X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় ঘুরে দাঁড়াতে চায় আবাসন খাত, সাহস জোগাচ্ছে কালো টাকা

গোলাম মওলা
০১ জুলাই ২০২০, ১৬:৫৮আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ১৮:০৫

নির্মানাধীন বহুতল ভবন মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের সব খাতেই বিপর্যয় নেমে এসেছে। তবে আবাসন খাত সেই বিপর্যয় থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এক্ষেত্রে তাদের সাহস জোগাচ্ছে কালো টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে মঙ্গলবার (৩০ জুন) বাজেট পাস হয়েছে।

আবাসন খাতের নেতারা বলছেন, বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় এবার প্রচুর পরিমাণে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হবে। এর ফলে কারোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত এই খাতটি আবারও চাঙা হবে।

এ প্রসঙ্গে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ বিনাশর্তে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়ার কারণে আশা করি, করোনার মধ্যেই আবাসন খাত চাঙা হবে। শুধু এই খাত নয়, পুরো অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ তিনি উল্লেখ করেন, বিনাশর্তে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় প্রচুর অর্থ আমাদের অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান তিনি।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘আবাসন খাত চাঙা হওয়ার সঙ্গে জড়িত রড, সিমেন্ট, ইট, বালুসহ ২১১টি নির্মাণ উপখাতের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।’

এর আগে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগটি দেওয়া হয়েছিল। তখন আবাসন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ আসায় এই খাত চাঙা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা কবে যাবে কেউ বলতে পারছে না। কিন্তু মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আবাসন খাতে এর সুফল মিলবে।’ তিনি বলেন, ‘করোনার মাঝেও আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আর এর সুফল পুরো অর্থনীতিতে আসবে।’ তিনি আরও  উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। প্রায় একযুগ পর সুযোগটি এসেছে।

প্রসঙ্গত, এত দিন শুধু ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এই সুযোগ ছিল। এখন নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে জমি কেনাতেও এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে। এমনকি অপ্রদর্শিত অর্থে আগের কেনা সম্পদের বিপরীতেও নির্ধারিত হারে কর দিয়ে যেকোনও পরিমাণ টাকা সাদা করা যাবে। এ ব্যাপারে কোনও প্রশ্ন করবে না আয়কর বিভাগ। শুধু আয়কর বিভাগ নয়, প্রশ্ন করবে না দুদকও।

এছাড়া বাজেটে করপোরেট কর হার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। এর একটা বাড়তি সুবিধা পাবে আবাসন খাত। এর বাইরে কাঁচামালের ওপর এক শতাংশ অগ্রিম কর কমানো হয়েছে। এর ফলে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য কমারও সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে আবাসন খাতের উৎপাদন খরচও কমে আসবে। পাশাপাশি করোনার কারণে মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতি কিছুটা চাঙা হবে। একইসঙ্গে খাতটির সঙ্গে জড়িত ৩৫ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর একটা অংশের বেকার হওয়ার আশঙ্কা কাটবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছিল, তাও দূর হবে।

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে প্রায় সব ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। নতুন ফ্ল্যাটের বুকিং নেই। ক্রেতারা বুকিং দেওয়া ফ্ল্যাটের কিস্তি দিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতির মাঝেও সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনও ঋণ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন এই খাতের নেতারা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেটে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন। এর ফলে ঢাকার বাইরে যেকোনও সিটি করপোরেশন এলাকায় জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা যাবে। আর রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ২০ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ধানমন্ডি, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের হাউজিং সোসাইটি (ডিওএইচএস), মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কাওরান বাজার, বিজয়নগর, নিকুঞ্জ, ওয়ারী ও সেগুনবাগিচা এবং চট্টগ্রামে খুলশী, আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদে জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারে কর দিতে হবে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা।

অন্যদিকে, ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা করতে চাইলে ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ধানমন্ডি, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের হাউজিং সোসাইটি (ডিওএইচএস), মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কাওরান বাজার, বিজয়নগর, নিকুঞ্জ, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও চট্টগ্রামের খুলশী, আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদে প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে। এসব এলাকার বাইরে যেকোনও সিটি করপোরেশনে প্রতি বর্গমিটারে ৭০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে।

/আইএ/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া