করোনাকালে গত কয়েক মাসে অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচা মালের দাম ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গৃহীত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত এক মাসে অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচামাল রড, সিমেন্ট, পাথর, বিটুমিন, কপার, অ্যালুমিনিয়ামের মূল্য ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত তিন মাস ধরে দেশের ইস্পাত ও সিমেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে অযৌক্তিকভাবে রড ও সিমেন্টের মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি শুধু নির্মাণ ও আবাসন শিল্পের ওপরই বিরূপ প্রভাব ফেলছে তা নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষ সংগঠন হিসেবে সবসময় দেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কাজ করে আসছে এবং প্রতিষ্ঠানটি কখনই কোনও ব্যবসা বা ব্যবসায়িক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়।
দেশের নির্মাণখাত এবং স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষার্থে এফবিসিসিআই কিছু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ জানিয়েছেন।
স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলো হলো—অনতিবিলম্বে বাইরের যেকোনো দেশ থেকে রড (এমএস রড) আমদানি করার অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও, আমদানি সংক্রান্ত ট্যারিফ এবং ডিউটি কাঠামো এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে প্রকল্প সাইটে পৌঁছনো অব্দি রডের টনপ্রতি মূল্য ৬০ হাজার টাকার নিচে থাকে। এছাড়া দরপত্র জমা দেওয়ার পর আইনগত কোন পরিবর্তনের কারণে যদি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়, তাহলে ঠিকাদারকে অবশ্যই সেই বর্ধিত ব্যয়ের সমমূল্য প্রদান করতে হবে। একইভাবে সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সকল চলমান, আসন্ন (চূড়ান্তের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্প) এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোতে মূল্যের তারতম্য বিষয়ক ধারা সংযুক্ত করতে হবে। এছাড়া ব্যালাস্টের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কেবলমাত্র এফওবির ওপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত এবং এজন্য একটি নির্দিষ্ট ট্যারিফও ধার্য করা যেতে পারে ।
দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশসমূহ হলো—সরকার কর্তৃক অর্থায়িত প্রকল্পগুলোতে বিদেশি দরদাতাদের অংশগ্রহণ জোরালোভাবে নিরুৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত বড় এবং জটিল প্রকল্পে বিদেশি দরপত্রদাতারা অংশগ্রহণ করতে পারবে, তবে সেক্ষেত্রেও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোনও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জয়েন্ট-ভেঞ্চার গঠন করতে হবে। সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সব দরপত্র যতটা সম্ভব ফিডিকনির্ভর হওয়া প্রয়োজন। নিয়োগকর্তার অদক্ষতা বা অদূরদর্শিতার কারণে ঘটা বিলম্বের জন্য ঠিকাদারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত—নির্বিশেষে সকল দরপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একইভাবে, কোনও ঠিকাদার যদি চুক্তিতে উল্লেখিত সময় এবং মান অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়, তবে সে ঠিকাদারের উপরও ক্ষতিপূরণ আরোপের বিধান থাকা উচিত। সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সকল দরপত্রে ১০% অগ্রিম অর্থ প্রদানের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এছাড়া দেশের নির্মাণশিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কনসালটেন্সি খাতে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ প্রদান করতে হবে।