X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
২ আষাঢ় ১৪৩২

কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব?

সঞ্চিতা সীতু
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:৫৯আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:৫৯

২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ। সাবেক সরকার কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার এই পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ব্যাপকভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল এবং উচ্চাভিলাষী। অর্থের সংস্থান এবং কারিগরি সক্ষমতা অর্জন ছাড়া এটি সম্ভব নয়।’

পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানের ২০২৩ সালের চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। এই কাজ করতে গিয়ে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের পাশাপাশি হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়া দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

যদিও অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে সীমিত রয়েছে। ছোট আকারের পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলেও বড় আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখনও এই জ্বালানির ব্যবহার শুরু হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ রয়েছে। বাংলাদেশ এমন এক সময়ে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে, যখন বিশ্বের বড় দেশগুলো কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নিজেদের সরিয়ে আনছে।

পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ১৬ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো স্থায়ীভাবে অকৃষি জমিতে স্থাপন করা হবে। এছাড়া আরও ১২ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যেগুলো সবই নির্মাণ করা হবে বাসা-বাড়ি কিংবা শিল্প-কারখানার ছাদে।

এছাড়া ৫৫ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এই বিদ্যুতের মধ্যে ৫০ হাজার মেগাওয়াট হবে সাগরে, অর্থাৎ উপকূল থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে। আর বাকি ৫ মেগাওয়াট হবে উপকূলে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে পরমাণু থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পরমাণুতে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ চলছে। বলা হচ্ছে, এমন আরও ৬টি ইউনিট নির্মাণ করা হবে।

দেশের কয়লাচালিত কেন্দ্রগুলোকে অ্যামোনিয়া কোফায়ারিং অর্থাৎ কয়লার সঙ্গে অ্যামোনিয়া মিশিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই পরিকল্পনায় দেশের ৫০ ভাগ কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ২০৩০ সালের মধ্যে অ্যামোনিয়া কোফায়ারিং করা হবে। বাকিটা আসবে ২০৫০ সালের মধ্যে।

গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোর ৭০ ভাগই ২০৩৫ সালের মধ্যে হাইড্রোজেন দিয়ে চালানো হবে। আর বাকিটা আসবে ২০৫০ সালের মধ্যে। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২০৪১ সালের মধ্যে একভাগে নামিয়ে আনা হবে। আর ২০৫০ সালে কোনও তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকবে না। ওই সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানির কোনও ক্যাপটিভ পাওয়ারপ্ল্যান্টও থাকবে না। তবে এই পরিকল্পনায় ১৫ ভাগ বিদ্যুৎ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমদানির কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া কার্বন উৎপাদনের আরও একটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে পরিবহনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। এটির ব্যবহার কমাতে সরকার ইলেকক্ট্রিক ভেহিক্যাল (ইভি) প্রচলন করার উদ্যোগ নিচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি বাস এবং ট্রাকও ইভিতে রূপান্তর করা হবে বলে পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিকল্পনাটি কিছুটা উচ্চাভিলাষী। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একেবারে অসম্ভব নয়।’ তিনি মনে করেন, এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুটি জিনিস প্রয়োজন। এক, অর্থ ও দুই, কারিগরি সক্ষমতা। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন—যা সংস্থান করাকে চ্যালেঞ্জিং বলছেন তিনি।

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, ‘সারা বিশ্বই এখন গ্রিন এনার্জির দিকে ঝুঁকছে। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। বিশ্বকে বাঁচাতে হলে আমাদের দূষণ কমাতে হবে। এজন্য এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে অর্থের সংস্থান এবং কারিগরি সক্ষমতা অর্জন ছাড়া এটি সম্ভব নয়।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
যে কারণে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগে আগ্রহ কম
সৌরবিদ্যুতের অতিরিক্ত সরবরাহ, সমাধান খুঁজছে অস্ট্রেলিয়া
বিদ্যুতের ঘাটতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে
সর্বশেষ খবর
ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের বিস্তারিত আলোচনা করেছে বিএনপি
ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের বিস্তারিত আলোচনা করেছে বিএনপি
ডেমরায় ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
ডেমরায় ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলবো, পরিবেশ তৈরি হলে তারপর নির্বাচন দিয়েন
ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলবো, পরিবেশ তৈরি হলে তারপর নির্বাচন দিয়েন
একদিনে সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১৬৩৬ জন
একদিনে সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১৬৩৬ জন
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের