নেয় চোরাকারবারিরা।’

সম্প্রতি দেশে স্বর্ণ চোরাচালান কমে যাওয়ার বিপাকে পড়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ না নিয়ে অবৈধভাবে আসা চোরাই স্বর্ণই কিনতে চান ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের স্বর্ণ কেনার জন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি’ (বাজুস) গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে। তবে স্বর্ণ আমদানির প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন বাজুস’র সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগারওয়াল।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘স্বর্ণের চাহিদা বাড়লেও আমদানি জটিলতা কারণে ব্যবসায়ীরা সেই দিকে যেতে পারে না।’

নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জানুয়ারিতে একটি ব্যাংকে গিয়েছিলাম স্বর্ণ আমদানির জন্য। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ আমদানি রফতানি অফিসের জটিলতা কাটিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু  বাংলাদেশ ব্যাংক এমন কিছু কোয়ারি দিয়েছিল, যে কারণে শেষ পর্যন্ত স্বর্ণ আমদানিই করা সম্ভব হলো না।

তিনি বলেন,‘হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক চায় না কেউ স্বর্ণ আমদানি করুক। এ কারণে আমরা অবৈধভাবে আসা চোরাই স্বর্ণ কিনে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বর্ণের বাজার মূলত চোরাচালান নির্ভর। চোরাই পথে আসা স্বর্ণের একটা অংশ চলে যাচ্ছে জুয়েলারির দোকানগুলোয়। প্রতিবছর চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগই চোরাচালানের মাধ্যমে আসা স্বর্ণের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। যদিও দেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে ৩০-৪০ টন। এই চাহিদার পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে এর অধিকাংশই আসছে চোরাচালানির মাধ্যমে। এই চোরাচালানি নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে স্বর্ণপাচার কেন্দ্রিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজস রয়েছে।

স্বর্ণের দোকান

প্রসঙ্গত, যথাযথ কাগজ দেখাতে না পারায় গত বছরআপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শো-রুম থেকে ২১১ কেজি স্বর্ণ, ৩৬৮ গ্রাম হীরা আটক করে শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতর।

জানা গেছে, অবৈধ স্বর্ণ আটক করে কখনও শুল্ক বিভাগ,কখনও বা পুলিশ, আবার কখনও বা এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে যাচ্ছে। গত সাড়ে ৯ বছর ধরে নিলাম না হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বর্ণের স্তূপ জমে গেছে।

সর্বশেষ নিলাম হয় ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই, যেখানে ২১ কেজি ৮২২ গ্রাম সোনা বিক্রি করা হয়। ধরা পড়া স্বর্ণের বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক মানসম্মত হওয়ায় তা বাইরে বিক্রির প্রয়োজন হয়নি।

শুল্ক বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে দুই হাজার কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। আর স্বাধীনতার পর থেকে অবৈধ উপায়ে আসা স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কেজি বা ১২৫ মণেরও বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ মণ সোনার মালিকের কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া মামলায় মালিকানা ঝুলে আছে আরও প্রায় ৩০ মণের। তবে ১৫ কেজি স্বর্ণ আদালতের নির্দেশে শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে মালিক দাবিদারদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর কিছু বিক্রি করা হয়েছে নিলামের মাধ্যমে।  

আগামীকাল পড়ুন:

‘গোল্ড এক্সচেঞ্জ’ গঠনে হতে পারে সমাধান 

 

/এসটি/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪৫ হাজার, ৪১৩৮৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান হলেন আ.লীগ নেতা
ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪৫ হাজার, ৪১৩৮৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান হলেন আ.লীগ নেতা
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা