X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

জলের ভরসায় বড় চুরি

সঞ্চিতা সীতু
০৪ মার্চ ২০২০, ০১:০৯আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২০, ১৫:৪৬

 

 

 

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি (ফাইল ছবি)

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে বছরের পর বছর চুরি আর কারসাজি টিকিয়ে রাখতে কয়লার ভেতরে থাকা ময়েশ্চার বা জলীয় অংশের হিসাবে গোঁজামিলকে বেছে নিয়েছিল খনি কর্তৃপক্ষ। একদিকে চীনা উত্তোলনকারীকে কয়লায় জলীয় অংশ বেশি দেখিয়ে বেশি কয়লা রাখা হয়েছে; অন্যদিকে, বড়পুকুরিয়া তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে সেই জলীয় অংশও কয়লার দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সচেতনভাবে করা এই প্রতারণা থেকে পাওয়া লাভের টাকা বছরের পর বছর ধরে ঢুকেছে দায়িত্বশীলদের পকেটে। তবে এই টাকার পরিমাণ কত তার সঠিক হিসাব নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আত্মসাৎ করা কয়লার বর্তমান বাজার মূল্য ৯২৭ কোটি টাকা।  বড়পুকুরিয়ার কয়লা চুরি নিয়ে ক্যাবের করা তদন্ত কমিশন মঙ্গলবার (৩ মার্চ) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রসঙ্গত: বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ খোলা বাজারে ১৬ হাজার ৯২৭ টাকা দরে প্রতি টন কয়লা বিক্রি করে।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার জোগান ফুরিয়ে গেলে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)  কর্তৃপক্ষই ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লার হদিস না মেলায় মামলা করে। বিসিএমসিএলের ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওই মামলাটি দায়ের করা হয়। পরে দুদক বিসিএমসিএলের সাবেক সাত জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়। বিসিএমসিএলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা সিস্টেম লস।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি

বড়পুকুরিয়ার কয়লা চু্রি নিয়ে ক্যাবের করা তদন্ত কমিশন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে এই চুরির হিসাব দেয়। কমিশনের পর্যালোচনায় বলা হয়, উৎপাদনের শুরু থেকে ১৯ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) চীনের কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে করা চুক্তিতে গ্রহণযোগ্য ৫ দশমিক ১ শতাংশ জলীয় অংশ বা ময়েশ্চার ধরে ১০১ দশমিক ৬৬ লাখ মেট্রিক টন কয়লার বিল পরিশোধ করে। এই পরিমাণ কয়লাকে চীন কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে প্রাপ্ত হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে উত্তোলন করা কয়লায় গড়ে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ ময়েশ্চার ছিল। ময়েশ্চারের  পরিমাণ বেশি হওয়ার মানে হচ্ছে বিসিএমসিএলের বুঝে পাওয়া কয়লার পরিমাণ ১০১ দশমিক ৬৬ লাখ মেট্রিক টন নয়। এরচেয়েও বেশি। কিন্তু ১০ দশমিক ৫ শতাংশ ময়েশ্চারে কী পরিমাণ কয়লা হতে পারে তার কোনও রেকর্ড রাখেনি কোম্পানিটি। কমিশনের হিসাবে, এই ময়েশ্চারের বিপরীতে কয়লার পরিমাণ ১০৭ দশমিক ৩১ লাখ মেট্রিক টন, যা ওই কোম্পানির রেকর্ড করা কয়লার চেয়ে বেশি। এদিকে ওই সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি কয়লা ব্যবহার ও বিক্রি করে  ১০০ দশমিক ২২ লাখ মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী ঘাটতি দেখানো হয়, (১০১.৬৬–১০০.২২)=১.৪৪ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু কমিশনের হিসাবে এই ঘাটতি (১০৭.৪৬–১০০.২২)=৭.০৯ লাখ মেট্রিক টন।

কমিশন জানায়, পেট্রোবাংলার সিস্টেম লস গড়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১ দশমিক ৬১ লাখ মেট্রিক টন ধরে নিলেও কয়লা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় (৭.০৯–১.৬১)=৫.৪৮ লাখ মেট্রিক টন।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, আমরা যদি ধরি, চীনা কোম্পানি ১০০ মেট্রিক টন কয়লা বিক্রি করতে আসার পর খনি কর্তৃপক্ষ কয়লায় ৫ শতাংশ জলীয় পদার্থ থাকার কথা বলে কোম্পানিকে ৯৫ মেট্রিক টন কয়লার দাম দেয়। কিন্তু রেকর্ড রাখে ১০০ মেট্রিক টন কয়লার। তাহলে এখানে তারা ৫ শতাংশ কয়লার দামের সুবিধা নিয়েছে। এরপর আবার পিডিবির কাছে সেই কয়লাতেই ১৫ শতাংশ ময়েশ্চার দেখিয়ে একই পরিমাণ কয়লা বিক্রি করেছে। এভাবে দুই জায়গা থেকেই কয়লার হিসাব গায়েব করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির গায়েব হওয়া কয়লা নিয়ে ক্যাবের তদন্ত কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রকাশ

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, প্রকৃতপক্ষে কয়লার ময়েশ্চারের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হচ্ছে ২.৩ শতাংশ। ফলে খনি কর্তৃপক্ষ অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় ময়েশ্চারসহ কয়লা কিনেছে চীনা কোম্পানির কাছ থেকে। হিসাব করে দেখা গেছে, চীনা কনসোর্টিয়ামকে ২ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার বিল বেশি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এটা বলা যায় পানি নিয়ে কয়লার দাম পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, কয়লায় ১৫ শতাংশ হারে ময়েশ্চার দিয়ে ভোক্তাদের প্রতারিত করার তথ্য পাওয়া গেছে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বড়পুকুরিয়ার কয়লা চুরি বন্ধ করতে বেশ কিছু সুপারিশের কথা বলেন। তিনি বলেন, কয়লার গ্রহণযোগ্য ময়েশ্চার নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা কয়লার ময়েশ্চার পরিমাপের ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় করতে হবে। অনলাইন মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে, ভোক্তাদের দেখার সুযোগ থাকতে হবে। বিসিএমসিএল চীনা কোম্পানির কাছ থেকে খনি বুঝে না নেওয়া পর্যন্ত খনি ভাতা, ভূ-গর্ভস্থ ভাতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি ভাতা বন্ধ রাখতে হবে।  তারা এখন শুধু বিপণনের কাজ করছে। তাই বিসিএমসিএলের লোকজন এসব ভাতা পাওয়ার ন্যায্য অধিকারী নন বলে তিনি অভিমত দেন।

 

 

এসএনএস/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!