X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

পানি ঠেকিয়ে কয়লা তোলার প্রস্তাব দিঘীপাড়া কয়লাখনি থেকে

সঞ্চিতা সীতু
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৫২আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:৫৪

দিঘীপাড়া কয়লা খনিতে সম্ভাব্যতা জরিপ। (ছবি: সংগৃহীত)

দেশের জ্বালানি সমস্যা দূর করতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে দিঘীপাড়া কয়লাখনি। এই খনি বিস্তৃত ১২ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এবং এতে কয়লার সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ৭০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এতদিন পানির কারণে এই খনি থেকে কয়লা তোলা না গেলেও নতুন পদ্ধতিতে এই কয়লা তোলা সম্ভব হবে এমন মত দিয়েছে জরিপকারী কনসোর্টিয়ামের কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জরিপকারী প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে এ বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অবশ্য, প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কৃষিজমির ক্ষতি না করে তোলা সম্ভব হলেই কেবল কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার পুঁটিমারা ইউনিয়নের অন্তর্গত দিঘীপাড়া কয়লাখনির ছড়িয়ে থাকা কয়লা পানির কারণে তোলা সম্ভব হবে না এমন মত ছিল এতদিন। তবে জরিপকারী জার্মানি ও অস্ট্রেলীয় যৌথ কনসোর্টিয়াম দীর্ঘ জরিপের পর যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, মাল্টিস্লাইস লংওয়াল টপ কোল কেভিং উইথ কাট অফ ওয়াল পদ্ধতি অর্থাৎ মাটির নিচে দেয়াল দিয়ে পানি প্রতিরোধের মাধ্যমে এ কয়লা তোলা যাবে। এ পদ্ধতিতে বার্ষিক ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন হিসেবে ৩০ বছরে ৯০ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন দিঘীপাড়া কয়লাখনি ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

২০১৭ সালের ৩১ মে দিঘীপাড়া কয়লা খনিতে জরিপ করার বিষয়ে একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি (বিসিএমসিএল) একটি চুক্তি সই করে। জার্মানির দুই কোম্পানি মিবরাগ কনসালটিং ইন্টারন্যাশনাল জিএমবিএইচ ও ফুগরো জার্মানি ল্যান্ড জিএমবিএইচ এবং অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি আরপিএম গ্লোবাল নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এই কনসোর্টিয়াম গঠন করা হয়।

ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর ডেভেলপমেন্ট অব দিঘীপাড়া কোল ফিল্ড এ্যাট দিঘীপাড়া, দিনাজপুর, বাংলাদেশ” নামের প্রকল্পটির চু্ক্তি সইয়ের পর কনসোর্টিয়ামটি গত তিন বছর ধরে দীঘিপাড়া কয়লা খনিতে জরিপ কাজ করে। চুক্তি অনুযায়ী কনসোর্টিয়াম ভৌত কাজের অংশ হিসেবে ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় টপোগ্রাফিক সার্ভে, ৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩-ডি সিসমিক সার্ভে, ৬৭টি বোরহোল খনন, ৪টি প্রোডাকশন ওয়েল, ১০টি পিজোমেট্রিক বোরহোল খনন, ২০ টি অবজারভেটোরি বোরহোল খনন, ১২টি প্যাকার টেস্ট, ইআইএ, ইএমপি এবং আরএপি স্টাডির কাজ শেষ করে।

প্রকল্পটির পরিচালক জাফর সাদিক জানান, আমরা আমাদের জরিপ কাজ শেষ করেছি। আজ বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলায় আমাদের জরিপের বিষয়ে একটি খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। শিগগির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে আমরা দীঘিপাড়া কয়লা খনির সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ জানিয়েছি ৭০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এর আগে এই খনিতে পানির কারণে কয়লা তোলা যাবে না বলে শোনা গেলেও আমরা জরিপের মাধ্যমে দেখেছি এই খনি থেকে কয়লা তোলা সম্ভব। তবে পদ্ধতি কিছুটা জটিল। সেখানে মাল্টিস্লাইস লংওয়াল টপ কোল কেভিং উইথ কাট অফ ওয়াল পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যাবে। তিনি জানান, যে খনি থেকে কয়লা তোলা হবে সেখানে যেহেতু পানির একটা বিষয় আছে সেহেতু মাটির নিচে আমাদের একটি দেয়াল তৈরি করতে হবে। বেন্টোনাইট নামক একটি কেমিক্যাল এবং কাদামাটি দিয়ে একটি দেয়াল তৈরি করতে হবে। মাটির নিচে ৮০ থেকে ১০০ মিটার ভেতরে এই দেয়াল হবে পানি প্রতিরোধী। পানির প্রতিরোধ করার পর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মতো স্তরে স্তরে কেটে আনা হবে কয়লা।

দিঘীপাড়া কয়লাখনি উন্নয়নের সম্ভাব্যতা যাচাই এর খসড়া প্রস্তাবনা যাচাই বিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, মাটির নিচে প্রায় ৩৭০ মিটার নিচে রয়েছে এই কয়লা। ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রতিবেদন চূড়ান্ত হলে দরপত্র করা হবে অথবা ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নেবে জ্বালানি বিভাগ। তারা জানান, জার্মানিতে এই পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে এরইমধ্যে এই পদ্ধতি দেখতে জার্মানি ঘুরে এসেছে একটি প্রতিনিধিদলও। ফলে দিঘীপাড়ার জন্য এই পদ্ধতিই হবে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। দিঘীপাড়ায় প্রাপ্ত কয়লা অত্যন্ত উন্নতমানের। এ কয়লা বিটুমিনাস টু সাব-বিটুমিনাস প্রকৃতির বলে তারা জানান।

অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পরিবেশ ঠিক রেখে ও কৃষিজমির ব্যবহার না কমিয়ে কয়লা তোলা যদি লাভজনক হয় কেবল তখনই কয়লা উত্তোলন করবে সরকার। তিনি আরও বলেন, দেশে ভূমির অপর্যাপ্ততা রয়েছে। কয়লা উত্তোলন করা হলে বিশাল এলাকা কৃষি উৎপাদনে আর কাজে লাগানো যায় না। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিজমি সংরক্ষণ করে কয়লা উত্তোলন করার নির্দেশ দিয়েছেন। কৃষিজমি নষ্ট হবে এই বিবেচনায় সরকার উত্তরবঙ্গের কয়লাখনি উন্নয়ন করা থেকে বিরত রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনায় গৃহীত কার্যক্রম সমন্বিতভাবে দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট  সবাইকে নির্দেশ দেন।

 

 

 

/এসএনএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জরিমানার ৪৬৪ মিলিয়ন ডলার বন্ড জোগাড় করতে পারেননি ট্রাম্প
নিউইয়র্ক জালিয়াতি মামলাজরিমানার ৪৬৪ মিলিয়ন ডলার বন্ড জোগাড় করতে পারেননি ট্রাম্প
বাড়তি ভাড়া নিলে সেই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে
পরিবহন মালিক সমিতির হুঁশিয়ারিবাড়তি ভাড়া নিলে সেই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে
দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত
দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত
দেশে দেশে রমজানের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও রকমারি উৎসব
দেশে দেশে রমজানের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও রকমারি উৎসব
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই