X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার হতে পারে ভারত

গোলাম মওলা
২২ আগস্ট ২০২২, ২৩:০০আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২২, ২৩:০০

ভারতে পণ্য রফতানিতে সুবাতাস বইছে। ইতোমধ্যে দেশটি থেকে রেকর্ড পরিমাণ এসেছে রফতানি আয়। শুধু তাই নয়, দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতিও কমে আসছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, বাংলাদেশি পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে ভারতে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি প্রায় ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের ঘরে পৌঁছেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫৫.৬২ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশটিতে রফতানি বেড়েছে ২০.৫৩ শতাংশ।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে ভারতের নাম। সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় স্থানে জার্মানি, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও পোল্যান্ড। পোল্যান্ড ও ভারতে রফতানির পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি। গত অর্থবছরে পোল্যান্ডে রফতানি হয়েছে ২১৪ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য।

এ প্রসঙ্গে বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। এখন ভারতে রফতানি বাণিজ্য আরও বাড়বে। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও মনে করছেন, ভারতে রফতানি বাড়বে। সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মনে করেন, চলতি অর্থবছরে ভারতে অন্তত তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হবে।

আমদানি-রফতানিকারকরা বলছেন, এতদিন ভারত থেকে আমদানি হতো—এমন অনেক পণ্যই এখন রফতানি তালিকায় যুক্ত হয়েছে। রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে—পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, অ্যাসিড, কাগজ, লোহা, টিস্যু, মেলামাইন, রাইস ব্র্যান্ড, মেহগনি ফলসহ শতাধিক ধরনের পণ্য।

এ প্রসঙ্গে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভারতে আমাদের দেশি পণ্যের কদর বেড়েছে।’ আরও বাড়ার সুযোগ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রেলপথে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হলেও রফতানির সুযোগ নেই। পণ্য খালাস করে খালি ট্রেন ফিরে যায় ভারতে। যদি রেলে এসব পণ্য রফতানি করা যায়, তবে সময় ও খরচ কমবে এবং নিরাপদে পণ্য পরিবহন সুবিধা পাওয়া যাবে।’

বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৫ টন। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯ টন। রফতানি বেড়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪৪ টন। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য বন্দর দিয়েও আগের চেয়ে বেশি পণ্য রফতানি হচ্ছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পাশের দেশ ভারতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। একক মাস হিসেবে এটিকে রেকর্ড রফতানি বলছেন অনেকে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের জুলাই মাসের চেয়ে ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ভারতে ১২ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ।

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমিএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ভারতে আমাদের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। অর্ডার বাড়ছে। আমরাও প্রস্তুত।’ তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেশ ভালোভাবেই ভারতের বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা যদি ভারতের বাজার ভালোভাবে ধরতে পারি, তাহলে আর আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কেননা, ভারত আমাদের পাশের দেশ, পরিবহন খরচ খুবই কম পড়বে। আমাদের মুনাফা বেশি হবে।

ইপিবি'র  দেশভিত্তিক হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, জুলাই মাসে ভারতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৭ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। বাকিটা পাট ও পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক দ্রব্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। গত অর্থবছরে ভারতে ১৯৯ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার  ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এরমধ্যে পোশাক রফতানি হয়েছে ৭১ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ১০ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার ডলারের। এ ছাড়া কটন ও কটন প্রোডাক্টস থেকে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং প্লাস্টিক দ্রব্য থেকে ৩ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি হয় ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্য বাণিজ্য বেড়েছে ২৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারত পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯৮৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ওই বছর ১২৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে ভারতে। দেশটি থেকে আমদানি হয়েছে ৮৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দুটি দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৮৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। ভারতে ১০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের পণ্য রফতানির বিপরীতে আমদানি হয় ৫৭৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য। ওই বছর বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৬৯ কোটি ৭১ লাখ ডলার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম বাণিজ্য চুক্তি সই হয়েছিল ১৯৭২ সালে এবং এটি ২০১৫ সালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনকে পেছনে ফেলে ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রফতানির গন্তব্য হয়েছে বাংলাদেশ।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
বাংলাদেশের আম-কাঁঠাল-আলু নিতে চায় চীন
সর্বশেষ খবর
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!