X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর দর্শন এখনও প্রাসঙ্গিক’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ আগস্ট ২০২২, ১৮:৫১আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১৮:৫১

দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর দর্শন এখনও প্রাসঙ্গিক। তাঁর দেখানো পথেই বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নিহিত আছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

রবিবার (৭ আগস্ট) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতি ও বাণিজ্য ভাবনা’ বিষয়ক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার কৌশল। শুধু রাজনৈতিক মুক্তিই নয়, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যও ছিল বঙ্গবন্ধুর। তাই তাঁর ঘোষিত ছয় দফার মধ্যে তিনটিই ছিল অর্থনীতি বিষয়ক।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এনে দেওয়া স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক মুক্তি আনার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কোনও কাজ করেন না। তার প্রত্যেক সিদ্ধান্তের পেছনে দূরদর্শী পরিকল্পনা থাকে। চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।’ দেশ এসব সিদ্ধান্তের সুফল শিগগিরই পাবে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, দেশবিরোধীরা এখনও সক্রিয়। নানাভাবে দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এসব ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার জানান মন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানান, বঙ্গবন্ধুর সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার কারণে দেশের রফতানি খাতে বৈচিত্র্য এসেছে। সদ্য স্বাধীন দেশে আমদানি-রফতানিতে বার্টার প্রথা চালু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বেসরকারি খাতে এই পদ্ধতিতে ৪০ শতাংশ অপ্রচলিত পণ্য রফতানি করার শর্ত দিয়েছিলেন তিনি। ওই সিদ্ধান্তের কারণেই রফতানি খাতে চিংড়ি ও চা যুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে  সরকারি বার্টারেও বিদেশি দেশগুলোকে এসব অপ্রচলিত পণ্য কিনতে বাধ্য করেছিলেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিত্যক্ত শিল্প রাষ্ট্রীয়করণ না করলে, স্থিতিশীলতা আসতো না। রাষ্ট্রীয়করণ করলেও প্রশাসনিক দায়িত্ব ছিল ব্যক্তি খাতে। ১৯৭৫ সালে বিরাষ্ট্রীকরণের নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা বাস্তবায়নের আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়।’

এর আগে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, কৃষি উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, সংস্কৃতি, নারী জাগরণ, গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে ধারণ করে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়তে বাণিজ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারই অংশ হিসেবে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কারিগরি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলেন।’

সভাপতি বলেন, ‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সরকারের পাশাপাশি ব্যাক্তি খাতেরও ব্যাপক অবদান রয়েছে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন সংকটের কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের জন্য সবসময়ের মতো অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও সহযোগিতা দিলে— এই সংকট শিগগিরই কাটিয়ে ওঠা যাবে।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। যুদ্ধোত্তর বাস্তবতার নিরিখে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে আপসহীন অভিযাত্রা, রাষ্ট্র নির্ভরতা থেকে ব্যক্তি খাতের বিকাশসহ বিভিন্ন দিকে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরেন ড. আতিউর রহমান।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও স্বাধীনতার আগে বাঙালিদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। তিনি জানান, পাকিস্তান আমলে পাট, চা ও চামড়া রফতানি হতো, কিন্তু সবগুলোই ছিল অবাঙালিদের হাতে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বাংলাদেশের অগ্রগতি সহ্য হয়নি দেশবিরোধী চক্রান্তদের। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবারও সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’ মহাকাশে স্যাটেলাইট, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, অসংখ্য ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। চলমান সাময়িক ইউক্রেন সংকটে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রক্তের মধ্যেই ছিল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির চেতনা। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে দেশে অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাম্য এসেছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্প ও সেবাখাত নির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।’

এর আগে প্যানেল আলোচনায় এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী বৈষম্য কমাতে রাষ্ট্রীয়করণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর আমলে এলডিসিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণেই বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য আজকের পর্যায়ে এসেছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, ‘প্রথম পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনা দেশে ব্যক্তি খাতের বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বার্টার পদ্ধতির কারণেই অনেক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছিল।অর্থনৈতিক কূটনীতিতেও বিশাল ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গবন্ধু।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এম মাহফুজুর রহমান জানান, মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু্। দেশে ফেরার ৫৪ দিন পর নতুন নোট বাজারে ছেড়েছিলেন। দেশে অবৈধ অর্থ শনাক্ত ও বিনাশ করতে ১৯৭৫ সালে ১০০ টাকার নোট বাতিলের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই'র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, সালাউদ্দিন আলমগীর, হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালক, বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, মহাসচিব মাহফুজুল হকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

/জিএম/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে বাজার কমিটির সহযোগিতা চায় এফবিসিসিআই
অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে বাজার কমিটির সক্রিয়তা চায় এফবিসিসিআই
বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরবরাহ ব্যবস্থাকে অদৃশ্য হাতের প্রভাবমুক্ত চায় এফবিসিসিআই
সর্বশেষ খবর
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
বহুতল ভবনের সংজ্ঞাফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়