X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতু: পরাজিত হলো ষড়যন্ত্র!

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৪৯আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:০৮

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ১৯৯৮-৯৯ সালে পদ্মা সেতুর প্রিফিজিবিলিটি সম্পন্ন করে। ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে পদ্মা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করা হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুর জন্য ডিজাইন কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে। কনসালট্যান্ট সেপ্টেম্বর ২০১০-এ প্রাথমিক ডিজাইন সম্পন্ন করে এবং সেতু বিভাগ প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহবান করে। ২০১১ সালে সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করে। এ সময় শুরু হয় ষড়যন্ত্রের খেলা। বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি জাইকা, এডিবিসহ দাতাসংস্থাগুলোও সরে দাঁড়ায়। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। সংশ্লিষ্ট সচিবসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ মন্ত্রীসহ কারোর বিরুদ্ধেই কোনও অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। পরে কানাডার এক আদালতে মামলা করা হয়। বিশ্বব্যাংক সেখানেও কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের ইমেজকে কলঙ্কিত করা হয়। বিএনপিসহ দেশের সুশীল সমাজ সরকারের সমালোচনায় মেতে ওঠে। ২০১২ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির জন্য বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ায়। বিএনপির নেতারাসহ অনেক বিশিষ্ট (!) ব্যক্তিবর্গ সরকারের সমালোচনা করে। মনে হয় সরকারকে অপরাধী প্রমাণ করতে পারলেই তাদের লাভ। আসল কথা হলো, ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫ বছরে পদ্মা সেতুর কাজ এক ইঞ্চিও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। সে সময় দুর্নীতির অভিযোগে যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতের ৬টি প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক অর্থ প্রত্যাহার করে নেয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই বিশ্বব্যাংক আবার বাংলাদেশে অর্থায়ন শুরু করে।
২.
নানা অভিযোগ ষড়যন্ত্র চাপ উপেক্ষা করে ২০১২-এর ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু হবে। জুলাই মাসেও প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই হবে পদ্মা সেতু। তিনি এও বলেন, কোনও দুর্নীতি করা হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেকথা কেউ কানে তুলেনি। বারবার দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করার পরও বিদেশি কিছু এজেন্ট ও বিএনপি মানুষকে ভুল বোঝাতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের সামনে মাথা নত করবে না বাংলাদেশ।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন বাংলাদেশি বিশ্বব্যাংকে ঋণ সহায়তা প্রদানে বাধা দেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পদ্মা সেতুতে টাকা দিতে বিশ্বব্যাংক সব সময় রাজি ছিল। কিন্তু ইউনূসের কারণে সেটি হয়নি। বিশ্বব্যাংক যেন টাকা না দেয়, সে জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে সংস্থাটিকে চাপ দিয়েছিলেন। বহির্বিশ্বে সরকারের বিরুদ্ধে তিনি অনবরত অভিযোগ করে যাওয়ায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। অবাক লাগে, একজন নোবেলজয়ী কী করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, নিজস্ব অর্থায়নেই হবে পদ্মা সেতু। পরের বাজেটেই সেতুর জন্য অর্থ বরাদ্দ করার কথা বলেন তিনি। ২০১৫-এর ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। যখন সরকার নিজম্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করে দিল, তখন বিশ্বব্যাংক বলে, এত বড় উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ প্রত্যাহার উচিত কাজ হয়নি। সেতুটি হচ্ছে বাংলাদেশের স্টিল লাইফ লাইন।

৩.
আজ কয়েকবছর পর সত্য উন্মোচিত হলো। সব ষড়যন্ত্র মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোনও প্রমাণ মেলেনি। তাই এ মামলায় তিন বিবাদীকে অব্যাহতি দিয়েছেন কানাডার একটি আদালত। কানাডা ভিত্তিক পত্রিকা দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইলের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। অব্যাহতি পাওয়া তিন ব্যক্তি হলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভূঁইয়া, কানাডার প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস ও প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ। অভিযোগ প্রমাণ করতে ফোনে ধারণ করা যেসব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে আবেদন করা হয়, তা নিছক গুজব আর গুঞ্জন বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন আদালত।
অথচ দেশবাসীকে শুনতে হলো মিথ্যা অপবাদ। আওয়ামী লীগ সরকারকে সমালোচনার সহ্য করতে হয়। পরিতাপের বিষয়, এই দেশের আদালতে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ না হওয়াটা অনেকে বিশ্বাসই করেনি। তখন সমালোচনা করে বলেছে, সরকার দুর্নীতি আড়াল করছে, দোষীদের ছেড়ে দিল।

৪.
এই দেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লোকের অভাব হয় না। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে ষড়য্ন্ত্র চললেও অনেকে খুশি হন, যা আমাদের আশাহত করে। বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। খালেদা জিয়ার কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির উচিত দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকা। নইলে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। বিদেশি এজেন্টদের মধ্যে নিজের সুবিধা ছাড়া দেশপ্রেম বলে কিছু নেই। যাদের দেশপ্রেম নেই, মানুষের প্রতি ভালোবাসা নেই তাদের দ্বারা দেশ ও জাতির কোনও কল্যাণ হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত প্রবাদই মনে পড়ছে, দুর্জন বিদ্ব্যান হলেও পরিত্যাজ্য।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দেখা গেছে, স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এই দেশের পাকিস্তানি দোসররা, এই রাজাকার আল বদর, আল শামসরা শুধু স্বাধীনতার বিরোধিতাই করেনি, নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে। তাদের যেমন বিচার হচ্ছে, তেমনই পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, সরকার ও দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যেন কেউ ভবিষ্যতে এমন অপকর্ম করার সাহস না পায়।

৫.
আমাদের নেত্রীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে, তিনি আমাদের ভরসার বাতিঘর। আজ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেই এই ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তার ফলে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ন্যায় ও সত্যের পথে ছিলেন বলেই জাতি কলঙ্ক থেকে মুক্তি পায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং ঐকান্তিক চেষ্টায় শত প্রতিকূলতা থাকার পরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ।
ইতোমধ্যেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। শুধু যোগাযোগই নয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু। ধারণা করা হচ্ছে, পদ্মা সেতু দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াবে অন্তত ১ দশমিক ২ শতাংশ। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি কোম্পানি, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীসহ কয়েক হাজার শ্রমিক এখানে কাজ করছে। আশা করি, সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালেই যান চলাচলের জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে।
লেখক: পরিচালক, সিআরআই।

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
তাইওয়ানে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের
তাইওয়ানে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের
নারীবান্ধব টয়লেট সুবিধা পান না ৯৩ শতাংশ নারী
জরিপের তথ্যনারীবান্ধব টয়লেট সুবিধা পান না ৯৩ শতাংশ নারী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ